ডা. নাজনিন উম্মে জাকিয়া
শিশুর ঘুম নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়, এমন মা-বাবা কমই পাওয়া যাবে। সুস্বাস্থ্যের জন্য ঘুম অপরিহার্য। এটি ঠিকঠাকমতো না হলে স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে কিছু বিষয়ে সতর্ক হলে শিশুকে একটি ভালো ঘুম উপহার দিতে পারবেন।
অনেক শিশু দিনে বেশি ঘুমায় আর রাত প্রায় নির্ঘুম কাটায়। এসব শিশুকে নিয়ে বাবা-মায়ের বিড়ম্বনা একটু বেশিই। কারণ, তাদের সঙ্গে সঙ্গে বাবা-মায়েরও প্রায় নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। মূলত, নবজাতকেরই এই সমস্যাটি বেশি হয়। কারণ, শিশু দীর্ঘদিন মাতৃগর্ভে থাকার কারণে পৃথিবীর আলোতে এসে দিন-রাত বুঝতে পারে না। তা ছাড়া শিশুর মগজের যে অংশ দিন ও রাত বুঝতে পারে তা পরিণত হতেও সময় লাগে। আর এ কারণেই মূলত নির্ঘুম রাত কাটায় নবজাতক। এভাবে চলে শিশুর বেশ কয়েকটা মাস। সব শিশুই প্রয়োজনমতো ঘুমিয়ে নেয়। তাই সে যতক্ষণ ঘুমাতে চায়, ঘুমাতে দিন।
শরীর খারাপ থাকলে, বিশেষ করে শিশুর পেটে ব্যথা হলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। পেটের ব্যথা বা ইনফেনটাইল কলিকের শিকার শিশুরা পেটে ব্যথার কারণে সারা রাত কান্নাকাটি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সিমেথিকন ড্রপ বেশি উপযোগী। তবে কখনই গ্রাইপ ওয়াটার নয়।
যাদের শিশু রাতে ঘুমায় না আর সারাদিন ঘুমিয়ে কাটায় তাদের বিড়ম্বনা সবচেয়ে বেশি। কিছু পদ্ধতি মেনে চললে শিশু দিন ও রাতের পার্থক্য দ্রুত বুঝতে পেরে দিনে জেগে থেকে রাতে ঘুমাতে শুরু করে।
# ঘরে উজ্জ্বল আলো জ্বালিয়ে রাখুন দিনের বেলায়। পরস্পরের সঙ্গে উঁচুস্বরে কথা বলুন, বাচ্চার সঙ্গেও কথোপকথন চালান।
# মিউজিক ও টিভিও চালাতে পারেন।
# দিনের বেলায় অতিথি এলে শিশুকে ঘুম থেকে তুলতে সংকোচ করবেন না। তবে দিনের বেলায় শিশুকে একবারে নিঘুর্ম রাখতে হবে তা নয়। শিশু দুই থেকে চার বার এক-দেড় ঘণ্টার ঘুম দিতে পারে। তবে সন্ধ্যা ৬টার পর যেন না ঘুমায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খেলা, কথা বলা ও মিউজিক এ
সময়ও চালিয়ে যেতে হবে।
# শিশু যেন দুধ খেতে খেতে ঘুমিয়ে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখুন। প্রয়োজনে পায়ে আলতো টোকা দিন। কুসুম গরম পানি দিয়ে মুছে দিলে শিশু ফ্রেশ থাকবে। এতে
ঘুমাবেও কম। সন্ধ্যা থেকে শিশুকে জাগিয়ে রাখলেও রাত আটটা থেকে নয়টার পর থেকেই ঘুমের আয়োজন শুরু করে দিন। ঘরের সব বাতি নিভিয়ে দিন। ঘুমের
আগে শিশুকে সর্বশেষ রাত ১০টার দিকে খাওয়াতে চেষ্টা করুন। এরপর শিশু না ঘুমালেও তাকে বিছানায় নিয়ে যান। এ সময় ছড়া বা গান শোনাতে পারেন। তবে টিভির ধারে কাছেও নিবেন না। কোলে নিয়ে বা দোলনায় দোল
দিয়ে শিশুকে তাড়াতাড়ি ঘুম পাড়ানো যায়।
#মাতৃগর্ভে থাকার সময় মায়ের হাঁটাচলা ও নড়াচড়ার কারণে গর্ভের শিশু দোল অনুভব করে। জন্মের পরেও এই দোল
খাওয়াটা শিশুরা পছন্দ করে। প্রথম কয়েকদিন রাতে ঘুমানোর ক্ষেত্রে অসুবিধা হলেও একটু ধৈর্য ধরে এসব পদ্ধতি মানলে এক থেকে দুই মাসেই শিশু রাতে ঘুমাবে। তবে
সতর্ক থাকতে হবে ছয় মাস পর্যন্ত । কারণ, শিশুর ঘুমের প্রকার ও সময় নির্দিষ্ট হতে ছয় মাস লেগে যায়। ঘুমের এসব পদ্ধতি অবলম্বনের সময় খুব কঠোর হওয়া যাবে না। জবরদস্তিও করা উচিত নয়।
লেখক : সহকারি অধ্যাপক শিশু বিভাগ,এনআইসিভিডি