ডা. আবু সাঈদ শিমুল
শিশুর কতটুকু পানি প্রয়োজন তা আসলে নির্ভর করে তার অবস্থা, ওজন ও বয়সের ওপর। জ্বর বা অসুখের সময় পানির বেশি প্রয়োজন পড়ে। বেশি গরম পড়লে, খেলাধুলা করলে বেশি পানি দিতে হবে। ডায়রিয়াতেও প্রয়োজন বেশি পানি। অপরদিকে শরীরে পানি জমলে বা ইডিমা হলে পানি পান কমিয়ে দিতে হয়।
শিশুর প্রতিদিনের পানির চাহিদা
# বয়স সাত থেকে ১২ মাসের ভেতর হলে দৈনিক আধা থেকে পৌনে এক লিটার পানি পান করতে হবে।
# এক থেকে তিন বছরের শিশুর জন্য প্রতিদিন এক থেকে সোয়া এক লিটার পানি প্রয়োজন।
# চার থেকে আট বছরের শিশুর লাগবে দেড় থেকে দুই লিটার পানি।
# নয় থেকে ১৬ বছর বয়সে দুই থেকে আড়াই লিটার হলেই চলবে।
তবে এই পরিমাণটা হলো সারাদিন তরল বা তরল জাতীয় খাবারের মোট জলীয় অংশের। অর্থাৎ এটা যে শুধু পানিই হতে হবে এমন নয়। অন্যান্য তরল খাবার হলেও চলবে।
তাই আপনার পাঁচ বয়সের শিশুকে একেবারে দেড় লিটার পানি খাওয়াতে হবে, তা কিন্তু নয়। শিশু যে প্রতিদিন গরুর দুধ খায় সেই দুধেও শতকরা ৮৭ ভাগই জলীয় অংশ। দইয়ে ৮৯ শতাংশ, আনারসে ৮৮ শতাংশ, কলায় ৭০ শতাংশ, আমে ৮১ শতাংশ, পটলে ৯৩ শতাংশ পানি থাকে। সুতরাং পানি খাওয়ানো হচ্ছে না, এটা ভেবে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।
তবে পানির অভাব পূরণের জন্য কোল্ড ড্রিঙ্কস বা বাইরের পেকেটজাত জুস খাওয়ানো যাবে না। কোনো শিশুর পানি গ্রহণ কম হচ্ছে কি না তা প্রাথমিকভাবে বুঝবেন তার প্রস্রাব দেখে। শিশু প্রতিদিন যে পরিমাণ প্রস্রাব করতো পানি শূন্যতা হলে তার চেয়ে কম করবে। পানি শূন্যতার অন্যান্য লক্ষণ হলো বাচ্চা খুব অস্থির থাকবে, চোখ ভিতর দিকে ঢুকে যাবে, জিহ্বা শুকিয়ে যাবে, নাড়ি বা পালস দুর্বল কিন্তু দ্রুত হবে।
ছয় মাসের পর থেকেই কিন্তু শিশুকে বাড়তি পানি খাওয়াতে হবে। এক বছর বয়সে শিশুরা সাধারণ নিজে নিজে পানি খেতে পারে। খিচুড়ি খাওয়ানোর পর এ সময় প্লাস্টিক বা ম্যালমাইনের গ্লাসে পানি দিয়ে দিন। তাকে রঙিন আকর্ষণীয় মেলামাইনের বা স্টিলের মগ বা গ্লাসে পানি ঢেলে ধীরে ধীরে পানি খেতে শেখান। দেখবেন, পরে নিজে থেকেই পানি পান করবে।
মনে রাখতে হবে ডায়রিয়া হলে চিকিৎসকের পরামর্শে দৈনিক চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণে স্যালাইন ও পানি খেতে হবে। শিশুর যেকোনো অসুস্থতাতেও বেশি পরিমাণে পানি খাওয়াতে ভুলবেন না যেন।