Thursday, December 12, 2024
spot_img
Homeআপনার সন্তানবয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের কী জানা জরুরি ও কেন ?

বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের কী জানা জরুরি ও কেন ?

ডা. হালিদা হানুম আখতার

বাংলাদেশে সম্পূর্ণ জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ, কিশোর-কিশোরী। কিশোর-কিশোরী বলতে আমরা কত বছর বয়স বুঝি ? ১০ থেকে শুরু করে ১৪ বছর- একটি পর্যায়। আবার ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত আরেকটি পর্যায়। তবে ইউনিসেফের সংজ্ঞা অনুযায়ী ১৮ বছর বয়সের নিচে যারা, তাদের শিশু বলা হয়।

সুতরাং আমাদের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষ হলে কিশোর-কিশোরী হচ্ছে এক পঞ্চমাংশ। চার কোটির কাছাকাছি। এর মধ্যে অর্ধেক নারী হলে, দুই কোটির কাছকাছি নারী কিশোরী। এদের নিয়েই আমরা আজ কথা বলবো।

সাধারণত বাংলাদেশের পারবারিক অবকাঠামোর মধ্যে দেখা যায়, কিশোর-কিশোরীর বড় হওয়ারকে খুব সাধারণভাবে নেওয়া হচ্ছে। একজন কিশোরীর বয়ঃসন্ধিকালে, শারীরিক ও মানসিক কিছু পরিবর্তন আসে। সে দেখতে সুন্দর হয়, তার চুল সুন্দর হয়, বুকটি আগে থেকে প্রকাশ পায়। এমন সময়ে দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়। একটি হলো, কিশোরীর নিজের মধ্যে চিন্তা, আমি বড় হচ্ছি- কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবো, লুকাবো বা চলবো- ফিরবো। আরেকটি হলো, মা-বাবার একটি দায়িত্ব, মেয়েকে তারা কী তথ্য দেবে। অর্থাৎ মেয়েটির যে মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তন হচ্ছে, এসব নিয়ে তথ্য দেওয়ার বিষয়টি।

তবে আমাদের পারিবারিক যে অবকাঠামো, এখানে মা-বাবাও মনে করে না যে আমার সন্তানকে আগে থেকে বলতে হবে বা প্রস্তুত করতে হবে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক হিসেবে আমি বলতে চাই, একজন মেয়ে বড় হওয়ার সময়, তার শরীরে কী কী পরিবর্তন হচ্ছে, সেটি তাকে জানানো দরকার। এটা মা-বাবার অবশ্য কর্তব্য। যেমন, আমরা লেখা-পড়ার জন্য তাকে বলছি, তেমনি তার শারীরিক যেসব পরিবর্তন হচ্ছে, সেগুলোও বলতে হবে।

জানাতে হবে, তোমার এই বয়সে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন হতে পারে; তোমার মাসিক হতে পারে। মাসিক হলে যেসব পরিবর্তন দেহে হবে, সে সম্পর্কে কিশোরীকে বলা জরুরি। মেয়েটিকে এই সময়ের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। সে ঐ সময়ে কী ব্যবহার করবে, জানানো দরকার। মাসিকের সময় মেয়েটির পেটে ব্যথা হতে পারে; বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা হতে পারে। আগে থেকে এসব বিষয়ে জেনে সে প্রস্তুত থাকলে, হঠাৎ করে বিভ্রান্ত হবে না। বাবা-মা আগে থেকে বিষয়গুলো বললে, মেয়েটি শারীরিক এই পরিবর্তনের অবস্থাটি সহজভাবে মেনে নেয় এবং একটি প্রস্তুতির পর্যায়ে থাকে।

আরেকটি বিষয় মেয়েটিকে জানানো দরকার। মাসিক হওয়ার পর কিন্তু তার দেহে আরেকটি বড় ঝুঁকি চলে আসে। বিরাট বড় ঝুঁকি। সেটি হলো, কোনোভাবে কোনো পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক হয়ে গেলে, সহবাস বা ইন্টারকোর্স হলে, সে গর্ভধারণ করতে পারে। এই তথ্যটি কিন্তু অনেকের কাছেই থাকে না। এই তথ্যটি মা-বাবা বা অন্য কেউ-ও বলে না। তবে এটি সাপের কামড়ের মতো বিরাট ঝুঁকি হতে পারে মেয়েটির জীবনে। এই বিষয়ে তাকে বলতে হবে। মা-বাবা বা পরিবারের মানুষ অনেক সময় এসব বিষয়ে কথা বলতে লজ্জা পায় বা সংকোচ বোধ করে। তারা নিজেরাও দ্বিধায় থাকে কখন, কোন সময়ে বিষয়গুলো বলবে। এ ক্ষেত্রে মেয়ের মাসিক হলেই তাকে বলুন। দরকার হলে দুই-চারদিন আগে বলুন। বলে তাকে প্রস্তত করতে হবে এবং সবভাবে সাবধান করতে হবে।

তাকে সেখাতে হবে, অচেনা মানুষের সঙ্গে যাবে না, কেউ ডাক দিলে যাবে না, প্রলোভন দেখালে যাবে না, একলা যাবে না। এসব বিষয়ে সাবধান না থাকার কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ, আত্মহত্যা ইত্যাদি পরিস্থিতিগুলো সমাজে ঘটতে দেখা যায়, যা কখনোই কাম্য নয়।

সুতরাং এসব বিষয়ে সাবধান করা মা-বাবার কর্তব্য। পাশাপাশি স্কুলেরও দায়িত্ব রয়েছে এসব বিষয়ে। স্কুলের বইয়ের মধ্যে বয়ঃসন্ধিকাল নিয়ে যে অধ্যায় রয়েছে, তা শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে পড়াতে হবে এবং শিক্ষকদেরও এসব বিষয়ে জানতে হবে। নিজের সন্তানের মতো মনে করে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান দেবেন এবং সাবধান করবেন, যেন তারা কোনো ধরনের বিপদে না পড়ে। এসব বিষয়ে জানানোর মাধ্যমে কিশোরীটিকে একটি নিরাপদ শৈশব দেওয়ার প্রচেষ্টা সবারই করতে হবে।

ডা. হালিদা হানুম আখতার
ডা. হালিদা হানুম আখতার 

লেখক : রোকেয়া পদকে ভূষিত বিশিষ্ট নারী ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments