খান আফিফা লুনা
শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে একহাত লম্বা ঘোমটা টেনে ছোট্ট মেয়েটার একদিন পরের বাড়ি যেতে হয়। কালের পরিক্রমায় সে সংসারের নানা রূপ আর রঙের সঙ্গে মিশে একরকম পটু হয়ে উঠে। দিনে দিনে বয়স বাড়ে। তার কোল জুড়ে আসে কাঙ্ক্ষিত শরীরের অংশ। সে মেয়েটি ‘মা’ হয়।
এভাবেই কেটে যায় দিন, মাস, বছর। জীবন যুদ্ধে এগিয়ে চলতে চলতেই একটা সাধারণ ঘরকে সে বাড়ি বানিয়ে দেয়। দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রমে আর দায়িত্বের বোঝা টানতে টানতে সংসারের অপরিহার্য একটা পদার্থে রূপ নেয়।
সবার কখন কী প্রয়োজন, সেটা মুখ্য বিবেচনা করে নিজের ছোট-খাট শখের জলাঞ্জলি দিয়ে যায়। জীবনসঙ্গী আর সন্তানের মঙ্গল কামনায় কাটিয়ে দেয় কত শত প্রহর। কিন্তু এভাবে চাবির গোছা গুছিয়ে রাখতে গিয়ে অনেক সময় নিজের কথা ভুলে যায়। পরিবারের সদস্যদের একটু সহানুভূতিতে সে ফিরে পায় আস্থা।
যার হাত ধরে জীবন চলার পথটা শুরু, সেও একসময় তাকে একাকী ফেলে চলে যায় অন্তিম যাত্রায়। বুক ভেঙে গেলেও মুখে তা প্রকাশ করে না। সন্তানের জন্য নিজেকে সামলে আবার নতুন করে বাঁচতে হয়। শুরু হয় নতুন আরেক অধ্যায়। শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধে।
একসময় কর্তৃত্বে পরিবর্তন আসে। চেনা মুখগুলো অচেনা হয়ে যায়। নিজ হাতে গড়া সংসারে সে নিজেই হয়ে পড়ে অপাংতেয়। কাছের মানুষের অবহেলা সে মুখ বুজে সহ্য করে। ধীরে ধীরে বাতির তেল পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যায়। তারপর একদিন হঠাৎ দপ্ করে নিভে যায়। সন্তান হয় মা হারা।
এতক্ষণ বলছিলাম, একজন সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের অতি সাধারণ মায়ের কথা।আসলে সব মায়েরাই সাধারণ। সবার একটাই চাওয়া, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’।
চলো, আজ একটু মায়ের পাশে কাটাই, মা’কে বলি তোমাকে ভালোবাসি। আমাদের যাদের মা এখনো মাথার উপর ছায়া দিয়ে চলছে তারা নিজেকে সৌভাগ্যবানদের একজন ভাবি। এই জগৎ দেখালো যে মানুষটা, নয় মাস নিজের শরীরের সঙ্গে জুড়ে; তার জন্য প্রতিদিন তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদি, হাসি, সেলফি তুলি। দেখবে মায়ের দোয়ার যাদুতে তুমি পৌঁছে যাবে তোমার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।
লেখক :
লেখক, প্রকাশক
(মেঘদূত প্রকাশন)
বিজনেস পার্টনার
ক্যামেক্স ইন্টারন্যাশনাল।