শাশ্বতী মাথিন
উজ্জ্বলা লিমিটেড, বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। নারীকে যোগ্য করে তুলতে অনলাইন ও অফলাইন ক্লাসের মাধ্যমে বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিংয়ের সব খুঁটিনাটি শেখানো হয় এখানে। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছে এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারীর সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক বিশেষ আয়োজনের আজ রইল তৃতীয় পর্ব। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাশ্বতী মাথিন।
পর্ব ৩ : মোহসেনা মুন্নি
গরিবের মেয়ে, দেখতে আহামরি সুন্দর নন, তবুও কেন স্বামী এত সহযোগিতা করে- এ জন্য শ্বশুরবাড়ির ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল মেয়েটিকে। তবুও থেমে থাকেননি। জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সায়েন্সে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেছেন। উজ্জ্বলাতে মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন দীর্ঘদিন। পাশাপাশি উজ্জ্বলার ফ্যাকাল্টি হয়ে কাজ করেছেন উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। ৬০ জন নারী-পুরুষকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। কক্সবাজার, উখিয়া, টেকনাফ ও নীলাতে পার্লারের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ৮৪ নারীকে প্রশিক্ষণ দেন। বলেন, ‘শ্বশুরবাড়িতে প্রচুর নির্যাতনের শিকার হয়েছি। কেবল মানসিক নয়, শারীরিক নির্যাতনেরও শিকার হতে হয়েছে। পরীক্ষার আগের দিন শ্বশুরবাড়িতে একগাদা লতি দেওয়া হয় বাছার জন্য। যেন পড়তে না পারি, পরীক্ষা ভালো না হয়। এখন মনে হয়, কত বিভীষিকাময় জীবন পার করেছি! সেসব পার করে আমি যে মোহসেনা মুন্নি হয়ে উঠেছি, তা উজ্জ্বলার অবদান।’
উজ্জ্বলাতে এসে নিজেকে তৈরি করতে পারব, এই আত্মবিশ্বাস ছিল জানিয়ে মোহসেনা মুন্নি বলেন, ‘উজ্জ্বলাতে প্রশিক্ষণ নিতে এসেছিলাম ২০২০ সালের ৮ মার্চ। বিউটিফিকেশনের সম্পূর্ণ কোর্স করেছি। যত অ্যাডভান্স কোর্স ছিল, করেছি। উজ্জ্বলা আমাকে মানসিকভাবে দৃঢ় হতে সাহায্য করেছে। এখন আমার মনে হয়, আমি যেকোনো ধরনের লড়াই করতে পারব।’
‘আমার দুটো ব্যবসা রয়েছে। পার্লার রয়েছে। অর্গানিক পণ্য উৎপাদন করি। মাসে লাখ খানেক টাকা আয় হয় দুটো ব্যবসা মিলে। অর্গানিক পণ্যের মধ্যে রয়েছে নারকেল তেল, ফেসপ্যাক, বডি প্যাক, মুলতানি মাটি, আমলকী হেয়ার প্যাক। নিজেই তৈরি করে বিক্রি করি। পার্লারে দুজন মেয়ে কাজ করে। আর অর্গানিক পণ্য তৈরির কারখানায় আরও কয়েকজন কাজ করছে’ বলে জানান তিনি।
উজ্জ্বলাতে এসে শিখেছি একা নয়, আরও পাঁচজনকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উজ্জ্বলা কেবল প্রশিক্ষণ দিয়ে ছেড়ে দেয় না; কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে, পথটাও দেখায়। এখন আমার কাছে কেউ ব্যবসার পরামর্শ নিতে এলে খুব ভালোভাবে দিতে পারি। হয়তো কারও পুঁজি নেই। তাকে পুরোনো ১০টি শাড়ি দিলাম বিক্রি করার জন্য। বললাম, এ শাড়ি বিক্রি করে যে টাকা পাবে, সেটা তোমার পুঁজি। এটা দিয়ে কাজ করবে। কারণ, এখন পুরোনো জিনিসের বিক্রির বাজারও ভালো। আবার হয়তো আরেকজন এসে বলল, তার চার সন্তান। কাজ করতে পারে না। তাকে হয়তো বললাম, একটি ডে-কেয়ার সেন্টার তৈরি করো। তোমার বাচ্চাসহ আরও বাচ্চাদের রাখো। এতে বাইরে গিয়ে কাজ করতে হবে না। ঘরে বসেই আয় হবে। এভাবে যাকে যেভাবে সাহায্য করা যায়, সেটি করি। আর এই মনোবলটি পেয়েছি উজ্জ্বলার সহপ্রতিষ্ঠাতা আফরোজা পারভীন ম্যাডামের কাছ থেকে। তিনি আমাদের পথিকৃৎ।’
যখন প্রশিক্ষণ দিই অধিকাংশের কাছে মোহসেনা মুন্নি নই, আমি তখন ‘উজ্জ্বলা আপা’। এ বিষয়টি ভীষণ ভালো লাগায়। আমি মানুষের কাছে একজন ‘উজ্জ্বলা’ হিসেবে পরিচিত। এটা আমাকে গর্বিত করে। ভবিষ্যতে এভাবেই কাজ করে যেতে চাই। নিজের পাশাপাশি আরও ১০ জনকে স্বাবলম্বী করতে সাহায্য করব, এটাই আশা।