Thursday, December 12, 2024
spot_img
Homeস্বাস্থ্যকাহনযৌন স্বাস্থ্যবন্ধ্যত্ব চিকিৎসায় স্বামীর ভূমিকা, পর্ব-২

বন্ধ্যত্ব চিকিৎসায় স্বামীর ভূমিকা, পর্ব-২

রফিক-উল-আলম

১ম পর্বের পর..

দেশি প্রেক্ষাপটে বন্ধ্যত্বের বিষয়টি যেন অঘোষিতভাবে মেয়েদের ওপরই বর্তে যায়। এতে সেই মেয়েটি ‘গোদের ওপর বিষফোড়া’র মতো তীব্র একাকিত্বে ভোগে। আর এ থেকে মুক্তি পেতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে– অহরহ বিভ্রান্তও হয়। তাই শুধু এই ডাক্তার থেকে সেই ডাক্তার, ওষুধ কেনা, গেলানো, গাদা গাদা টেস্ট– এসব করেই দায় সারা নয়; বরং ছায়া হয়ে স্ত্রীর পাশে থাকুন, মানসিক চাপ, ডিপ্রেশন থেকে তাকে দুহাত বাড়িয়ে আগলে রাখুন। দেখুন না, সেই তিনিই কত চট করে বন্ধ্যত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে দুজনের জীবনকেই মধুময় করে তুলবে।

বন্ধ্যত্বের সমস্যায় নারী-পুরুষ উভয়েরই ভূমিকা সমানে সমান। তাই যখন দুজনের একজনের যে কারোরই সমস্যা ধরা পড়ুক না কেন, নিজেদের একটা ‘টিম হিসেবে’ দেখার চেষ্টা করুন। একে অন্যকে যথাসাধ্য মানসিক সমর্থনসহ সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দিতে সচেষ্ট হোন। এই ‘টিম ইফোর্ট’ই আপনাদের বন্ধ্যত্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধটায় জিতিয়ে দেবে।

বন্ধ্যত্বের চিকিৎসার সঙ্গে ‘ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্রেইন’ বা আর্থিক অবস্থাটা ভীষণভাবে জড়িত। কারণ, কখনও কখনও এই চিকিৎসা খুব ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। তাই একজন স্বামীর উচিত নিজেদের সংগতি, সামর্থ্য বিচার করে দুজনে একসঙ্গে বসেই তাদের চিকিৎসা বিষয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা করে নেওয়া।

যা দেখেছি, এতে বন্ধ্যত্ব চিকিৎসার বিষয়ে এ দেশের ‘ফিমেল পার্টনার’ই সবচেয়ে বেশি মাঠ দাপিয়ে বেড়ান। যেখানে এসব নিয়ে একটু কথা, একটা উইন্ডো খোলা দেখল, একটু ধোঁয়া উঠতে দেখল, অমনি বিভ্রান্ত হয়ে না জেনে না বুঝেই চোখ বন্ধ করে তারা যেন পংগপালের মতো সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়েন! অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সুবাদে একশ্রেণির ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নানা রকমের সরেস মূলোর প্রলোভন তো রয়েছেই; ভিন দেশ থেকেও অনেকে একই উদ্দেশ্য নিয়ে জাল বিছিয়ে চলেছে। তাই একজন স্বামীকে এ বিষয়ে সচেতনতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে, দেখতে হবে তাঁর স্ত্রী আবেগের বশে, হুজুগের বশে প্রকৃত অর্থে কোথায় ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। খোঁজখবর নিয়ে, ঘাঁটাঘাঁটি (Research) করে প্রকৃত অর্থে তাদের জন্য কোন পথটি কার্যকর, তা চিহ্নিত করে দুজনে একসঙ্গে সেই পথে এগোনো। নিজেরা তা না পারলে এর-তার কথায় কান না দিয়ে প্রফেশনাল হেল্প নেওয়া বাঞ্ছনীয়।

Communication is an integral part of any relationship। তাই তো শুধু সাংসারিক প্রয়োজনের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থেকেই নয়, বরং স্ত্রীর সাথে গভীর, নিবিড় মানসিক যোগাযোগ রেখে নিজেদের সম্পর্কের সমঝোতা বাড়িয়ে আত্মিক বন্ধনকে আরও মজবুত করুন। নতুন ডাক্তার/ওষুধে তার আগের চেয়ে ভালো কাজ করছে কিনা, কেমন অনুভব করছে, ওষুধ ঠিকমতো খাচ্ছে কিনা, কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিনা– একজন সাংবাদিকের মতো তাঁর মনের অলিগলিতে ঘুরে নিজ স্ত্রীর মনের খোঁজখবর রাখুন। স্ত্রী-গৃহিণী বা কর্মজীবী যাই হোক না কেন, গৃহকর্মে তাঁকে সহায়তা করুন। দুজনের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের আগ্রহ ও অংশগ্রহণ বাড়ান। জানবেন, আপনার এটুকু মানসিক সহযোগিতায় তিনি আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে এগিয়ে যেতে পারবেন।

শুধু স্ত্রীর বন্ধ্যত্ব সমস্যা রয়েছে বলে সন্তান হচ্ছে না– এ ধরনের মনোভাব মুখে আনা তো দূরের কথা, ঘুণাক্ষরে মনেও আনবেন না। Please don’t bottle up your feelings against your Wife. মনে রাখবেন, আপনার স্ত্রী এমনিতেই হালভাঙা এক নাবিক; হারিয়েছে দিশা… এই বিপন্ন বেচারীকে এসব নিয়ে একটুও বিপন্ন করা নয়, সন্তান না হওয়ার জন্য তাঁকে একবারের জন্যও ব্লেম করা নয়; ঠাট্টাচ্ছলেও পুনর্বিবাহের ইচ্ছে ব্যক্ত নয়। এমনিতেই ইনফার্টিলিটি সমস্যায় ভোগা মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি একটি খুব প্রচলিত ভীতি। আর সেই ভীতিতে না বুঝে হাওয়া দিলে আপনার সন্তান লাভের প্রত্যাশা, সেই সঙ্গে সংসারের সূর্যটাও পশ্চিমাকাশের দিকেই হেলে পড়বে।

মাতা-পিতা, ভগ্নি, ভ্রাতা, পরিবার ও সংশ্লিষ্ট সমাজের অহেতুক হাসি, ঠাট্টা, কৌতূহল, রোষানল থেকে স্ত্রীকে আগলে রাখুন। মনে রাখবেন, আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, আপনার স্ত্রীকে নিয়ে যে আপনি পরিবার গড়ে তুলেছেন– সেটাই এখন সর্বাগ্রে বিবেচ্য। সন্তান লাভের ক্ষেত্রে নিজের সমস্যা চিহ্নিত হলে, সৎসাহস থাকলে নির্দ্বিধায় আপনার পরিবারকে তা জানিয়ে দিন। সেটুকু সৎসাহস না থাকলে বা স্ত্রীর সমস্যা থাকলে তবে বীরদর্পে তা ঘোষণা থেকে বিরত থাকুন। বরং সব সময় সযত্নে খেয়াল রাখুন, নিজ পরিবার, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন বা কোনো সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে যেন কেউ এমন বিব্রতকর প্রশ্ন না তুলে আপনার স্ত্রীকে হেয় ও বিপন্ন করতে না পারে। একান্ত সে রকম প্রশ্ন আপনার স্ত্রীর উপস্থিতিতে এমনকি অনুপস্থিতিতে কোথাও কখনও উঠলে স্মার্টলি বলুন, ‘এটা তো আমাদের পার্সোনাল প্ল্যানিং (ব্যক্তিগত পরিকল্পনা)। সন্তান নেওয়ার বিষয়টি এখনও ভাবছি না, দুজনে আরেকটু গুছিয়ে নেই।’ আপনাকে বিব্রত ও আমোদ পাওয়ার লক্ষ্যেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের প্রশ্নের অবতারণা হয়। আপনি নির্বোধ হলে সে ফাঁদে পা দেবেন; আর নিজ ও স্ত্রীর সম্মানের কথা মনে করলে এভাবেই সেসব অতি উৎসাহী মুখে ভদ্রভাবে ঝাঁটা মারবেন।

বন্ধ্যত্ব সমস্যার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে সন্তানপ্রত্যাশীদের ‘ওভুলেশন ক্যালেন্ডার’ মেইনটেইন করে ‘শারীরিকভাবে মিলিত হওয়া’ অতি অত্যাবশ্যকীয়। প্রতিটি স্বামীকে এ সময় নিজ দায়িত্বতেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে, দায়সারা গোছের নয়; বরং মনে রাখতে হবে, সময়মতো একটা মধুর যৌনমিলন অচিরেই তাদের ইনফার্টিলিটি সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

চলবে..

রফিক-উল-আলম
রফিক-উল-আলম

লেখক : ইনফার্টিলিটি কাউন্সেলর ;
ইমপালস হাসপাতাল, ঢাকা

১ম পর্বের লিংক :

বন্ধ্যত্ব চিকিৎসায় স্বামীর ভূমিকা, পর্ব-১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments