ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু
ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, পরজীবী- যেকোনোটি দিয়েই নিউমোনিয়া হতে পারে। সাধারণত বেশির ভাগ নিউমোনিয়া হয় অ্যাডেনোভাইরাস, রাইনোভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাস, প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দিয়ে।
ব্যাকটেরিয়াজনিত নিউমোনিয়ার মধ্যে স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনি, হিমেফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা, নাইসেরিয়া মেনিনজাইটিডিস অন্যতম। জীবাণু শরীরে প্রবেশ করার পর থেকে লক্ষণ দেখা দেয়। জ্বর জ্বর, শরীর ব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া দেখা দিতে পারে।
নিউমোনিয়ার লক্ষণগুলো হলো-
জ্বর, যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার হয়ে থাকে। কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত নেওয়া, শ্বাস গ্রহণের সময় বাঁশির মতো শব্দ হওয়া, শ্বাস নিতে কষ্টবোধ বা কষ্টকর শ্বাস-প্রশ্বাস, বুকের খাঁচা দেবে যাওয়া, বুকে ব্যথা, খেতে না চাওয়া বা খেতে না পারা, শিশুর চঞ্চলতা কমে যাওয়া বা নিস্তেজ হয়ে যাওয়া, বমি করা ইত্যাদি।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস খুব দ্রুত হয়। দুই মাসের কম বয়সের শিশুদের মিনিটে ৬০ বার বা তার চেয়ে বেশি শ্বাস নিতে দেখা যায়। দুই মাস থেকে ১২ মাস বয়সের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু মিনিটে ৫০ বার বা তার চেয়ে বেশি শ্বাস নেয় এবং এক বছরের বড় শিশু ৪০ বার বা তার চেয়ে বেশিবার শ্বাস নেয়। দ্রুত শ্বাসের সঙ্গে বুকের খাঁচা দেবে যায়।
এ লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসককে দেখাতে হবে। মনে রাখবেন, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু মৃত্যুর কারণ কিন্তু দেরি করে চিকিৎসা শুরু করা। শীতকালে নিউমোনিয়া আক্রান্তের হার অনেক বেশি। তাই শীতকালে উপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলে দেরি করবেন না।
করণীয়
নিউমোনিয়া মারাত্মক রোগ হলেও এটা কিন্তু প্রতিরোধ করা যায়। শিশুদের ছয় মাস পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়ালে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি কমে। শিশুকে কৌটার দুধ খাওয়াবেন না। যেসব শিশুকে কৌটার দুধ খাওয়ানো হয়, তাদের এ রোগে আক্রান্তের হার অন্যদের চেয়ে চার গুণ বেশি। শিশুর অপুষ্টি নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের কারণ। তাই শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে।
শীতকালে সুস্থ শিশুকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের কাছে যেতে দেওয়া যাবে না। হাঁচি-কাশি আক্রান্ত লোকের সামনে শিশুকে যেতে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। অর্থাৎ বাইরে থেকে এসে হাত-মুখ সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলা জরুরি। শিশুকে ভিড়ের মধ্যে অর্থাৎ বেশি লোক সমাগমের মধ্যে যেতে না দেওয়াই ভালো।
ভ্যাকসিন দিয়েও এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। শিশুকে এ ভ্যাক্সিন দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক
রেজিস্ট্রার, ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগ
ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসাইন্স