Wednesday, November 19, 2025
spot_img
Homeস্বাস্থ্যকাহননারী স্বাস্থ্যস্তন ক্যানসার : কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ

স্তন ক্যানসার : কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ

ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল

স্তন ক্যানসার বিশ্বব্যাপী নারীর জন্য এক ভয়াবহ মৃত্যুফাঁদ। পৃথিবীতে নারীর যেসব ক্যানসার হয়, এর মধ্যে স্তন ক্যানসার এক নম্বর। ক্যানসার জনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রেও শীর্ষে রয়েছে এটি।

এক সময় ভাবা হতো শুধু নারীরাই বুঝি এই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। এখন দেখা যাচ্ছে শুধু নারী নয়, পুরুষও আক্রান্ত হতে পারে এতে। তবে পুরুষের ক্ষেত্রে এই রোগের হার অনেক কম।

স্তন ক্যানসারের কারণ

আর সব ক্যানসারের মতোই নিয়ন্ত্রণহীন অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনের ফল হলো এটি । ঠিক কী কারণে স্তন কোষে এই অস্বাভাবিক বিভাজন হয়, তা জানা যায়নি। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া ত্রুটিযুক্ত জিন এই ক্যানসারে ভূমিকা রাখে। তবে এর বেশ কিছু রিস্ক ফ্যাক্টরের কথা জানা যায়।

যেমন-
-একই পরিবারের দুই বা ততোধিক নিকটাত্মীয়ের স্তনের ক্যানসার।
-একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অন্যান্য ক্যানসার- বিশেষ করে মলাশয় ও ভ্রুণকোষের ক্যানসার, সেইসঙ্গে স্তন ক্যানসার।
– বন্ধাত্ব বা বেশি বয়সে সন্তান হওয়া।
-খুব অল্প বয়সেই ঋতুস্রাব হওয়া কিংবা বেশি বয়সে মেনোপজ হওয়া।
-গর্ভনিরোধক পিল খাওয়া।
– হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (HRT)।
– শিশুকে বুকের দুধ পান না করানো।
– অ্যালকোহল।
-ধূমপান।
– স্থূলতা।
-অধিক চর্বিজাতীয় খাবার ও শারীরিক কর্মহীনতা।

তবে মনে রাখতে হবে স্তন ক্যানসার সংক্রামক রোগ নয় এবং একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে এই রোগ ছড়ায় না।

লক্ষণ
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় স্তনে এক ধরনের চাকা, যা মূলত বেদনাহীন। এ ছাড়াও আরো যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো-
– স্তনের আকার বা আকৃতিতে পরিবর্তন।
– স্তনের ত্বকে কুঁচকে যাওয়া।
– স্তনের বোঁটা ভেতর দিকে ঢুকে যাওয়া
– স্তনের বোঁটা থেকে রক্তসহ তরল পদার্থের ক্ষরণ।
-স্তনের বোঁটায় বা তার চারপাশে চুলকানির মতো হওয়া।
– বগলের লসিকাগ্রন্থিগুলো ফুলে যাওয়া।

পরীক্ষা
স্তন ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য নিচের পরীক্ষাগুলাে করা হয়।
১. ম্যামোগ্রাম
২. আলট্রাসনোগ্রাম
৩. এফএনএসি ( ফাইন নিডল অ্যাসপিরেশন সাইটোলজি )
৪. নিডল (কোর) বায়োপসি
৫. এক্সিসন বায়োপসি
৬. রক্ত পরীক্ষা।

এ ছাড়া ক্যানসার শরীরের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েছে কি না সেটা দেখার জন্যও কিছু পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষাগুলো হলো-
১. পেটের আলট্রাসনোগ্রাম
২. হাড়ের স্ক্যান
৩. সিটি স্ক্যান
৪. এমআরআই
৫. পিইটি স্ক্যান।

স্তন ক্যানসার প্রতিরোধের উপায়

পরিবর্তনযোগ্য রিস্ক ফ্যাক্টরগুলোর বিষয়ে সচেতন হওয়া এবং সেগুলো এড়িয়ে চলাই হলো স্তন ক্যানসার প্রতিরোধের প্রধান ধাপ। যেমন : পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, অধিক চর্বি ও মশলাযুক্ত খাবার কম খাওয়া, পরিশ্রমহীন জীবন পদ্ধতি পরিবর্তন করা ও নিয়মিত ব্যায়াম করা, অতিরিক্ত ওজন ঝেড়ে ফেলা, শিশুকে নিয়মিত স্তন্যদান, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা ইত্যাদি।

প্রাথমিক অবস্থায় স্তন ক্যানসার শনাক্ত করা গেলে এর নিরাময় সম্ভব। তাই ক্যানসার প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষংগ হলো প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগ শনাক্ত করা।
চল্লিশোর্ধ মহিলাদের বছরে একবার ম্যামোগ্রাম করানো উচিত। এতে অনেক ক্ষেত্রেই রোগ প্রাথমিক অবস্থাতেই ধরা পড়ে।

২০ থেকে ৪০ বছরের নারীদের তিন বছরে একবার অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে স্তন পরীক্ষা করা উচিত।

২০ বছর বয়স থেকে মেয়েদের নিয়মিত নিজের স্তন নিজেই পরীক্ষা করতে হবে। একে বলে সেল্ফ এক্সামিনেশন। এর সঠিক পদ্ধতিটি কোনো ডাক্তারের কাছ থেকে শিখে নিতে হবে।

চিকিৎসা
বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি স্তন ক্যনসারে ব্যবহৃত হয়। সার্জারি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি, টার্গেট থেরাপি, রেডিওথেরাপি। রোগের ধাপ অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি বেছে নেওয়া হয়। কখনো একক, কখনো সম্মিলিত চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। একবার ভালো হয়ে গেলে রোগ আবার ফিরে আসতে পারে। তাই চিকিৎসার পর নিয়মিত ফলোআপ করতে হয়।

সূচনায় ধরা পড়লে স্তন ক্যানসার সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। তাই সচেতনতাই হতে পারে এই প্রাণঘাতী রোগের একমাত্র রক্ষা কবচ।

লেখক : রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

সাতকাহন
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.