ডা. মো. ফরিদ রায়হান
সকালে ঘুম থেকে উঠেছেন। হঠাৎই খেয়াল করলেন ঘাড়ে ব্যথা করছে। ব্যথাটা এতোই তীব্র যে নড়তে পারছেন না। শীতে অনেকেই এই সমস্যায় ভোগে।
সাধারণত শীতে আলসেমির জন্য কায়িক পরিশ্রম কম করা হয়। এ কারণে পেশিতে আড়ষ্ঠতা আসে। এ থেকে ঘাড়ে ব্যথা করতে পারে। আবার রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিসের রোগীদের অনেক সময় শীতে এই সমস্যা হতে দেখা যায়। গোসলের সময় ঠান্ডা পানি ব্যবহার করলেও ঘাড় ব্যথা হতে পারে।
এ ছাড়াও বিভিন্ন কারণে ঘাড় ব্যথা হয়। কম বয়সীদের সাধারণত মাসকুলোসকেলেটাল পেইনের কারণে এ সমস্যা দেখা যায়। কোনো ভারী জিনিস তোলা, অস্বাভাবিক অঙ্গভঙ্গিতে ঘুমানো, দুর্ঘটনার কারণে ঘাড় ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে ভারী স্কুলের ব্যাগ বহনের কারণেও ঘাড় ব্যথা হয়।
তবে চল্লিশোর্ব্ধ মানুষ এ সমস্যায় বেশি ভোগে। এ সময় মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয় হয়ে ক্যালসিয়াম জমে কাঁটার মতো বাড়তে থাকে। একে স্পোন্ডালাইসিস বলা হয়। এতে স্নায়ু রজ্জুতে চাপ পড়ে। ঘাড়ে ব্যথা হাতে চলে গিয়ে হাত-পা অবশের মতো লাগতে পারে। এ থেকে অনেক সময় প্যারালাইসিস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। সার্ভাইক্যাল ডিস্ক প্রোলাপস, স্পাইনাল টিবি, স্পাইনাল ফ্র্যাকচার ইত্যাদি ঘাড় ব্যথার জটিল কারণ।
প্রতিরোধের উপায়
# ঘাড় ব্যথা প্রতিরোধে নিচু বালিশ ব্যবহার করুন এবং শক্ত বিছানায় ঘুমান। উপুর হয়ে ঘুমাবেন না।
# বসা, হাঁটা, দাঁড়ানো ইত্যাদি সময় আপনার ঘাড়ের অঙ্গ বিন্যাস সোজা রাখার চেষ্টা করুন।
# বর্তমানের ব্যস্ত সময় ও যানজটের কারণে অনেকেরই গাড়িতে ঘুমের অভ্যাস রয়েছে। এমন হলে অবশ্যই ঘাড়ে সার্ভাইক্যাল কলার ব্যবহার করুন।
# শীতের কারণে ব্যথা হলে ঘাড় ও মাথায় কানটুপি, মাফলার ইত্যাদি ব্যবহার করুন। গোসলের সময় ঠান্ডা পানি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। কায়িক পরিশ্রম করুন।
# বেশি সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করতে হবে।
# অনেক সময় এ ধরনের রোগীদের ফিজিওথেরাপি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
# জটিল কোনো রোগের কারণে ব্যথা হলে ঘাড়ের অস্ত্রোপচার করতে হতে পারে। এক্ষেত্রে ACDF করা হয়।
লেখক : নিউরো ও স্পাইনাল সার্জন
কনসালট্যান্ট, নিউরোসার্জারি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়