উপমা ইসলাম রুপা
শীত মৌসুম বরাবরই ছন্দময়। পিঠাপুলির উৎসব, ভ্রমণে যাওয়া, বাহারি শীতপোশাকে ফ্যাশন- সবকিছুই যেন একই লয়ে গতিবদ্ধ। তবে এই ঋতুটি এলে প্রথমেই যেই পোশাকটির কথা মাথায় আসে সেটি হলো- শাল। শীত মানেই যেন বাহারি কারুকার্যের শালের মেলা। হালকা হোক বা কনকনে শীত, এ সময় দেহকে উষ্ণ রাখবে, এমন পোশাকের তালিকায় শালের আবেদন সবসময়।
একটা সময়ে রাজা ও বণিক ছাড়াও অভিজাত পরিবারের মানুষ আভিজাত্যের নিদর্শন হিসেবে কাঁধে ঝুলিয়ে নিতেন রাজকীয় কারুকাজ করা শাল। আবার সেলোয়ার-কামিজ, শাড়ি, পাঞ্জাবি যাই হোক না কেন তার সঙ্গে শীতপোশাক হিসেবে শালের কদর অনস্বীকার্য। শীতকালীন বিয়ের উৎসবেও এই পোশাকটি ব্যবহৃত হয় ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে।
আগে শাল মানেই যেনো ছিলো একরঙা জমিন আর পাড় বা কর্নারে কারুকাজ। আবার কিছু শালের মাঝখানে দেখা যেতো সুতা ও পুতির কাজ। তবে এখন পরিবর্তন এসেছে। পুরো শাল জুড়েই দেখা যায়, হ্যান্ডপেইন্ট বা ব্লকবাটিকের কাজ। নকশায় দেখা মেলে মণিষীদের বাণী- রবিন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল বা সুনীলের কবিতার পঙ্তি। অথবা বাঙালির ঐতিহ্য- ঢেকি, কুলা, নারীর নকশিকাঁথা তৈরির গল্প ইত্যাদি। আবার বিপ্লবী চে গুয়েভেরা বা ক্ষুদিরামের চেহারার প্রতিচ্ছবিও বিদ্রোহী মনে আগুণের স্ফুলিঙ্গ তৈরি করে পোশাকের ভেতর দিয়ে।
ফ্যাশন হাউজ হরিতকীর সহকারী প্রতিষ্ঠাতা অনিক কুন্ডু বললেন, ‘ক্রেতাভেদে রুচি ও পছন্দের পরিবর্তন এসেছে। গতবাঁধা নকশার বাইরেও তারা এখন ভিন্ন কিছু খোঁজে। কারো পছন্দ রঙচঙে নকশা, কারো ভরাট কাজ, কারো আবার একদমই সাদামাটা শাল পছন্দ। রঙের সমন্বয়টা এখানে সবচেয়ে বড় বিষয়। যার রুচির সঙ্গে যেটা মেলে, সেটাই বেছে নেয়। সাদা, লাল, কালো, নীল, বাদামি রঙ বেশি প্রাধান্য পায়। তবে লাল থাকে সবার আগে। কারণ, বেশিরভাগ বাঙালি নারীর প্রথম পছন্দ লাল। তবে বিভিন্ন রঙেরও সমন্বয় থাকে। ইদানিং শালে সব ধরনের ক্রেতার কথা মাথায় রেখেই নকশা করা হয়। আর এই শালগুলো বেশ আরামদায়কও।’
দেশি শালের নকশা যেমন বাহারি, তেমনি নামেও রয়েছে বৈচিত্র্য। জামদানি, খেশ, টাঙ্গাইল তাঁতের শাল, মালা, বাটিক, রাজশাহী সিল্ক, হ্যান্ডলুম মনিপুরি, উল, কুশিকাটা, কাঁথা স্টিচ, গুজরাটি শেলাইয়ের শাল, নেটের শাল, কটকি শাল ইত্যাদি। এসবের বাইরেও লুধিয়ানা, জয়পুরি, চায়নিজ, বার্মিজ ও ইরানি শালও হতে পারে শীতের অন্যতম পোশাক। কাশ্মীরি শালের মধ্যে পশমিনা জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এখন দেশেও তৈরি হচ্ছে এটি।
এবারের শীতে পাতলা কাপড়ের প্রাধান্য বেশি। তবে বেশি শীতের জন্য থাকছে উলেন কাপড়ের শাল। এ ছাড়া সুতা, চুমকি, পুঁতি, অ্যামব্রয়ডারি, ব্লক প্রিন্ট, টাইডাই, স্ক্রিনপ্রিন্ট, স্কেচ, কাশ্মীরি শাল ও জরির কাজ করা শাল তো রয়েছেই। থাকছে নানা বাহারি রকমের সেলাই ও নকশার কারুকাজ। কাপড়ের মান, সুতার কাজ ও নকশার বৈচিত্র্যের ওপর নির্ভর করে এসব শালের দাম ১ হাজার ২শ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে।