Wednesday, January 22, 2025
spot_img
Homeস্বাস্থ্যকাহননারী স্বাস্থ্যজরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয়

জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয়

ডা. হালিদা হানুম আখতার

একটি বিষয় আমি বারবারই বলতে চাই, আমাদের দেশ, বিশেষ করে অনুন্নত বা উন্নতিকামী দেশগুলোতে যতজনের ক্যানসার হচ্ছে বা ধরে পড়ছে, দেখা যাচ্ছে তার অর্ধেকের বেশি প্রতিবছর মারা যাচ্ছে। এটি একটি জরুরি পর্যবেক্ষণ। কেন মারা যাবে এতজন?

যে রোগ প্রতিরোধযোগ্য, যেটি প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা যায় এবং সুন্দর করে চিকিৎসা দেওয়া যায়, সেখানে কেন অর্ধেকের বেশি বা ৬০ শতাংশ ধরা পড়ার পর মারা যাবে? এটি একটি বড় প্রশ্ন।

এর পেছনে উত্তর হলো, আমরা নিজেরা সচেতন নই। আমরা জানি না, এই রোগ হতে পারে। আর এই সচেতনতার ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

স্ক্রিনিং করা
আমরা জানি না যে এই রোগ স্ক্রিনিং করলে প্রতিরোধ করা সম্ভব। খুব কম খরচে ভায়াটেস্ট করা যায়। এটি কেবল জরায়ুমুখের মধ্যে ভিনেগার লাগিয়ে দেখবে যে কোনো কোষের চেহারার পরিবর্তন হচ্ছে কিনা, রঙের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কিনা। এটি খুব সহজ বা প্যাপ্সমেয়ার করা যায়। সেটিও সহজ।

তবে আমরা কখন চিকিৎসকের কাছে যাই, যখন রোগ অনেক বিস্তার হয়ে অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। তখন আর বাঁচার কোনো রাস্তা নেই। তাহলে এই বিষয়টি আমাদের জানতে হবে যে রোগটি প্রতিরোধযোগ্য।

এইচপিভি ভ্যাকসিন নেওয়া
আরেকটি বিষয় আমি বলতে চাই, এখন নতুন বিজ্ঞান এসেছে, এইচপিভির ভ্যাকসিন বের হয়েছে। এই ভ্যাকসিন নয় থেকে ১৫ বছর বয়সের মেয়েদের দিলে রোগটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। বাংলাদেশে এখন ইপিআইর মাধ্যমে স্কুল-কলেজের মেয়েদের এটি দেওয়া হয়। ২৬ বছর পর্যন্ত এই ভ্যাকসিন কাজে লাগে। তবে তিনটি ডোজ নিতে হয়। এসব তথ্য আমাদের জানতে হবে।

নিয়মিত চেকআপ
অনেক সময় টাকা-পয়সার অভাবে অনেকে পরীক্ষা করে না। তবে সুস্থ থাকা অবস্থায় কম খরচে পরীক্ষা করে নিজের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে হবে। না হলে রোগ বাড়লে চিকিৎসার জন্য বেশি টাকা খরচ হয়ে যেতে পারে। রোগ ধরা পড়লে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপিতে আরও বেশি টাকা ব্যয় হবে। এই খরচের মধ্যে না পড়ে আমরা খুব প্রাথমিক অবস্থায় রুটিন চেকআপ করলে অনেক আগে এটি নির্ণয় করতে পারবে। এতে ভোগান্তি কম হয়ে সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব।

নিজের, পরিবার ও সমাজের দায়িত্ববোধ
নিজের শরীরকে ভালোবাসতে হবে, নিজেকে ভালোবাসতে হবে এবং প্রতিবছর একটি স্ক্রিনিং করতে হবে। এটি হলো নিজের প্রতি নিজের দায়িত্ব।

এখানে পরিবারেরও একটি বড় দায়িত্ব রয়েছে। স্বামীর একটি ভূমিকা রয়েছে। পরিবারের অন্য অভিভাবকদের কাজ হলো বাড়ির নারীকে রুটিন চেকআপ করানো। স্তন ক্যানসার হতে পারে, জরায়ুমুখের ক্যানসার হতে পারে। এই যে রুটিন চেকআপ, এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি সবার দায়িত্ব।

এ ছাড়া সমাজে যারা থাকেন, স্কুলে যারা শিক্ষক রয়েছেন, তাদেরও দায়িত্ব। আমি বলব, প্রতিটি স্কুলের ভূমিকা রয়েছে, তারা যেন এই এইচপিভি ভ্যাকসিন নেওয়ার ব্যবস্থা করে। প্রত্যেক মা-বাবাকে উৎসাহিত করাতে হবে সন্তানকে এই টিকা দেওয়ার জন্য।

শেষে বলতে চাই, আপনি নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতন থাকুন। পরিবারে যারা রয়েছে, তাদের শরীর সম্পর্কে সতর্ক হন। অনেক আগে যখন রোগটি ধরা পড়বে, তখন কম খরচে সুস্থ থাকার সম্ভাবনা বাড়বে। এ ক্ষেত্রে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।

লেখক : রোকেয়া পদকে ভূষিত বিশিষ্ট নারী ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

ডা. হালিদা হানুম আখতার
ডা. হালিদা হানুম আখতার; রোকেয়া পদকে ভূষিত বিশিষ্ট নারী ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments