সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প ‘ছুটি’র কথা নিশ্চয়ই মনে আছে ? ফটিক নামের একটি বয়ঃসন্ধি বালকের মনোস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন নিয়ে রচিত এই গল্পে এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘তেরো-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নেই।’
আসলেই যেন তাই। এই সময় একজন বয়ঃসন্ধি শিশু না পারে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে জানতে, না পারে অন্যের কাছে প্রকাশ করতে। আসলে এটি এমন একটি সময়, যেখানে সন্তান ও অভিভাবক উভয়কেই চ্যালেঞ্জিং সময় পার করতে হয়। আর তাই সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা জরুরি।
বয়ঃসন্ধি ছেলেকে সামলাতে এবং তাকে আবেগীয়ভাবে সুস্থ রাখতে, তার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার কিছু পথ বাতলেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। চলুন জানি-
তার কাজের প্রতি আগ্রহ দেখানো
বয়ঃসন্ধি ছেলে শিশুটি যা করতে পছন্দ করে সেটির প্রতি আপনি মন থেকে আগ্রহ দেখান। অর্থাৎ সে খেলা-ধুলা, গান, ছবি আঁকা ইত্যাদি যা করতে পছন্দ করুক না কেন, তাকে উৎসাহ দিন। এতে তার ব্যক্তিগত জগতে ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে পারবেন এবং শক্তিশালী বন্ধন তৈরি হবে।
বিচারহীন হয়ে কথা বলুন
তার সঙ্গে নন জাজমেন্টাল বা বিচারহীন হয়ে সৎ ও খোলামেলাভাবে কথা বলুন। আপনি এমন একটি জায়গায় পরিণত হন, যেখানে ছেলেটি সব কথা, চিন্তা ও অনুভূতি ভয়হীনভাবে প্রকাশ করতে পারবে। প্রতিদিনকার অর্থবহ আলোচনা আপনার সঙ্গে তার বোঝাপড়াকে আরো পরিপক্ব করবে।
গুণগত সময় দিন
আপনি যত ব্যস্তই থাকুন না কেন, কাজের বিরতিতে এমন একটি সময় বের করুন, যেখানে সন্তানের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম বা গুণগত সময় কাটানো যায়। একসঙ্গে কোনো ছবি দেখুন, রান্না করুন, বেড়াতে যান। এসব কাজে বয়ঃসন্ধি ছেলেটির মনে হবে আপনি তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
তার গোপনীয়তাকে সম্মান দিন
সন্তান বড় হতে থাকলে তার নিজের একটি জগৎ তৈরি হয়; গোপনীয়তা তৈরি হতে থাকে। এই গোপনীয়তাকে
সম্মান দিন। আসলে বিশ্বাস ও পরিপক্বতাই পারে একটি
ভারসাম্যপূর্ণ, স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তুলতে।
তাকে উৎসাহ দিন, সহযোগিতা করুন
তার জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে সহযোগিতা করুন এবং বাধা পেড়িয়ে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দিন। পাশাপাশি ছোট-বড় সব অর্জনগুলো উদযাপন করুন। সে যেন জীবনে এগিয়ে যেতে আপনাকে পথ প্রদর্শক হিসেবে সবসময়ই পায়।
ইতিবাচক আদর্শ হন
তার মধ্যে আপনি যেই প্রতিচ্ছবি দেখতে চান, সেই আচরণ নিজেও অন্যদের সঙ্গে করুন। কারণ, শিশুরা অনুকরণ প্রিয়। দায়িত্ববোধ, আর্দশ ও সততার ক্ষেত্রে আপনিই যেন তার রোল মডেল হয়ে উঠতে পারেন, সেই চেষ্টা করুন। তবেই তো সে আপনাকে ধারণ করবে।
তার মতামতের গুরুত্ব দিন
আপনি অসম্মত থাকলেও তার সিদ্ধান্ত ও মতামতকে সম্মান ও গুরুত্ব দিন। মতামতকে গুরুত্ব দিলে সে আরো সহজভাবে আপনার সঙ্গে আলোচনা করতে পারবে।
নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন
নিজের বয়ঃসন্ধিকালের অভিজ্ঞতা শিশুটিকে শেয়ার করুন। এতে সে নিজেকে আপনার সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারবে; সম্পর্ক গভীর হবে এবং বোঝাপড়া বাড়বে।
নিজের ধৈর্য বাড়ান এবং বুঝদার হন
মূলত, বয়ঃসন্ধি একটি অস্থির সময়। শিশুটি নিজেও এই সময় বোঝে না, কী আচরণ করলে সে অন্যের কাছে মূল্যবান হয়ে উঠবে। এই সময় বিভিন্ন দৈহিক ও মানসিক পরিবর্তনের কারণে নতুন করে নিজেকে আবিষ্কার করতে থাকে। তাই, সন্তানের বয়ঃসন্ধিতে অধৈর্য হয়ে আবেগপ্রবণ আচরণ না করে তাকে বোঝার চেষ্টা করুন। আপনার সহানুভূতিমূলক আচরণই পারবে আপনাদের সম্পর্ককে আরো গভীর করে তুলতে।