ডা. আবু সাঈদ শিমুল
শিশুকে বুকের দুধের পাশাপাশি কী খাওয়াবে, ভেবে পায় না অনেকেই। আবার কখন শক্ত খাবার শুরু করতে হবে, তা নিয়েও বিভ্রান্তির শেষ নেই।
ছয় মাস বয়স থেকে শক্ত খাবার শুরু করার কথা বলা হলেও অনেকেই মনে করে পাঁচ মাস শেষে বা ছয় মাস হলেই বুঝি শক্ত খাবার দিতে হবে। তা কিন্তু নয়। শিশু ছয় মাস শেষে সাত মাসে পড়লে তবেই শক্ত খাবার দিন।
প্রথম খাবার হিসেবে অনেকে চালের গুঁড়া বা সুজি খাওয়াতে চায়। এই দুটো মোটেও সুষম খাবার নয়। অনেকে আবার খিচুড়িকে বেছে নেয়। খিচুড়ি সুষম খাবার হলেও এতদিন শুধু দুধ খেয়েছে যে শিশু তার জন্য এর স্বাদ, গন্ধ, মসলা ও লবণ মোটেও কাক্ষ্মিত নয়।
খাবার খাওয়ানোর প্রথম ধাপে আপনার শিশুকে চামচ মুখে দেওয়ার অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত করাতে হবে এবং একই সঙ্গে শক্ত খাবারের স্বাদ দিতে হবে। এই সময় এক চা চামচ পরিমাণ বুকের দুধের সঙ্গে নিন্মোক্ত খাবারগুলো মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। যেমন:
ক) তরল ভাত
খ) রান্না করা সবজি (চটকানো গাজর, পেঁপে,
মিষ্টি আলু )
গ) পাকা কলা খুব ভালো করে চটকে প্রয়োজনে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে পানি মিশিয়ে তরলের মতো করে, এর থেকে এক চা চামচ পরিমাণ খাওয়ান। এভাবে দুই থেকে তিন দিন খাওয়াতে হবে।
এগুলো খাইয়ে এরপর শুধু নরম ভাত (বুকের দুধ ছাড়া) শুরু করুন। এরপর ধীরে ধীরে এর সঙ্গে ডাল মেশান। তারপর সবজি, ডিম, মাছ, মাংস ইত্যাদি তিন থেকে চার দিন পর পর একটি করে শুরু করুন। এভাবে ধীরে ধীরে একটি করে নতুন খাবার শুরু করলে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের খাবারের সঙ্গে শিশু যেমন পরিচিত হয়ে উঠবে, তেমনি কোনো খাবারে অ্যালার্জি হলে সেটি শনাক্ত করাও সম্ভব হবে।
অনেকেই মনে করে ডিম বা মাছ শিশুকে আরও পরে দিতে হবে। তবে আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়েট্রিক্স বলছে, সাত মাস থেকে শিশুকে সব খাবারই দেওয়া যাবে। তবে গরুর দুধ এক বছর পর দিতে হয়।
শিশু আলাদাভাবে সব খাবার গ্রহণ করতে শিখলে খিচুড়ি বানিয়ে দিন। খিচুড়িতে চাল, যেকোনাে একটি সবজি, ডাল ও এর সঙ্গে মাছ অথবা মাংস অথবা ডিম দিন। শিশুকে প্রতিদিন কিছু ফল খাওয়ান। এ ছাড়া গাজর, পেঁপে, মিষ্টি আলু বা শসা টুকরা করে দিতে পারেন। খুব সকালে বা রাতে শিশুর মেজাজ তেমন ভালো থাকে না। এ সময় শক্ত খাবার না দেওয়াই ভালো। শিশুকে কিছু বুকের দুধ খাওয়ানোর পর সে যখন হাসিখুশি থাকে তখন খাবার দিন।
সাত থেকে ১২ মাস পর্যন্ত বুকের দুধ দেওয়ার পর বাড়তি খাবার খাওয়ান। আর ১৩ মাস থেকে আগে শক্ত খাবার, এরপর বুকের দুধ দিন। শিশু যদি প্রথমে খাবার খেতে বাধা দেয়, তবে হতাশ না হয়ে ঘণ্টা কয়েক পর শুরু করুন।
শিশুকে খাবার দেওয়ার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করবেন না। পরিমাণ বাড়ানোর ক্ষেত্রেও সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করুন। সব সময় খেয়াল রাখবেন, শিশুর খাবার যেন অতিরিক্ত লবণাক্ত বা মিষ্টি না হয়; মসলাও কম দিন।
লেখক : শিশু বিশেষজ্ঞ