সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক
২০০৪ সালে মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায় নারায়ণগঞ্জ জেলার, সোনারগাঁও উপজেলার, জামপুর ইউনিয়নের, পেরাব বাজার গ্রামে। সে সময় আশেপাশে কোনো পার্লারই ছিল না। ৩০ টাকার আই ভ্রু প্লাকের জন্যও হয়তো ১০০ টাকা খরচ করে গাড়ি ভাড়া দিয়ে পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে অন্য জায়গায় যেতে হতো।
এ সময় মেয়েটি ভাবলো, নিজেই পার্লারের কাজ শিখে নিলে কেমন হয়! এতে নিজের কাজও যেমন হবে, তেমনি আশেপাশের মানুষও সুবিধা পাবে। যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। বিউটিফিকেশনের কাজ শেখা শুরু করলো সে।
তবে প্রথম দিকে যে জায়গায় কাজ শিখেছিল, সেখানে তেমন ভালোভাবে শিখতে পারেনি। পরে ফেসবুকের মাধ্যমে উজ্জ্বলার অ্যাড দেখে প্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তি হয়। বর্তমানে একটি স্যালনের কর্ণধার সে। পার্লারের সব খরচ বাদ দিয়েও প্রতি মাসে জমা হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
যার কথা বলছি, তিনি নারী উদ্যোক্তা তানিয়া আক্তার জুলি। ২০১৮ সালে উজ্জ্বলা থেকে ‘সেরা উদ্যোক্তা’ হিসেবে অ্যাওয়ার্ড পান এই নারী। তার মুখেই শুনবো, নিজের প্রতিষ্ঠার পেছনের গল্প।
সফল উদ্যোক্তা হতে ধৈর্য ধরতে হয়
উজ্জ্বলা থেকে প্রশিক্ষণ নিই ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত। প্রথম দিকে বাসার বারান্দায় একটি চেয়ার আর আয়না বসিয়ে পার্লার শুরু করি। তবে বর্তমানে এটি বেশ বড় করা হয়েছে। শহরের বড় পার্লারের মতোই এর ডেকোরেশন। আমি পার্লারের টাকাতেই ধীরে ধীরে ছোট প্রতিষ্ঠানটিকে বড় করি। কারো কাছ থেকে কোনো সাহায্য নিইনি। নিজের কাজকে ভালোবাসেছি সবসময়। আর কঠোর পরিশ্রম তো ছিলই। এই জন্যই হয়তো পেরেছি।
রমজান মাস এলো, এখনো পর্যন্ত পার্লারে একটি আই ভ্রু প্লাকের কাজও আসেনি। এই রকম পরিস্থিতিতে হতাশ হই না। আসলে ব্যবসা মানেই, চড়াই-উৎড়াই। এর মধ্যেই লেগে থাকতে হয়। সফল উদ্যোক্তা হতে ধৈর্য ধরাই লাগে। এর বিকল্প নেই। বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠানে তিনজন মেয়ে নিয়মিত কাজ করে। তবে কাজের পরিমাণ বাড়লে ফ্রিলেন্সার হিসেবে আরো মেয়ে নিতে হয়।
উজ্জ্বলা মেকআপের বেসিকটা খুব ভালো শেখায়
উজ্জ্বলায় প্রথম কোর্স করি ব্রাইডাল মেকআপের ওপর। তবে কোর্স করতে গিয়ে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। সব যেন মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, মেকআপের প্রাথমিক অনেক বিষয় জানি না। আমার আগের শেখায় ঘাটতি রয়ে গেছে। এরপর এখানকার বেসিক কোর্সে ভর্তি হই। ধীরে ধীরে সব কোর্স করি। উজ্জ্বলা বেসকিটা খুব ভালো শেখায়। আর অ্যাডভান্স কোর্সগুলোতে ভালো শেখায়-ই।
নারায়নগঞ্জে উজ্জ্বলার প্রথম সেমিনার আমি অ্যারেঞ্জ করেছিলাম। এখনো নারায়নগঞ্জে উজ্জ্বলার প্রশিক্ষণ হলে চলে যাই। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সবসময় ছিলাম ও থাকবো- এই আশা করি।
ঘুমের আগে যখন দেখি সন্তান ও পার্লারের কাজ সুন্দরভাবে সামলাতে পেরেছি, তখন ভালো লাগে। কীভাবে সব সামলে নিজের কাজটা করা যায়, নিজের কাজের জন্য সময় বের করতে হয়- সেটিও উজ্জ্বলার কাছ থেকেই শিখেছি।
ভবিষ্যতে আরো কয়েকটি পার্লার খুলতে চাই
আমার কাজের ক্ষেত্রে স্বামী ও পরিবার সবসময় সহযোগিতা করেছে। আমার প্রতিষ্ঠার পেছনে স্বামীর অবদান অনেক। নারায়নগঞ্জ থেকে তিনি উজ্জ্বলায় ক্লাস করাতে ঢাকায় নিয়ে যেতো। এখন তো আমার একটি স্যালুন রয়েছে। ভবিষ্যতে আরো কয়েকটা স্যালুন চালু করার ইচ্ছা রয়েছে।
বি : দ্র : বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে উজ্জ্বলা লিমিটেড। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক পর্ব চলছে। এই পর্বটি ছিলো ৫৯তম। উজ্জ্বলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন :
https://www.facebook.com/UjjwalaBD
https://www.instagram.com/UjjwalaBD/
ফোন : ০১৩২৪৭৩৪১৫৭