সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক
চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় মেয়েটির বাবা মারা যায়। দুই বোন তারা। মায়ের ওপর সংসার চালানোর ভার পড়ে। বাবা মারা যাওয়ার কিছুদিন পর সম্পত্তি নিয়ে কলহের কারণে দাদার বাড়ি থেকে আলাদা হয়ে পড়েন তারা। এ সময় মনে হয়েছিলো আকাশ ভেঙে যেন মাথায় পড়লো। তখন থেকেই ভাবতেন কীভাবে নিজেকে স্বাবলম্বী করা যায়।
বাবা মারা যাওয়াতে ছোটবেলাতেই তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়। তবে স্বাবলম্বী হওয়ার অদম্য ইচ্ছাটা মনে থেকে গিয়েছিলো। আর এই পথে সহযোগী হলেন স্বামী ও উজ্জ্বলা লিমিটেড। উজ্জ্বলা থেকে বিউটি আর্টিস্ট হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে রাজধানীর মিরপুর-১৩ নম্বর সেক্টরে একটি স্যালন খুলেছেন তিনি। মাসে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় হয়। আজ একটি সফল নাম উম্মে সাদিয়া ঐশী। চলুন পাঠক, উম্মে সাদিয়ার জীবনের চড়াই-উৎড়াই, সফলতার পেছনে উজ্জ্বলার ভূমিকার গল্পগুলো জানি।
সবসময় ভাবতাম স্বাবলম্বী হবো
বাবা মারা যাওয়ার পর খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। দাদার বাড়ি থেকে অনেক অবহেলা পেয়েছি। মাঝে মাঝে ভাবতাম, বাবার অনেক সম্পদ থাকলে ভালো হতো। মায়ের এতো সমস্যায় পড়তে হতো না। মাকে দেখেই মনে হয়েছে আমাকে অনেক শক্ত ও স্বাবলম্বী হতে হবে। তবে বিয়ের পর স্বামীর খুব সহযোগিতা পেয়েছি। বর্তমানে আমি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি, সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
করোনার সময় লকডাউনে পড়াশোনা নেই, কোনো কাজ নেই। খুব হতাশ লাগছিলো। ভাবছিলাম, কী করা যায়। এ সময় ফেসবুক ঘাটতে গিয়ে উজ্জ্বলার অ্যাড চোখে পড়লো। মনে হলো, আমি তো বিউটি আর্টিস্ট হতে পারি। এই কাজটা আমার ভালোও লাগে। তখনই উজ্জ্বলার সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। লক ডাউন কিছুটা শিথিল হয়ে আসার পর ছয় থেকে সাত জন নিয়ে উজ্জ্বলা ক্লাস শুরু করে। আমি ভর্তি হয়ে যাই।
উজ্জ্বলা মেকআপের সব খুঁটিনাঁটি শিখিয়েছে
আমি শুধু হালকা-পাতলা মেকআপ করতে জানতাম। তবে মেকআপ শৈল্পীকভাবে করার একটি পদ্ধতি রয়েছে। আর এসব পদ্ধতি শিখেছি উজ্জ্বলার মাধ্যমে। আমার শিক্ষা পদ্ধতিকে পরিপূর্ণ করেছে উজ্জ্বলা। এখানকার প্রশিক্ষকরা খুব দক্ষ।
শক্তভাবে গড়ে তুলেছে উজ্জ্বলা
মেকআপ শেখানোর পাশাপাশি উজ্জ্বলায় গ্রুমিং ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্লাস হতো। এগুলো আমাকে নিয়মানুবর্তী হতে সাহায্য করেছে এবং প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও মানসিক স্বাস্থ্যকে দৃঢ় রাখতে শিখিয়েছে। উজ্জ্বলা শক্তভাবে গড়ে তুলেছে। আমার জীবনে এই প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা অসীম।
আমার কাছে সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করার টাকাটা ছিলো না। এ বিষয়ে উজ্জ্বলার সঙ্গে কথা বলি। তারা আমাকে ধীরে ধীরে টাকা পরিশোধ করে ক্লাস করার ব্যবস্থা করে দেয়। সেটি না পারলে আজ হয়তো আর শেখাই হতো না। এই সহযোগিতার জন্য উজ্জ্বলার প্রতি আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ।
স্যালন উদ্বোধন করার সময় উজ্জ্বলার সহ প্রতিষ্ঠাতা আফরোজা পারভীন আপাকে দাওয়াত দিই। ভেবেছিলাম, উনি হয়তো আসবেন না। ব্যস্ত মানুষ। তবে উনি এসেছিলেন। আর পার্লার ঘুরে ঘুরে পরামর্শ দিয়েছিলেন। আমি খুব অভিভূত হয়েছিলাম। আমার চোখ দিয়ে পানি চলে আসে উনার উপস্থিতিতে। নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে হয়েছিলো সেদিন। পরম পাওয়া মনে হয়েছিলো।
আসলে উজ্জ্বলা কেবল শিক্ষার্থীদের শিখিয়েই ছেড়ে দেয় না। পরবর্তী সময়েও তার পাশে থাকে। যেকোনো অবস্থাতেই উজ্জ্বলাকে এখনো আমরা ছায়ার মতো পাশে পাই। যেন একটি পরিবারের মতো। এখানে সব সুবিধা-অসুবিধার কথা বলা যায়। এটা সাধারণত সবাই করে না। উজ্জ্বলা একটি শান্তির জায়গার নাম।
বিউটি আর্টিস্ট হিসেবে স্বনামধন্য হতে চাই
আসলে বিউটি আর্টিস্ট হতে হলে সবসময় আপডেট থাকতে হয়। আর উজ্জ্বলা আপডেট কোর্সগুলো আনে। এখনো সময় পেলে এই কোর্সগুলো করি। নিজেকে দক্ষ করতে এগুলো খুব সহায়ক। বিউটি আর্টিস্ট হিসেবে এগিয়ে যেতে চাই এবং পার্লারকে আরো বড় করতে চাই। স্বনামে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যেই পথ চলছি। আর উজ্জ্বলা সেই স্বপ্নটা বুনে দিয়েছে চোখে।
বি : দ্র : বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে উজ্জ্বলা লিমিটেড। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক পর্ব চলছে। এই পর্বটি ছিলো ২১তম।