অনন্যা চৈতী
মুখে চকোলেটের দাগ নিয়ে শিশুরা যখন মায়ের কাছে এসে ভয়ে বলে, ‘চকলেট খাইনি।’ তখন ওদের আরও আদুরে লাগে। তবে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই মিথ্যেই যখন বড় সমস্যায় পরিণত হয়, তখন সত্যিই চিন্তার বিষয়! মিথ্যা বলার অভ্যাস একজন মানুষের ব্যক্তিত্বে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে; জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
শিশুকে সত্যবাদী করে গড়ে উঠানোর অভ্যাস করানো উচিৎ ছোটবেলা থেকেই। শিশুকে সত্যবাদী করে গড়ে তোলার কিছু উপায় জানিয়েছে জীবনধারাবিষয়ক ওয়েবসাইট ফেমিনা।
১. শিশুরা অনুকরণ প্রিয়। প্রায় সব শিশুই তার মা-বাবার আচরণকে গভীরভাবে অনুসরণ করে থাকে। তাই সবার আগে মা-বাবাকে সবসময় সত্য কথা বলার অভ্যাস করতে হবে।
২. গল্পের ছলে শিশুকে বোঝানো যেতে পারে, মিথ্যা বলা ঠিক নয়। রূপকথা, উপকথার এমন গল্প তাকে শোনানো যেতে পারে, যেখান থেকে সে ভালো কাজ ও মন্দ কাজের পার্থক্য শিখবে। গবেষণায় দেখা গেছে, মিথ্যা বলার কারণে শাস্তি পাওয়া গল্পের চাইতে সৎ কাজের পুরষ্কার পাওয়া গল্প শিশুকে ভালো কাজ শেখাতে অনেক বেশি কার্যকর।
৩. শিশু মিথ্যা বললে অভিভাবকরা অনেক সময় শাস্তি দেন। মূলত এই শাস্তি কোনো কাজেই আসে না। প্রথমদিকে ভয় পেলেও পরে শিশুটি আবার সেই কাজটিই করতে থাকে। সে যদি কোনো অন্যায় লুকাতে বানিয়ে গল্প বলে, তবে প্রথমেই আশ্বাস দিন তাকে কোনো শাস্তি দেয়া হবে না। সে সত্যটা স্বীকার করলে তার প্রশংসা করুন। এবং তাকে বুঝিয়ে বলুন মিথ্যা বলা থেকে সত্য স্বীকার করে নেয়াটাই সবচেয়ে ভালো।
৪. মা-বাবার প্রথম ও প্রধান কাজ হলো, সন্তানের মন থেকে ভয় দূর করা। তাকে সবসময় বোঝাতে হবে আপনি তাকে সবথেকে বেশি ভালোবাসেন; যেকোনো পরিস্থিতিতে আপনি তার পাশে আছেন। শিশুকে আশ্বস্ত করতে হবে সত্য বলার জন্য তাকে কোন শাস্তি দেয়া হবে না। বরং তার সত্য বলাটাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।
৫. অনেকসময় বাবা-মা শিশু কী করবে, কী করবে না সেটা ঠিক করে দেন। তাদের মতামত বারবার শিশুর ওপর চাপিয়ে দেন। কোন পোশাকটি পরবে, টেলিভিশনে কোন প্রোগ্রাম দেখবে- সবই ঠিক করেন তারা। এই কাজটি না করে, শিশুকে পছন্দ করার সুযোগ দিন। এতে সে তার মত প্রকাশের সুযোগ পাবে। লুকিয়ে কিছু করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করবে না।
এরপরও শিশুর মিথ্যা বলার প্রবণতা থাকলে তার কাছে জানতে চান কী কারণে সে মিথ্যা বলছে। কথা বলে তার মানসিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে একজন শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে পারেন।