Wednesday, January 22, 2025
spot_img
Homeজীবনের খুঁটিনাটি'রঙ বাংলাদেশ'-এর ৩০ বছর, শুভানুধ্যায়ীদের জন্য বার্তা

‘রঙ বাংলাদেশ’-এর ৩০ বছর, শুভানুধ্যায়ীদের জন্য বার্তা

সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক

১৯৯৪ সালের ২০ ডিসেম্বর পথ চলা শুরু হয়েছিল ফ্যাশন হাউস ‘রঙ’-এর, যেটি এখন নতুন রূপে ‘রঙ বাংলাদেশ’। এই ডিসেম্বরেই পৃথিবীর মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছিল আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি – বাংলাদেশ।

ডিসেম্বর মাস তাই সব সময়েই আমাদের কাছে অন্য এক আবেগের মাস, আর সেই আবেগে নতুন এক চেতনার রঙ এসে আমাদের আরও বেশি উজ্জ্বীবিত করেছে। অনুপ্রাণিত করেছে।

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর, রঙ বাংলাদেশের জন্ম মাস ডিসেম্বর এবং জুলাই চব্বিশ পরবর্তী এবারের ডিসেম্বর, সব যেন একই চেতনার সুতোয় বোনা। সে চেতনা প্রিয় মাতৃভূমিকে বিশ্বের বুকে অনন্য এক স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার প্রত্যয়। সে চেতনা প্রতিটি নাগরিককে আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করা। রঙ বাংলাদেশের ৩০ বছরের যাত্রা সেই অঙ্গীকারেরই গল্প।

নব্বই দশকে বেড়ে ওঠা আমরা চারজন টগবগে তরুণ ফ্যাশন হাউস ‘রঙ’ এর স্বপ্ন বুকে ধারণ করবার সঙ্গে সঙ্গে দেশপ্রেমের মন্ত্রেও বোধহয় নিজেদের অজান্তেই উজ্জীবিত হয়ে উঠেছিলাম। তাই স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সত্তর ও আশির দশকে জাতীয়তাবাদী চেতনাকে বুকে ধারণ করে এবং বাংলার তাঁত শিল্পকে লড়াইয়ের হাতিয়ার করে, দেশের বেশকিছু উদ্যোক্তা, দেশীয় পোশাকের সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে যে পথ তৈরি করেছিল, সেই পথটিকেই নিজস্ব রঙে রাঙিয়ে দিতে আমরাও যুক্ত হই ফ্যাশন হাউস ‘রঙ’ এর প্রকাশের মধ্যে দিয়ে।

তবে একথাও অনস্বীকার্য যে, প্রথম অবস্থায় রঙ গড়তে প্রধান কারিগর আমরা চারজন হলেও অনেকের অবদান এতে সংযুক্ত ছিল, তারা আমাদেরই বন্ধু-স্বজন। এখনও সবার ভালোবাসা, শুভকামনা ও সহায়তাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে “রঙ বাংলাদেশ” এগিয়ে যাচ্ছে সেই একই চেতনায়। বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বুকে লালন করেই ছড়িয়ে পড়ছে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।

সকল দেশীয় উৎসবে থিমভিত্তিক সামগ্রী তৈরীর অনন্য ধারণা প্রচলনে পথপ্রদর্শক – রঙ বাংলাদেশ।

আমাদের রয়েছে সুদীর্ঘ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা। রঙ বাংলাদেশ সব সময় সেই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০১৫ সাল থেকে নিজেদের সামগ্রীতে নিয়ে এসেছে বিষয় ভিত্তিক ভাবনা। এই অনুপ্রেরণায় আমরা কাজ করেছি – বাংলার এতিহ্যবাহী গয়না, আলপনা, নকশি কাঁথা, শীতল পাটি, কাঠখোদাই নকশা, শিল্পী যামিনী রায়ের চিত্রকলা, শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী’র রেখাচিত্র, শিল্পী কামরুল হাসানের চিত্রকলাসহ ইত্যাদি বিষয়কে গবেষণায় নিয়ে এসেছি আমাদের পোশাক সামগ্রীতে। এসেছে সাঁওতালদের দেয়ালচিত্র, চাকমা সম্প্রদায়ের আলাম এমন কি মোঘল শিল্পকলাও। দেশীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের প্রধান প্রধান উৎসবগুলোকে মাথায় রেখে ডিজাইনে জায়গা করে নিয়েছে কখনো ইসলামিক ঐতিহ্যের নকশা কিংবা পূজার ফুলের থিম।

আমরা ছড়িয়ে পড়ছি মানুষের ভালোবাসায় শুরুটা হয়েছিল নারায়ণগঞ্জ এর সান্ত্বনা সুপার মার্কেটের ছোট্ট পরিসরে। তিনদশকের যাত্রায়, মানুষের ভালোবাসা ও
অনুপ্রেরণায় ‘রঙ বাংলাদেশ’ বিভিন্ন শাখা প্রশাখায় ছড়িয়ে পড়ছে দেশের নানান প্রান্তেই। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও আমাদের শাখা রয়েছে ঢাকা বসুন্ধরা সিটি, সীমান্ত স্কয়ার, টোকিও স্কয়ার, যমুনা ফিউচার পার্ক, ওয়ারি, গোপালগঞ্জ, মাদারিপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ফেনি, সিলেট, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বগুড়া, খুলনা, কুষ্টিয়া থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত। এ ছাড়াও আধুনিক প্রযুক্তিকে গ্রহণ করে দেশের আনাচে-কানাচে বা বিদেশে ছড়িয়ে পড়তে আমাদের রয়েছে অনলাইন প্লাটফর্ম।

প্রতিটি বয়সের সৌন্দর্যকে সম্মান জানিয়ে ‘রঙ বাংলাদেশ’ এর সাব ব্র্যান্ড হিসেবে সৃষ্টি হয়েছে – ছোটদের জন্য ‘রঙ জুনিয়র’ তরুণদের জন্য ‘ওয়েস্ট রঙ’ এবং প্রবীণ নাগরিকদের জন্য ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’। এ ছাড়া সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে, বিদেশী বা প্রবাসী বন্ধুদের হাতে দেশের স্মারক তুলে দিতে মূলত উপহার সামগ্রী নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘আমার বাংলাদেশ’।

তিন দশকের কৃতজ্ঞতা…
অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই ‘রঙ’ থেকে ‘রঙ বাংলাদেশ’ এর তিন দশকের এই যাত্রাপথে অসংখ্য মানুষের কাছে আমরা ঋণী, কৃতজ্ঞ। সে যেমন-যাদের সঙ্গে এই যাত্রা শুরু হয়েছিল এবং পথ চলতে চলতে যাদের সঙ্গে আমরা বিযুক্ত হয়েছি কিংবা যাত্রাপথ বদলে গিয়ে যারা অন্য কোনো পথের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছিল তাদের প্রতি, একইভাবে পথ চলতে চলতে, কাজ করতে গিয়ে যারা যারা নতুন পথের সাথী হয়ে উঠেছিল বা উঠেছে তাদের প্রতিও।

আমরা কৃতজ্ঞ রঙ বাংলাদেশকে যারা তাদের পোশাক সামগ্রীতে পছন্দের তালিকায় রেখেছেন সেইসব ক্রেতাদের প্রতি।

আপনাদের ভালোবাসা, অনুপ্রেরণা না পেলে তিরিশ বছরের এই সাফল্যের গল্প হয়ত লেখা হতো না। এমনকি এই গল্পটি তৈরি হতো না, যদি না আমাদের তাঁত ও বুনন শিল্পীদের যত্নের শ্রম রঙ বাংলাদেশের দেহে এমনভাবে লেপ্টে না থাকত, আজ এই দিনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি তাঁদের প্রতিও। ধন্যবাদ জানাই আমাদের সকলকর্মী, সহযোগী, বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীদের। সংবাদ মাধ্যমে যারা আমাদের পাশে থেকেছেন, থাকবেন, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা সেইসব বন্ধুদেরও। আপনাদের সবার শ্রম,
সহযোগিতা, অনুপ্রেরণা ও ভালোবাসার রঙে ‘রঙ বাংলাদেশ’ এর ভবিষ্যৎ নিশ্চয়ই আরও রঙিন হয়ে উঠবে। সবাই ভালো থাকুন। দেশীয় পোশাক শিল্প প্রসারে এবং তাকে শক্তিশালী ভিতের উপর দাঁড় করাতে দেশীয় পোশাকেই উদযাপিত হোক আমাদের সকল উৎসব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments