Wednesday, December 11, 2024
spot_img
Homeমন জানালামনের যত্নশীতকালীন বিষণ্ণতা : লক্ষণ, কারণ ও করণীয়

শীতকালীন বিষণ্ণতা : লক্ষণ, কারণ ও করণীয়

ফারজানা ফাতেমা (রুমী)

শীতকাল হলো পিঠাপুলি আয়োজন আর উৎসবে মাতোয়ারা হবার সময়। তবে আমরা কি জানি, শীতে ঝড়া পাতার মতো যেমন আমাদের ত্বক খসখসে হয়ে যায় তেমনি আমাদের শীতকালীন বিষণ্ণতাও হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে যে, কোনো বিষয়ে মন খারাপ হলেই তা বিষণ্ণতা নয়।

তাহলে জেনে নিই এই ঋতুভিত্তিক বিষণ্ণতা আসলে কি?

সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার (SAD) হলাে এক ধরনের বিষণ্ণতা। এটি ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত। এতে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষের উপসর্গগুলো শরতকালে শুরু হয় এবং শীতের মাসগুলোতে চলতে থাকে। কোনো কাজে আনন্দ না পাওয়া, ঘরে-বাইরে কোনো কিছু উপভোগ করতে না পারা, খেতে বা ঘুমাতে ভালো না লাগা, শরীরের শক্তি কমে যাওয়া, বদমেজাজি হয়ে উঠা, সামাজিক দূরত্ব তৈরি করা, স্কুল বা কাজের সমস্যা, নেশা করার প্রবণতা ইত্যাদি হতে পারে।

পাশাপাশি অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাধি যেমন- উদ্বেগ বা খাওয়ার ব্যাধি, আত্মঘাতী চিন্তা বা আচরণ ইত্যাদিও প্রকাশ পায়। আবার এই উপসর্গগুলো প্রায়ই বসন্ত ও গ্রীষ্মের মাসগুলোতে দূর হয়ে যায়। এই বাৎসরিক অনুভূতিকে ‘Winter Blues’ বলা হয়।

এর নির্দিষ্ট কারণ অজানা। তবে কার্যকরী কিছু কারণ হলো-

১। জৈবিক ঘড়ি (Circadian rhythm )
শীতকালে সূর্যের আলো কমে যায়। এতে শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ির নিয়ম ব্যাহত হতে পারে এবং বিষণ্ণতার অনুভূতির দিকে যেতে পারে।

২। সেরোটোনিনের মাত্রা
সেরোটোনিন হরমোন, মস্তিষ্কের রাসায়নিক নিউরোট্রান্সমিটার। এটি মন-মেজাজকে প্রভাবিত করে। এটি ‘হ্যাপি হরমোন’ নামেও পরিচিত। সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে ত্বকে ভিটামিন-ডি তৈরি হয়। ভিটামিন-ডি সেরোটোনিন কার্যকলাপ বাড়াতে সাহায্য করে। তাই কম সূর্যালোক, খাবার ও অন্যান্য উৎস থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন-ডি না পাওয়ার কারণে শরীরে এর ঘাটতি হতে পারে। এটি বিষণ্ণতার কারণ।

৩। মেলাটোনিনের মাত্রা
ঋতু পরিবর্তন শরীরের মেলাটোনিনের স্তরের ভারসাম্যকে ব্যাহত করতে পারে। এটি ঘুমের ধরণ ও মেজাজে প্রভাব ফেলে।

৪। নারী-পুরুষ ভেদে
এটি পুরুষদের তুলনায় নারীর মাঝে প্রায়শই দেখা যায়। প্রবীণ, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অল্প বয়সীদের মাঝে এই সমস্যা বেশি হয়।

৫। পূর্ব ইতিহাস
যাদের আগে থেকে বিষণ্ণতা বা বাইপোলার ডিসঅর্ডারের লক্ষণগুলো রয়েছে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ঋতু অনুসারে আরও খারাপ হতে পারে।

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

করণীয়

১। সারা বছর ধরে আপনার মেজাজ ঠিক রাখা এবং নিজেকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার মতো কিছু পদক্ষেপ নিন। দৈনিক রুটিন মেনে চলুন এবং নিয়মের মধ্যে থাকার চেষ্টা করুন।

২। এই সময় কুয়াশা পড়ে এবং দিন ছোট হয়। তাই স্বাভাবিকভাবে প্রকৃতিতে একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন বিষয় তৈরি হয়। তাই ঘরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করুন। আলো মন ভালো করতে সাহায্য করবে। পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরুন এবং প্রকৃতির সান্নিধ্যে থেকে ডিপ ব্রিদিং (গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া) অনুশীলন করুন।

৩। অনর্থক লেপ মুরি দিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস বাদ দিন। এর চেয়ে কিছু সৃজনশীল কাজ করুন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ বাড়ানো, ভ্রমণে যাওয়া ইত্যাদি কাজের পরিকল্পনা আগেই করে রাখতে পারেন। ঠান্ডায় বের হতে না চাইলে ঘরে বসে বই পড়ুন, ডাইরি লিখুন অথবা বিনোদনের জন্য নাটক, সিনেমা দেখুন।

৪। শীতকালে পানির পিপাসা তেমন হয় না তাই পানি পানের তাগিদ কম থাকে। পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ, ভিটামিন-সি, শাক-সবজি, ফলমূল, ভেষজ চা খেয়ে নিজেকে চাঙা রাখতে চেষ্টা করতে পারেন। সঙ্গে হালকা ব্যায়াম করুন। এ ছাড়া ব্যাডমিন্টন, ফুটবল ইত্যাদি খেলাধুলাও করা যেতে পারে।

৫। SAD এর চিকিৎসার মধ্যে ফটোথেরাপি, সাইকোথেরাপি ও ওষুধ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। সাধারণত শীতকালে লক্ষণগুলো শুরু হওয়ার আগে চিকিৎসা শুরু করা ভালো। মনোচিকিৎসা ও মনোসেবা প্রয়োজনে দুটোই নিতে হবে।

যদিও আমাদের দেশে শীত প্রধান দেশগুলোর মতো তুষারপাত হয় না এবং একটানা সূর্যের দেখা নেই এমনটা হয় না, তারপরও সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডারের উপসর্গগুলো দেখা দিলে গুরুত্ব সহকারে নিন। অন্যান্য বিষণ্ণতার মতো, এই সমস্যাটিও আরও খারাপ হতে পারে চিকিৎসা না নেওয়া হলে।

লেখক : সাইকোলজিস্ট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments