অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনা. (অব.) ডা. মো. আজিজুল ইসলাম
আজ ১০ অক্টোবর, বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে এই দিনটি। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য, ‘It is the time to prioritize mental health in workplace’। অর্থাৎ কর্মস্থলে মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার এখনই সময়।
আমরা প্রত্যেকেই কর্মজীবী এবং জীবনের একটি দীর্ঘ সময় কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত থাকি। এটি আমাদের জীবন ও জীবিকার নির্ভরযোগ্য স্থান। কাজের মাধ্যমে নিজে বাঁচি এবং পরিবারকে বাঁচাই। কর্মক্ষেত্র সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ পাওয়ার অধিকার সবার রয়েছে। আর কর্মক্ষেত্র নিরাপদ করার একটি প্রধান অংশ হলো মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া।
কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা জরুরি কেন?
মন ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে মানুষের কর্মস্পৃহা, কর্মোদ্দীপনা বিনষ্ট হয়ে যায়। মানুষ হয়ে পড়ে কর্মহীন ও কর্মচ্যুত। হারায় তার কাজ (চাকরি)। এতে ব্যক্তি ও তার পরিবারের জীবনে নেমে আসে অমানিশার কালোরাত্রি। পৃথিবীতে শুধু উদ্বিগ্নতা (Anxiety) ও বিষণ্নতা (Depression) – এর কারণে প্রতি বছর ১২ বিলিয়ন কর্মদিবস নষ্ট হয়।
কাজের ক্ষেত্রে অসহযোগিতা যেসব মানসিক সমস্যা তৈরি করে
কোনো কোনো কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে (যেমন : হয়রানি, বুলিং, অপদস্ততা, অসহযোগিতা) মানুষের মনে প্রচুর চাপের সৃষ্টি হয়। এতে তার মাঝে সৃষ্ট হয় হীনমন্যতা, মানসিক চাপজনিত সমস্যা, উদ্বিগ্নতা (Anxiety), বিষণ্নতা (Depression), মাদকাসক্তি, ব্যক্তিত্ব সমস্যা ও অন্যান্য গুরুতর মানসিক রোগ। এসব রোগ বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা তৈরি করতে পারে।
কর্মক্ষেত্রে এসব মানসিক প্রতিকূলতা একজন ব্যক্তি ও পরিবারকে পথে নামিয়ে দিতে পারে। বিষয়টি আমাদের দেশের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এখানে একটি পরিবারে সাধারণত এক বা দুইজন কার্মজীবী মানুষ থাকে।
সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন ও নিশ্চয়তা বিধান ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা ও কর্মক্ষেত্রে সবার সহমর্মিতা ও সহাযোগিতার হাত প্রসারিত করা।

কর্মক্ষেত্রে সুন্দর মানসিক স্বাস্থ্যের নিশ্চয়তার জন্য করণীয়
- মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সবার ইতিবাচক মনোভাব।
- কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের একে অন্যের সঙ্গে কুশল বিনিয়ম, আলাপ-আলোচনা, খাবার গ্রহণ, পারিবারিক বন্ধন সৃষ্টির মাধ্যমে মনের কষ্টগুলো দূর করা যেতে পারে।
- সহকর্মীর প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রকাশ।
- সহকর্মীরা একে অপরের বন্ধু হবেন, যাতে একে অন্যের সাহায্য গ্রহণে দ্বিধান্বিত না হন।
- কোনো সহকর্মীকে বুলি, হেনস্তা, অপমান, অপদস্ত, ছোটজ্ঞান না করা।
- সহকর্মীর দুঃখ-কষ্ট, বেদনাকে শেয়ার করা ও সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করা।
- কর্মক্ষেত্রে কিছু বিনোদন, সাংস্কৃতিক চর্চা, সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
- সম্ভব হলে সহকর্মীর মাঝে মানসিক রোগের লক্ষণ দেখা গেলে তাকে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা।
- একটি সুস্থ জীবনের জন্য একটি সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যবান্ধব পরিবেশ অপরিহার্য। আমাদের মানসিক চাপ মুক্ত থাকা, হাসিখুশি থাকাসহ একে অপরের সহমর্মী হওয়া প্রয়োজন। এতে কর্মজীবী বাঁচবে, বাঁচবে তার পরিবার।
লেখক :
