Thursday, February 13, 2025
spot_img
Homeস্বাস্থ্যকাহনরোাগব্যাধিস্ট্রোক : প্রতিরোধ ও প্রতিকার

স্ট্রোক : প্রতিরোধ ও প্রতিকার

ডা. এম ইয়াছিন আলী

স্ট্রোক বর্তমানে সারাবিশ্বে একটি আতঙ্কের নাম। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি তিন সেকেন্ডে একজন মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। আর এদের মধ্যে বেশীরভাগই মারা যায়। আবার নন কমিউনিকেশন ডিজিজ হিসাবে স্ট্রোককে এখন তৃতীয় মৃত্যর কারণ বলা হয়। তাই, সচেতনতা তৈরি করা এখন সবার দায়িত্ব।

স্ট্রোক দুই ধরনের হয়। যথা :

১. ইসকেমিক স্ট্রোক : মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ রক্তনালীগুলোর মধ্যকার রক্ত সঞ্চালন কমে গেলে- মেডিকেলের ভাষায় যাকে থ্রম্বো এম্বোলিজম বলা হয়- এর কারণে হতে পারে।

২. হেমোরেজিক স্ট্রোক: ব্রেইনের অভ্যন্তরীন রক্তনালী ছিঁড়ে গিয়ে অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ হয়ে, আক্রান্ত স্থানের টিস্যুগুলোকে ক্ষতিগ্রস্থ করে, এতে রোগীর বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা যায়।
যেমন : শরীরের একপাশ ঝিম ঝিম বা অবশ মনে হওয়া অথবা শক্তি কমে যাওয়া, মুখ বেঁকে যাওয়া অথবা আক্রান্ত পাশের হাত -পা নাড়াতে না পারা ইত্যাদি।

তবে মজার ব্যাপার হলো, ইসকেমিক স্ট্রোক বা হেমোরেজিক স্ট্রোক- উভয়েরই উপসর্গ একই। তাই রোগ নির্ণয়ের জন্য ব্রেইনের সিটি স্ক্যান বা এম আর আই খুবই জরুরি। কারণ, দুই ধরনের স্ট্রোকের চিকিৎসা সম্পূর্ণ ভিন্ন।

আমরা জানি, কোনো রোগের ক্ষেত্রে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। কীভাবে আমরা স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে পারি ?

১. ধূমপান বন্ধ করা
২. ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা
৩. চর্বি জাতীয় খাবার না খাওয়া অর্থাৎ যাদের শরীরে রক্তে চর্বির পরিমাণ বেশি, তাদের সেটি কমানোর ব্যবস্থা নেওয়া
৪. নিয়মিত ব্যায়াম করা
৫. স্ট্রেস বা দুঃচিন্তা না করা ইত্যাদি।

স্ট্রোক হয়ে গেলে করণীয় কী?

অনেকেরই ধারণা এই ধরনের প্যারালাইসিসের কোনো চিকিৎসা নেই। এটা একেবারেই ভুল ধারণা। এখন বিশ্বে খুবই উন্নতমানের চিকিৎসা আবিষ্কার হয়েছে। একটি রোগী স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার চার ঘণ্টার মধ্যে, তার রোগ নির্ণয় করা গলে, ইসকেমিক স্ট্রোকের কারণে প্যারালাইসিস হয়েছে তা নিশ্চিত হলে, থ্রোম্বো এম্বোলিক এজেন্ট ইনজেকশন আকারে দিলে রোগী খুবই দ্রুত সুুস্থ হয়ে যেতে পারে। তবে বেশীরভাগ মানুষই সচেতনার অভাবে দেরিতে চিকিৎসকের কাছে যায় এবং সুযোগটি থেকে বঞ্চিত হয়।

এখন বলতে পারেন, যে রোগীটি স্ট্রোক পরবর্তী প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হলেন, তাকে আবার আগের জীবনে ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে কি?

হ্যাঁ, সুযোগ রয়েছে। তবে যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো- স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে এবং নির্ণয় করতে হবে, কী ধরনের স্ট্রোকে তিনি আক্রান্ত হয়েছেন এবং নির্ণয় পরবর্তী চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

এই ক্ষেত্রে চিকিৎসা দুই ধরনের-

১. ইসকেমিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে মেডিসিন বা সার্জারি- যা আক্রান্ত ব্যক্তির ব্রেইনের রক্ত চলাচল বাড়াতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, হোমোরেজিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে রক্ত সরানোর জন্য কিছু কিছু রোগীর অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে।

২. পুনর্বাসন চিকিৎসা – এটি একটি সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতি। এখানে রোগীর ফিজিক্যাল রিহ্যাবিলিটেশন প্রয়োজন, প্রয়োজন অকুপেশনাল রিহ্যাবিলিটেশন, আবার কিছু রোগীর ক্ষেত্রে কথা বলতে অসুবিধা দেখা দিলে, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাইেয়েজ পুনর্বাসন প্রয়োজন।

তাই চিকিৎসাটি হওয়া দরকার একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিম অ্যাপ্রোচ। এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি যেন তার সবগুলো অসুবিধা থেকে মুক্তি পেতে পারে। এই সমন্বিত চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠা সম্ভব।

লেখক
ডা. এম. ইয়াছিন আলী
বাত, ব্যাথা, প্যারালাইসিস রোগে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ
কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান – ফিজিওথেরাপি বিভাগ
প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল লি.

চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালটেন্ট,
ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল,ধানমন্ডি, ঢাকা।
০১৭৮৭ ১০৬৭০২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments