Wednesday, November 19, 2025
spot_img
Homeঅন্যান্য'সমাজের চোখ বাঁকা, তাই ভালো বিষয়ও বাঁকা করে দেখে'

‘সমাজের চোখ বাঁকা, তাই ভালো বিষয়ও বাঁকা করে দেখে’

সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক
“পূজার সময় পাড়ার সব মেয়েরা আমার কাছে মেহেদি পরতে আসতো। সারারাত ধরে মেহেদি পরাতাম। মা বলতেন, ‘ ওদের কাছ থেকে পাঁচ/ ১০ টাকা করে চাইলেও তো কিছু আয় হয়। নিজেকে একটু একটু করে স্বাবলম্বী করতে পারো।’ মা গৃহীনি ছিলেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলতে হতো তাঁকে। মায়ের জীবন দেখে এবং তাঁর কথা শুনে মনে হয়েছে আমাকে স্বাবলম্বী হতে হবে। সেভাবেই কাজ করে এগিয়ে যাই।

ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর বিউটিফিকেশনের কাজ শিখে নিজেই একটি পার্লার খুলি। সেখান থেকে ভালো আয় শুরু হয়”- কথাগুলো বলছিলেন ঝিনাইদহের মেয়ে চয়নিকা মজুমদার।

চয়নিকা মজুমদার একজন কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার। এর আগে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে বিউটিশিয়ান প্রশিক্ষক ছিলেন। বিউটি আর্টিস্ট হিসেবে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে ২০১৮ সালে উজ্জ্বলা থেকে কোর্স করেন। বর্তমানে পার্লার থেকে তাঁর মাসিক আয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা।

একবার মমতাজ মেহেদি আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে উজ্জ্বলার চেয়ারম্যান আদিত্য সোম দাদা এবং উজ্জ্বলার সহকারী প্রতিষ্ঠাতা আফরোজা পারভীন আপা ঝিনাইদহে আসেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছিলো নিজেকে দক্ষ বিউটি আর্টিস্ট করতে এখানে অবশ্যই কোর্স করবো- জানান চয়নিকা মজুমদার।

বিউটি আর্টিস্ট হতে গিয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতা পার করতে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা, ভাই চাইতেন না পার্লারের কাজ শিখি। এটাকে খুব খারাপ চোখে দেখতেন।অনেক পারিবারিক অশান্তি গেছে। বড় ভাই একদিন খুব মেরেছিলেন। তবে এখন সবাই উৎসাহ দেয়। আমার স্বামী উত্তম কুমার রায়, একটি কলেজের শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন। তিনিও অনেক উৎসাহ দেয়। শ্বশুর বাড়ির লোকেদের কাছ থেকেও এ কাজটি করতে কোনো বাধা পাইনি। আসলে সমাজের চোখ বাঁকা, তাই ভালো বিষয়ও বাঁকা করেই দেখে।’

উজ্জ্বলায় ট্রেনিং করার সময় অন্য মেয়েদের জীবনের গল্প শুনতেন চয়নিকা মজুমদার। গল্পগুলো শুনে মনে হতো মানুষ অনেক কষ্ট করে। সেখানে তাঁর কষ্ট সামান্য। ‘উজ্জ্বলা আমাকে শক্তিশালী হতে শিখিয়েছে। এখান থেকে বিউটিফিকেশনের অনেক খুঁটিনাঁটি কৌশল শিখেছি। পাশাপাশি কীভাবে ব্যবসা দাঁড় করাতে হয় সেই বিষয়টিও জেনেছি। শুরুর দিকে পার্লারের আয় ১০/১৫ হাজার টাকা ছিলো। এখন ডাবল।’ – বলছিলেন তিনি।

নিজেকে স্বাবলম্বী করতে পারলে কে কী বললো তাতে কিছু যায় আসে না মন্তব্য করে চয়নিকা বলেন,’অনেকেই প্রশ্ন করে আপনার স্বামী কী করেন? কিন্তু প্রথমে প্রশ্নটা হওয়া উচিত আপনি কী করেন? আমার স্বামীর পরিচয়ে আমি পরিচিত হবো না। নিজের পরিচয়ে পরিচিত হতে হবে। এটাই ক্রেডিট।’

ভবিষ্যতে একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চান চয়নিকা মজুমদার। পার্লারকে আরো বড় করার ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেন, ‘নিজেকে অনেক শক্তিশালী করতে চাই। পাশাপাশি সবাইকে যতটুকু পারি সাহায্য করবো।’

বি : দ্র : বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে উজ্জ্বলা লিমিটেড। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক পর্ব চলছে। এই পর্বটি ছিলো ১৮ তম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

সাতকাহন
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.