ডা. শাকিল মাহমুদ
বর্তমান বিশ্বে এক আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ভাইরাসের নাম এমপক্স। যদিও এটি করোনার মতো ভয়াবহ হবে না বলে আশা ব্যক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লিউএইচও। তবুও এই রোগ নিয়ে সতর্ক হতে বলছে তারা।
এই ভাইরাসের উৎপত্তি আফ্রিকা থেকে। আক্রান্ত ব্যক্তির ১০০ জনের মধ্যে ১০ জন রোগটিতে মারা যেতে পারে। এখনও পর্যন্ত এর দুটো ধরন পাওয়া গেছে। যথা : ক্লেড ১ ও ক্লেড ২। এর মধ্যে ক্লেড ১ বেশি বিপজ্জনক।
লক্ষণ
- জ্বর।
- ঠান্ডা।
- দেহে র্যাশ।
- ত্বকে ফুসকুড়ি। অনেক দিন হয়ে গেলে ফুসকুড়িতে পানি আসতে পারে। এগুলোতে পানি থাকলেও শক্ত ধরনের হয়।
- লিম্ফ নোট ফুলে যায়।
- মুখমণ্ডল, হাতের তালু ,পায়ের তালু বেশি আক্রান্ত হয়।
জীবাণু শরীরে ঢোকার তিন থেকে চার দিন পর লক্ষণ প্রকাশ পায়। সর্বোচ্চ দুই থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত এই রোগ থাকতে পারে।
পরীক্ষা
এই রোগ নির্ণয়ে নির্দিষ্ট কোনো পরীক্ষা নেই। তবে আক্রান্ত স্থান থেকে নমুনা নিয়ে আর-টিপিসিআরের মাধ্যমে এই ভাইরাস সনাক্ত করা হয়।
কীভাবে ছড়ায় ?
- আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শ।
- অনিরাপদ যৌনসঙ্গম।
- ভাইরাসের মাধ্যমে দূষিত হয়েছে, এমন জিনিসের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। যেমন : বিছানা, পোশাক ও তোয়ালে ইত্যাদি।
- সংক্রমিত ব্যক্তির কাছাকাছি এসে কথা বলা বা শ্বাস নেওয়ার মতো ঘটনাতেও রোগ ছড়াতে পারে।
প্রতিরোধ
- আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আশা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস না ধরাই ভালো।
- বাড়ির বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করুন।
- কেবল মাত্র সেবাদানকারী ছাড়া সংক্রমিত ব্যক্তির ঘরে প্রবেশ না করাই ভালো।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন ?
শ্বাসকষ্ট, প্রচণ্ড জ্বর, শরীর ব্যথা, স্বাভাবিক ওষুধে সমস্যা না কমলে, সেপটিসেমিয়া হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
প্রতিকার
এ রোগ প্রতিকারে লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ছাড়া রোগীকে আইসোলেশনে রাখতে হবে। ভারসাম্যপূর্ণ ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো জরুরি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন ‘সি’ ও অ্যান্টি অক্সিডেন্টযুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে। যেমন : লেবুর রস, কমলা, মাল্টা ইত্যাদি। এ ছাড়া পানিশূন্যতা থেকে রেহাই পেতে তরল খাবার খাওয়াতে হবে।
ফুসকুড়ি ঢেকে রাখতে হবে যেন বাতাসে সংস্পর্শে এসে অন্য জায়গায় ছড়াতে না পারে। রোগীকে সবসময় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। সচেতনতাই পারে এই রোগ থেকে নিরাপদ রাখতে।
লেখক : চিকিৎসক, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজ (সাভার)।