সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক
শিখা খাতুন সবসময় চাইতেন নিজেকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার। ছোটবেলা থেকেই কখনো অলস সময় পার করতে পছন্দ করতেন না। কোনো না কোনো কাজের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতেন। স্বাবলম্বী হওয়ার এই তীব্র জেদ আজ তাকে উদ্যোক্তা হিসেবে সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।
ঢাকার খিলগাঁও তালতলায়, অধরা বিউটি জোন নামে তার একটি নিজস্ব পার্লার রয়েছে। পার্লারের আয় খারাপ নয়। বিউটি আর্টিস্ট হিসেবে এলাকাতে তার একটি সুনামও রয়েছে। শিখা বলেন, ‘ আমার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ। সেখানে আমার মামার একটি বিউটি পার্লার রয়েছে। সেখান থেকে টুকটাক কাজ শিখি আমি। এরপর অবশ্য আর এই পেশায় কাজ করার সুযোগ হয়নি। নার্সিং পেশায় চলে যাই। তবে বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে কুড়িগ্রাম চলে যাওয়ার কারণে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। এক বছর পর আবার ঢাকায় আসি। যেহেতু আমি কাজ ছাড়া থাকতে পারি না, তাই আমার স্বামী বললেন, বিউটিফিকেশন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উজ্জ্বলা থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য। তিনি আমাকে খুব সহযোগিতা করেছেন এই প্রশিক্ষণ নিতে। এরপর ২০২১ সালের শেষের দিকে উজ্জ্বলায় ভর্তি হই। সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করে এখন স্যালন দিয়েছি।’
‘ আসলে উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছাটা আমার সবসময়ই ছিল। আমি প্রথমে সাদামাটা চলতে পছন্দ করতাম। তবে আমাদের সমাজে সবকিছুতে একটি শো অফের বিষয় রয়েছে। আমি এটা পারতাম না। আমাকে অনেক অবহেলার শিকার হতে হয়েছে এই জন্য। এই বিষয়টি আমার মধ্যে জেদ তৈরি করে। এই জেদ থেকেও স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে কিছু করার ইচ্ছা হয়’, বলছিলেন শিখা।
উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে তাঁর স্বামী ও উজ্জ্বলার অবদানের কথা জানিয়ে শিখা বলেন, ‘ উজ্জ্বলার সহ প্রতিষ্ঠাতা আফরোজা পারভীন আপার কাছ থেকে অনেক মানসিক শক্তি পেয়েছি। আর উজ্জ্বলার ফ্যাকাল্টি সাদিয়া ইসলামের অনেক ভূমিকা রয়েছে আমাকে দক্ষ বিউটি আর্টিস্ট হিসেবে তৈরি করার পেছনে। আর স্বামীর সহযোগিতা তো ছিলই।’
উদ্যোক্তা হওয়ার পথটা এত সহজ ছিল না শিখার। অনেক বাঁধার সম্মুখিনও হয়েছেন। এসব বাঁধা অতিক্রম করেই আজ নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বললেন, ‘ বিউটি আর্টিস্ট পেশাটিকে এখনো আমাদের সমাজ সহজভাবে নেয় না। একজন মেয়ে পার্লার দিবে, বিষয়টিকে খারাপভাবে চিন্তা করা হয়। যেন পার্লার মানে খারাপ ব্যবসা। যারা এই পেশার মধ্যে দিয়ে উদ্যোক্তা হয়েছেন, তারা কম-বেশি এই সমস্যার মুখোমুখি হয়। ১০০ জনের মধ্যে ১০ জন হয়তো খারাপ হতে পারে, তবে ৯০ জন তো নয় ? এই পেশায় থাকলে একজন মেয়ে যেমন চাকরির সুযোগ পায়, তেমনি নিজে কিছু করতে পারে। স্বনির্ভর হওয়ার জন্য পেশাটি খুবই উপযুক্ত।
যারা এই পেশার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হতে চায়, তাদের জন্য শিখা বলেন, ‘ সবার আগে ভালো কাজ জানা দরকার। সম্পূর্ণ কাজ ভালোভাবে না জেনে এবং আত্মবিশ্বাস না তৈরি করে উদ্যোক্তা হওয়া যায় না। আমার কাজ যেন ভালো হয়, মানুষ যেন আস্থা পায়, সেই বিষয়টি তৈরি করতে হবে। অন্যের নেতিবাচক কথাকে পাত্তা দিলে চলবে না। নিজের লক্ষ্যকে স্থির থাকতে হবে। বাধা আসবে, অতিক্রমের মানসিক শক্তিও থাকতে হবে।’
ভবিষ্যতে আরো দক্ষ বিউটি আর্টিস্ট হতে চান শিখা। জানান, শেখার কোনো শেষ নেই। প্রতিনিয়তই শিখছি। নিজের কাজ যেন অনেকের কাছে ছড়িয়ে দিতে পারি, এটাই ইচ্ছা।
বি : দ্র : বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে উজ্জ্বলা লিমিটেড। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক পর্ব চলছে। এই পর্বটি ছিল ৮৬তম। উজ্জ্বলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন :
https://www.facebook.com/UjjwalaBD
https://www.instagram.com/UjjwalaBD/
ফোন : ০১৩২৪৭৩৪১৫৭