রফিক-উল-আলম
সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য একদিকে যেমন মেয়েদের ডিম্বাণুর প্রয়োজন, একইভাবে পুরুষের শুক্রাণুর (Sperm) দরকার। কারণ, সুস্থ-সবল শুক্রাণুর সঙ্গে ডিমের মিলনের ওপরই একটা সফল গর্ভধারণ নির্ভর করে।
ল্যাবে পরীক্ষা করে কোনো পুরুষের বীর্য বা সিমেনে সন্তান জন্মদানের জন্য অত্যাবশ্যকীয় স্পার্ম (শুক্রাণু) একটিও পাওয়া না গেলে সে অবস্থাটাকে আজুস্পার্মিয়া (Azoospermia), জিরো স্পার্ম বা নীল স্পার্ম কাউন্ট বলে।
ইদানীং নারীর পাশাপাশি পুরুষ বন্ধ্যত্বের একটা অন্যতম কারণই হয়ে দাঁড়িয়েছে এই আজুস্পার্মিয়া। জিরো স্পার্ম বা নীল স্পার্ম শোনামাত্রই সন্তানপ্রত্যাশী দম্পতিরা এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা না থাকায় একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়েন। নিজের সমস্যা সম্পর্কে কিছু না জেনেই ছোটাছুটি শুরু করেন। তবে এটি কোনোভাবেই সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ নয়।
বীর্য পরীক্ষায় আজুস্পার্মিয়া নির্ণিত হলে হুট করেই চিকিৎসায় না গিয়ে বরং এক থেকে দুই সপ্তাহ পর যথার্থ ‘সিমেন অ্যানালাইসিস প্রটোকল’ অনুসারে ভালো মানের ল্যাব থেকে পুনরায় বীর্য পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
আজুস্পার্মিয়া হলে দিশেহারা হয়ে ছোটাছুটি করা একদম যাবে না। এখানে-সেখানে দেখিয়ে যাওয়া, অমুক প্যাথি, তমুক প্যাথি, কবিরাজি, ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ-কবজ এগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়া না বুঝেই এর-তার কথায়, ভিন দেশে ছোটা বা হুট করেই আইভিএফ বা টেস্ট টিউব বেবির পরিকল্পনা না করাই ভালো। কারণ, এ সম্পর্কে ধারণা ও সম্পূর্ণ পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া এমন উদ্যোগে সফলতার দেখা মেলা ভার।
মনে রাখতে হবে, আজুস্পার্মিয়ার ক্ষেত্রে নিশ্চিত সফলতা বলে কিছু নেই। যা-ই করা হোক না কেন, সবকিছুই শুধু চান্স হিসেবে নেওয়া। তাই তো এ ক্ষেত্রে অবশ্যকরণীয়–
১. যে কোনো কিছু করতে যাওয়ার আগেই নিজের সমস্যার প্রকৃতি সম্পর্কে সব জানতে হবে, ধারণা পেতে হবে।
২. সমস্যার পেছনের সম্ভাব্য কারণগুলো (Causes) চিহ্নিত করতে হবে।
৩. আজুস্পার্মিয়ার ধরন (Type), অর্থাৎ অণ্ডকোষের ভেতরে স্পার্ম তৈরি হচ্ছে, কিন্তু বাইরে আসতে পারছে না (Obstructive Azoospermia), নাকি অণ্ডকোষ স্পার্মই তৈরি করতে পারছে না (Non Obostructive Azoospermia)– তা জেনে চিহ্নিত করতে হবে।
৩. সমস্যার প্রকৃতি, কারণ ও ধরন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলেই শুধু আজুস্পার্মিয়াকে কিছুটা হলেও পরাস্ত করে লক্ষ্যে পৌঁছানোর সুযোগ থাকে।
সেই সঙ্গে এটিও মনে রাখতে হবে, শুধু ওষুধপত্র খেয়ে আজুস্পার্মিয়া ভালো হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সমস্যার প্রকৃতি, কারণ, ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত চিকিৎসার পাশাপাশি বিশেষ ধরনের খাবার-দাবার, লাইফস্টাইল মেইনটেইন করে প্রয়োজনীয় ডায়েটরি সাপ্লিমেন্ট নিলে আজুস্পার্মিয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সহায়ক হয়।
এ ছাড়া আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে রিজেনারেটিভ মেডিসিন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টেস্টিকুলার রিজেনারেশন, অর্থাৎ অণ্ডকোষ পুনরায় কার্যকর করে সক্রিয়ভাবে স্পার্ম (শুক্রাণু) উৎপাদন করা সম্ভব। এই পদ্ধতি অন্ধকারে যেন আশার আলো জাগাচ্ছে। এই টেস্টিকুলার রিজেনারেশনের (পুনরুদ্ধার/পুনর্জন্ম) মাধ্যমে অণ্ডকোষের ডিএনএজনিত ত্রুটি ও বিভিন্ন ধরনের স্পার্মের সমস্যা, এমনকি জিরো স্পার্ম বা আজুস্পার্মিয়াকে পরাস্ত করা যায়। এতে ‘ডোনার স্পার্ম’ ছাড়াই একেবারে নিজের স্পার্মেই সন্তান নেওয়ার পথ সুগম হয়। আর এই প্রক্রিয়াটির ফলাফল সাধারণত নির্ধারিত হয়ে যায় সর্বোচ্চ তিন থেকে চার মাসের মধ্যেই।
লেখক : ইনফার্টিলিটি ও আইভিএফ কাউন্সেলর
ইমপালস হাসপাতাল, ঢাকা
ফোন: +৮৮০১৬৮৪৩৪২৪৪৯
#FertilityHelpline