সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক
সোনারতরী শিশু-কিশোর সংঘ পরিচালিত ও এবিসি আর্লি লার্নিং অ্যান্ড ডে কেয়ার সেন্টার আয়োজিত দিনব্যাপী ‘আত্মবিশ্বাস উন্নয়ন’ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত ২১ জানুয়ারি, শনিবার, সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৬ টা পর্যন্ত মোট ২০ জন কিশোর-কিশোরী নিয়ে সারাদিনব্যাপী সেশনটি পরিচালনা করেন সোনারতরী-র প্রতিষ্ঠাতা, মনোবিজ্ঞানী ফারজানা ফাতেমা (রুমী)।
ওয়ার্কশপে বিভিন্ন মেমোরি টেস্ট, এক্সিকিউটিভ ফাংশন গেইমসের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার ব্যপারে আলোচনা করা হয়। দেখানো হয় কিছু মোটিভেশনাল ভিডিও এবং পাওয়ার পয়েন্ট প্রেসেন্টেশন। মধ্যাহ্ন ভোজের পর কিশোর-কিশোরীদের তিনটি ভাগে ভাগ করে পোস্টার প্রেসেন্টেশন করতে দেওয়া হয়, যার বিষয়বস্তু ছিল ‘সামাজিক যোগাযোগ’, ‘মনোযোগ বৃদ্ধি’, ‘আবেগ নিয়ন্ত্রণ’।
সফলভাবে শেষ হয়েছে সোনারতরী-র ৭টি ব্যাচ এবং সাথে আছে মোট ৮৩ জন কিশোর-কিশোরী সদস্য। অনুষ্ঠান শেষে মনোবিজ্ঞানী ফারজানা ফাতেমা (রুমী) বলেন, “কোভিড-১৯ চলাকালে শিশুরা যখন ঘরবন্দী তখন মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অনলাইনে গড়ে উঠেছে সোনারতরী। আর আজকে সবাই মিলে কখনো ২ জন, কখনো ৩ জন এভাবে বিভিন্ন দলগত কাজগুলো করেছে যা আসলে অনলাইনে সম্ভব নয়। তাই কিশোর বয়সে এরকম সামাজিক মিথস্ক্রিয়া ব্যক্তিত্ব বিকাশে অত্যন্ত জরুরি।
একজন কিশোর বয়সী শিশুর সামাজিক যোগাযোগ দক্ষতা তাকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তোলে। আমাদের সাথে একজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন কিশোরীও অংশ নিয়েছিল এবং এটা ছিল তার জীবনের প্রথম কোথাও একা একটি দিন কাটানো। পাপেটিং গেইমে সেও অন্যদের মতো নিয়ম মেনে কাজ করেছে। এতে অন্যান্য কিশোর-কিশোরীদের মাঝেও সহোযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি হতে দেখা গেছে।
অনুষ্ঠান শেষে শিশু- কিশোরদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেন এবিসি আর্লি লার্নিং এন্ড ডে কেয়ার সেন্টারের পরিচালক সোনিয়া ফারজানা আকরাম। প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট প্রফেসর ড. মো. মাহমুদুর রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন, সোনারতরী-র উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. মো. মাহমুদ ফারুকী। উপস্থিত ছিলেন চাইল্ড সাইকোলজিস্ট শামীমা সিরাজি সুমি, ড. আইরিন বিনতে আজাদ। ভলান্টিয়ার হিসেবে ছিলেন, আনোয়ারা বেগম, মাহফুজা আলী, সায়েম আহমেদ রিপন, সাবিনা ইয়াসমিন ও শারমিন ফেরদৌস।
অনুষ্ঠান শেষে ড. মাহমুদুর রাহমান বলেন, ‘আমরা যখন নিজে নিজে কোনো খেলা খেলি সেটি হলো প্লে। আর এই যে তোমরা আজকে প্রতিটি নিয়ম মেনে খেলছো এটা হলো গেইমস। যেমন: ফুটবল একটা গেইম। তোমরা আজকে এখান থেকে যা যা শিখে যাচ্ছো, তা ছড়িয়ে দিতে হবে পরিবারে, বন্ধুদের সঙ্গে, সমাজে যেনো তোমরা যখন বড় হবে তোমার কাছ থেকে সমাজের মানুষ উপকৃত হতে পারে।’
শিশু সাইকোলজিস্ট শামীমা সিরাজি বলেন, ‘এই খেলাগুলোতে আমাদের বুদ্ধি ও জ্ঞানীয় বিকাশ ঘটে। এটি আমাদের পরবর্তী জীবনকে আরো সুন্দর করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।’
সোনারতরী-র উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. মো. ফারকী বলেন, তাঁর অনেক পরিচয়ের মাঝে সোনারতরী-র উপদেষ্টা এই পরিচয়টি দিয়ে তিনি এখন স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। সোনারতরী একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। তাই তিনি এর অগ্রযাত্রায় সকলের সহোযোগিতা আশা ব্যক্ত করেন। কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে এরকম আয়োজনকে তিনি সাধুবাদ জানান।
‘চলো স্বপ্নের জাল বুনি’ এই স্লোগান নিয়ে ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময়ে অনলাইনে গড়ে উঠেছিল সোনারতরী শিশু-কিশোর সংঘ। এখানে শুধু সারা বাংলাদেশের বয়ঃসন্ধিকালিন (১০ থেকে ১৮ বছর) শিশুরাই নয়, দেশের বাইরের বাঙালি শিশুরা যুক্ত হয়ে অতিমারিতে তাদের জীবনযাত্রা, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলেছে। দেশের বাইরের বিশিষ্ট সম্মানিত অতিথিরাও ক্লাসে যুক্ত হয়ে কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
সোনারতরী-র অনলাইন ফ্রি এনরোলমেন্ট ‘Mental Health Wellbeing’ এর ক্লাসের বিষয়বস্তু:
১। আত্মবিশ্বাসী হই, ভালো স্পর্শ ও খারাপ স্পর্শ সম্পর্কে জানি।
২। মৌলিক আবেগ ও আত্মহত্যা প্রতিরোধ।
৩। মনোযোগী হই, মন শিথিলকরণ শিখি।
৪। যোগাযোগ দক্ষতা শিখি।
৫। নেতৃত্ব ও দল গঠন কৌশল শিখি।
৬। আমার স্বাস্থ্য সুরক্ষা জানি, সচেতন হই।
৭। চাপ মোকাবেলা ও রাগ নিয়ন্ত্রণ।
৮। নারী-পুরুষ সমতা ও আমার সামাজিক আচরণ জানি।
৯। মানসিক স্বাস্থ্যের প্রাথমিক চিকিৎসা জানি।
এছাড়াও অভিভাবকদের জন্য রয়েছে, ‘হেলদি প্যারেন্টিং’, ‘চাপ মোকাবেলা এবং রাগ নিয়ন্ত্রণ’ ওয়ার্কশপ।