ডা. সজল আশফাক
শিশুর হাঁপানি বা অ্যাজমা অভিভাবকদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হলেও বর্তমানে সে অবস্থার অনেকটা পরিবর্তন ঘটেছে। কারণ, হাঁপানি নির্ণয়ের আধুনিক পদ্ধতি এবং সেইসঙ্গে আধুনিক পরিকল্পিত চিকিৎসা ব্যবস্থা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অভিভাবকদের অনেকটা স্বস্তি দিতে সমর্থ হয়েছে।
সাধারণত হাঁপানির তীব্রতা বেড়ে গেলে বুকের মধ্যে বাঁশির মতো চিঁ চিঁ শব্দ হয়, যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় হুইজ।
সে ক্ষেত্রে অনেক অভিভাবকই শিশুর হাঁপানি রয়েছে কি না, সেটি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। প্রকৃতপক্ষে হাঁপানি রোগীদের প্রায় অর্ধেকের ক্ষেত্রেই ‘হুইজ’ থাকে না বলে জানিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস হেলথ সায়েন্স সেন্টারের শিশু বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক টেড নিকার।
উপসর্গ
• কাশি হচ্ছে হাঁপানির সবচেয়ে পরিলক্ষিত উপসর্গ। এই কাশির প্রকোপ রাতেই বেশি দেখা দেয়।
• এ ছাড়া বুক চেপে ধরার অনুভূতির কথা বলতে পারে শিশু। সঙ্গে কিছুটা শ্বাসকষ্টও থাকে।
• খেলাধুলা করতে গেলে কিংবা চলাফেরা করতে যাওয়ার সময় শিশু পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে।
হাঁপানি বেড়ে গেলে কী হয়?
• শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজে ব্যবহৃত বাতাস চলাচলের পথ সরু হয়ে যায়।
• ফুসফুসে বাতাস চলাচলের পথ এ সময় প্রদাহযুক্ত হয়ে ফুলে ওঠে।
• বাতাস চলাচলের কাজে ব্যবহৃত ফুসফুসের নালির মাংসপেশি সংকুচিত হয়ে পড়ে এবং সেখানে আঠালো পদার্থের নিঃসরণ ঘটে। এটি স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসকে ব্যাহত করে।
হাঁপানি সম্পর্কে প্রশিক্ষিত বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে খুব সহজেই শিশুর হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তবে হাঁপানি কখনো কখনো তীব্র আকার ধারণ করে শিশুর জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে।
যেসব উপসর্গ দেখলে শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নেবেন :
• শিশুর তীব্র শ্বাসকষ্ট হলে। শ্বাসকষ্টের কারণে শিশুর ‘কলার বোন’ এবং পাঁজরের হাড় যদি ভেসে উঠলে।
• শ্বাসকষ্টের কারণে শিশু কথা বলতে ব্যর্থ হলে বা কথা বলতে অসুবিধা হলে।
• শিশু বসে উপুড় হয়ে শ্বাসকষ্ট উপশমের চেষ্টা করলে।
• প্রতি শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বাঁশির মতো চিঁ চিঁ শব্দ হলে।
• শিশু দাঁড়াতে গিয়ে শ্বাসকষ্টের কারণে বসে পড়লে আবার ভালোভাবে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকলে।
• কোনো কিছু পান না করতে পারলে বা খেতে না চাইলে।
• ইনহেলার ব্যবহারের ১৫ মিনিটের মধ্যে অবস্থার উন্নতি না হলে।
যেহেতু হাঁপানির কারণে মৃত্যু হওয়াটা বিচিত্র কিছু নয়, কাজেই হাঁপানির তীব্রতা বাড়লে শিশুকে দ্রুত হাঁপানির চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে এমন হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
লেখক : নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ