Wednesday, January 22, 2025
spot_img
Homeস্বাস্থ্যকাহননারী স্বাস্থ্যজরায়ুমুখের ক্যানসার: কারণ ও লক্ষণ

জরায়ুমুখের ক্যানসার: কারণ ও লক্ষণ

ডা. হালিদা হানুম আখতার

নারী স্বাস্থ্যের কথা বলতে গিয়ে আজ খুব জরুরি একটি বিষয় নিয়ে কথা বলবো। সেটি হল, জরায়ুমুখের ক্যানসার। আমরা জানি, নারীর যত অঙ্গে এই রোগটি হয়, তার মধ্যে জরায়ুমুখের ক্যানসার দ্বিতীয় স্থানে।

সারা পৃথিবীতে দেখা গেছে, প্রতি বছর ছয় লাখের ওপর নারী আক্রান্ত হয় এবং এর ৬০ শতাংশ মারা যায়। বাংলাদেশে দেখা গেছে, আট হাজারের মতো জরায়ুমুখের ক্যানসারে ভোগে এবং প্রায় পাঁচ হাজারের কাছাকাছি মারা যায়। অর্থাৎ, অর্ধেকের বেশি নারী মারা যাচ্ছে।

ক্যানসার কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রতিরোধযোগ্য। তাই আগেই যাচাই বা নির্ণয় করা গেলে, এত মানুষকে মরতে হয় না। এখানে আমরা আলোচনা করবো, জরায়ুমুখের ক্যানসার কেন হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে এবং এর লক্ষণের বিষয়ে।

কেন ও কীভাবে হয় ?

বিভিন্ন তথ্য ও গবেষণা থেকে দেখা গেছে, এটি কয়েকটি কারণে হয়ে থাকে। অনেক কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেওয়া, অধিক সংখ্যক সন্তান জন্ম দেওয়া বা ঘন ঘন সন্তান হওয়ার কারণে জরায়ুমুখের ক্যানসার হতে পারে। আবার হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি-এর কারণে এই সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। এখন প্রশ্ন হলো, এই ভাইরাস কোথা থেকে আসে ? এটি আসে যৌন সঙ্গমের মাধ্যমে।

একজনের একাধিক যৌন সঙ্গী থাকলে, তার ঝুঁকি বেশি। স্বামী ঘরে স্ত্রীকে রেখে দূরে কোথাও বা অন্য কোনো দেশে কাজের জন্য চলে গেলে, সেখানে তার একাধিক যৌনসঙ্গী হলে এবং পরে স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা করলে, রোগটি আসতে পারে। এই বিষয়টি স্বামী বা পুরুষ বন্ধুকে জানতে হবে এবং যেই নারীর জরায়ু রয়েছে তাকেও খুব ভালোভাবে জানতে হবে।

লক্ষণ
জরায়ুমুখের ক্যানসারের অনেকগুলো পর্যায় রয়েছে। পর্যায় এক, দুই, তিন ও চার। লক্ষণের ক্ষেত্রে, প্রথমদিকে
জরায়ুমুখে ঘা হতে পারে। জরায়ুমুখের কোষ পরিবর্তন হয়ে ক্যানসারে রূপান্তরিত হয়। এখান থেকে রক্তপাত হতে পারে; ব্যথা হতে পারে।

রোগ আরো বেড়ে গেলে বা বেশি পর্যায়ে চলে গেলে আশেপাশের যেসব অঙ্গ রয়েছে (যেমন: সামনে ব্লাডার, পেছনে পায়খানার রাস্তা ইত্যাদি) সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। তখন ভীষণ ব্যথা ও রক্তপাত হতে দেখা যায়।

দেখবেন, অনেকে ঐ পর্যায়ে যাওয়ার পর বুঝতে পারে ক্যানসার হয়েছে। তখন তারা ডাক্তার দেখায়। তবে, তখন মৃত্যুর কাছকাছি চলে যায়। রোগীকে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না।

আমাদের দেশে যেহেতু নারী অবহেলিত, তারা সময়মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে না বা স্ক্রিনিং করে না, তাই রোগ বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে চলে যায়, মৃত্যু ছাড়া আর কোনো পথ থাকে না। উন্নত দেশগুলোতে আমরা দেখি, ক্যানসার হলেও মৃত্যুর সংখ্যা কম। কারণ, তারা প্রাথমিকভাবে স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করে এবং অনেক দিন বাঁচতে পারে।

তাই ক্যানসার প্রতিরোধে আমাদেরও স্ক্রিনিং ও প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে জোর দেওয়া প্রয়োজন এবং সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

লেখক : রোকেয়া পদকে ভূষিত বিশিষ্ট নারী ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

ডা. হালিদা হানুম আখতার
ডা. হালিদা হানুম আখতার; রোকেয়া পদকে ভূষিত বিশিষ্ট নারী ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments