সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক
চট্টগ্রামের হাটহাজারির বাসিন্দা জান্নাতুল মাওয়া কলি। নিজেকে সাধারণ পরিচয় দিতেই পছন্দ করেন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের চার বছর পর এক ভীষণ অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয় সংসারে। সেই জীবন সংগ্রামের মাঝেই উজ্জ্বলা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে হয়ে উঠেন বিউটি আর্টিস্ট ও উদ্যোক্তা। একজন স্বাবলম্বী নারী উদ্যোক্তা হিসেবে তার জীবন সংগ্রামের গল্প রইলো পাঠকদের জন্য।
সন্তানের ওষুধ কেনার টাকাও জোগাড় করতে পারতাম না
বিয়ের চার বছর পর্যন্ত অনেক ভালো ছিলাম। আমার স্বামী তখন ব্যবসা করতো। তবে চার বছর পর তার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। তখন অর্থনৈতিকভাবে খুব অসুবিধার মধ্যে পড়ি। এর পর আমার স্বামী অল্প বেতনে একটি চাকরি শুরু করে। তার একার আয়ের টাকায় সংসার চালানো অনেক কষ্টের হয়ে যাচ্ছিল। এমন অবস্থা ছিল যে আমার সন্তানের ওষুধ কেনার টাকাও পর্যন্ত জোগাড় হচ্ছিল না। এভাবে প্রায় দেড় পছর চলে যায়।
এক পর্যায়ে আমার মাকে সব খুলে বলি। আমার মায়েরও তেমন কিছু করার ছিল না। তারাও মধ্যবিত্ত। এ সময় মা তার নিজের একটি সেলাই মেশিন আমাকে দিয়ে দেয়। এরপর কাপড় সেলাই শিখে কিছু টাকা আয় করা শুরু করি। রাতদিন এমনভাবে কাজ করতাম যে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। এরপর কিছুদিন বিশ্রাম নিতে হয়।
টিভিতে আফরোজা পারভীনের অনুষ্ঠান দেখে বিউটি আর্টিস্ট হতে চাই
একদিন টেলিভিশনে উজ্জ্বলার সহ প্রতিষ্ঠাতা আফরোজা পারভীন আপার একটি ভিডিও দেখে আমার অনেক ভালো লাগে। এরপর থেকে নিয়মিত প্রোগরামটি দেখতাম। ইউটিউবেও তার ভিডিও দেখি। পাশাপাশি ‘জি বাংলা’র দিদি নম্বর ওয়ান অনুষ্ঠানটি দেখতাম। মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার গল্পগুলো আমাকে খুব শক্তি জোগাতো।
আফরোজা আপার ভিডিও দেখে অনেকটাই শিখে গিয়েছিলাম সাজগোজ। এরপর আত্মীয় স্বজনের বিয়েতে তাদের সাজিয়ে দিতাম। এক পর্যায়ে আমার অনেক সুনাম হয়। এরপর সেলাইয়ের কাজ ছেড়ে সাজানোর কাজের দিকে মনোযোগী হই।
২০১৮ সালে আমার স্বামী একটি ভালো চাকরি পায়। আমার ক্লাইন্ট দেখে এবং আগ্রহ দেখে স্বামী অনেক সহযোগিতা করে। সে আমাকে উৎসাহ দেয় প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজটি ভালোভাবে শিখতে। আমি রাজি হই।
এরপর কিছু টাকা জমিয়ে একটি পার্লারে শিখতে যাই। তবে সেখানে ভালোভাবে শেখায়নি। আমি খুব হতাশ হয়ে পড়ি। টাকাও চলে গেল, আবার কিছু শিখতেও পারলাম না। এরপর শুধু মেকআপ নিয়ে একটি পার্লার শুরু করি।
উজ্জ্বলার অনুপ্রেরণাতেই এগিয়ে যাচ্ছি
এই সময় উজ্জ্বলায় শিখেছে এমন এক আপুর সঙ্গে পরিচিত হলাম। এরপর এখানে আফরোজা পারভীন রয়েছেন শুনে আস্বস্ত হই এবং উজ্জ্বলার চট্টগ্রাম শাখায় ভর্তি হয়ে যাই। এখানে ক্লাস করে আমি এখন মেকআপের বেজ খুব ভালোভাবে করতে পারি। কোনো কাস্টমারকে আমার এখন ফেরাতে হয় না। আর আগের চেয়ে বেশি টাকা আয় করছি। উজ্জ্বলা এমনভাবে অনুপ্রেরণা দিয়েছে যে আবারও লেখাপড়া শুরু করেছি। আমি এখনও উজ্জ্বলায় শিখছি।
এখন নিজে তো উদ্যোক্তা হয়ে স্বাবলম্বী হয়েছি, চাই আরো নারী আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ করে নিজের পায়ের মাটি শক্ত করুক। আসলে নারীকে স্বাবলম্বী হতে হবে, না হলে এ ধরনের পারিবারিক অর্থনৈতিক সংকটগুলো কাটিয়ে উঠা মুশকিল। আর কে জানে, কার জীবনে কখন, কী সংকট আসে ?
বি : দ্র : বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে উজ্জ্বলা লিমিটেড। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক পর্ব চলছে। এই পর্বটি ছিল ৯৫তম। উজ্জ্বলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন :
https://www.facebook.com/UjjwalaBD
https://www.instagram.com/UjjwalaBD/
ফোন : ০১৩২৪৭৩৪১৫৭