সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক
বাঙালির কাছে জামদানি শাড়ির কদর চিরন্তন। ছোট-খাট ঘরোয়া অনুষ্ঠান হোক বা বিয়ে বাড়ির জমকালো সাজ, জামদানির আবেদন সবসময়ই। ভারী বা হালকা যেকোনো কাজের নকশাতেই এই শাড়িতে নারী হয়ে উঠে অপরূপ।
শতভাগ আসল জামদানি শাড়ি, কম মূল্যে ক্রেতাদের সামনে নিয়ে আসতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে কাজ করে যাচ্ছে ফেসবুকভিত্তিক পেইজ আমেন কালেকশন। নিজস্ব তাঁতিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী পৌঁছে দিচ্ছে শাড়ি। আমেন কালেকশন-এর প্রতিষ্ঠাতা ডা. দিলরুবা নাসরিন পেশায় একজন চিকিৎসক। চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি তিনি হয়ে উঠেছেন উদ্যোক্তা। আর স্ত্রীকে পূর্ণ সহযোগিতা করে যাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির সহ প্রতিষ্ঠাতা ইফতেখার আমিন। আমেন কালেকশন নিয়ে কথা হয় এই দুজনের সঙ্গে। তাঁদের উদ্যোক্তা হয়ে উঠা এবং পথচলার চড়াই-উৎড়াইয়ের গল্পই জানবো এই লেখায়।
সাতকাহন২৪.কম : জামদানি নিয়ে কাজ করার ইচ্ছাটা কেন হলো?
ডা. দিলরুবা নাসরিন : দেশি শাড়ি সবসময়ই খুব পছন্দ করি। আর জামদানি শাড়ির প্রতি ভীষণ একটা ব্যক্তিগত ভালোবাসা ও ভালোলাগা ছিল। সেখান থেকেই সবার আগে এই শাড়ির কথা মাথায় আসলো।
ইফতেখার আমিন : দেশীয় পণ্যের প্রতি সবসময় আলাদা একটি আগ্রহ কাজ করতো। আর বাংলাদেশে যতগুলো পন্য জি আই সনদপ্রাপ্ত, এর মধ্যে জামদানি অন্যতম। সারাবিশ্বে খুব কম সংখ্যক পন্যই এই সনদটি পায়। যেহেতু জামদানি আন্তর্জাতিক পন্য হিসেবে স্বীকৃত, আর আমাদের দেশে তো এর কদর রয়েছে, তাই এর প্রচার ও প্রসার বাড়ানোই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য।
সাতকাহন২৪.কম : আমিন কালেকশন তৈরির পেছনের গল্পটা-
ইফতেখার আমিন : শুরুটা হুট করে হয়নি। শুধুমাত্র অনলাইন বেইজ সেকেন্ডারি তথ্যের ওপর নির্ভর করিনি। ব্যক্তিগতভাবে আমার স্ত্রী কাজটি করতে চাইলে, আমি মনে করেছি একজন পার্টনার হিসেবে তাকে সহযোগিতা করা জরুরি।
শুরুতে আমরা বিষয়টি নিয়ে অনেক তথ্য সংগ্রহ করি। কোথা থেকে ভালো জামদানি তৈরি করা যাবে, কীভাবে এর মূল্য সহজলভ্য করা সম্ভব সেসব বিষয়ে রীতিমতো গবেষণা করি। প্রায় এক মাস এক থেকে দুই দিন পর পর আমি বিভিন্ন জায়গায় যাই। এর মধ্যে ডেমরা ছিল, শীতলক্ষ্যা নদী পার হয়ে গেছি। এরপর নিজস্ব তাঁতি দিয়ে কাজ করানো শুরু করি। আমার প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল আমেন কালেকশন-এর ফেসবুক পেইজটি জনপ্রিয় করা। শুরুতে মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করি।
এ ছাড়া একটা ব্যবসা করা এতোটা সহজ ছিল না। যেহেতু আমাদের দুজনেরই কোনো ব্যবসার অভিজ্ঞতা ছিল না। এখানে প্রচুর নকল জামদানি রয়েছে, আর যারা কাজ করে, তারা সবাই যে সৎ, তা কিন্তু নয়। তাই বিষয়গুলোকে সূক্ষ্মভাবে বুঝতে হয়েছে। এতেই অনেকটা সময় লেগে গেছে। ধীরে ধীরে যারা আসল জামদানি নিয়ে কাজ করে, তাদের জেনেছি এবং কাজ করতে শুরু করেছি। এরপর কাজ করতে করতে অভিজ্ঞতা হয়েছে। ঠকেছি অনেকবার। তবে হাল ছাড়িনি কখনো। এখন ঠিকই দাঁড়িয়ে গেছি।
সাতকাহন২৪.কম : কতটা সারা পাচ্ছেন?
ডা. দিলরুবা নাসরিন : ধীরে ধীরে সারা বাড়ছে। প্রথমে পরিচিত বন্ধু-বান্ধবরাই ছিল ক্রেতা। তাদের কাছ থেকে এখন পরিচিতি আরেকটু বেড়েছে। তবে এটা ঠিক যারা একবার আমাদের পন্য নেয়, তারা বারবারই আমাদের কাছে আসে।
ইফতেখার আমিন : আর আমাদের জামদানির মূল শক্তি এর গুণগত মান ও নকশায় ভিন্নতা। আমরা সবসময় এটা মেনে চলার চেষ্টা করি। আমরা সময়মতো জামদানি ডেলিভারি দেওয়ার চেষ্টা করি। এতে ক্রেতারা আনন্দিত হয়। আর আমরা বাজারের চেয়ে কম মূল্যে ১০০ ভাগ আসল জামদানি ক্রেতাদের দিই। এই বিষয়গুলোর কারণেই আমেন কালেকশন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ক্রেতারা এখানে নিশ্চিন্তে শতভাগ আসল জামদানি সঠিক মূল্যে পায়।
সাতকাহন২৪.কম : জামদানি শাড়ির দাম বাড়ছে। এই ক্ষেত্রে কতটা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন?
ডা. দিলরুবা নাসরিন: ক্রেতারা আসলে দুই ধরনের। এক ধরনের ক্রেতারা জামদানি সম্পর্কে একদম আগাগোঁড়া জানেন। খুব কেনা-কাটা করেন। তাদের সাধারণত জামদানির বাজার সম্পর্কে বোঝাতে কষ্ট হয় না। তবে যারা একটু কম জানেন, তাদের বোঝাতে মাঝে মাঝে অসুবিধা হয়।
ইফতেখার আমিন : আমাদের নিজস্ব তাঁতি রয়েছে এবং তাদের কাছ থেকে একদম প্রান্তিক জায়গা থেকে আমরা জামদানি নিয়ে আসি। তাই হচ্ছে কিছুটা কম মূল্যে ক্রেতাদের দিতে পারি। তবে সম্প্রতি সুতা ও রঙের দাম বাড়ায় জামদানি শাড়ির দাম কিছুটা বেড়েছে। আমাদের এসব প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
সাতকাহন২৪.কম : ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
ডা. দিলরুবা নাসরিন: ভবিষ্যতে দেশিয় শাড়ি নিয়ে আরো পরিকল্পনা রয়েছে। টাঙাইলের তাঁত বা মণিপুরি নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে। নিয়মিত পড়ার জন্য যেসব শাড়ি মানুষ খুঁজে সেগুলো নিয়ে কাজ করবো।
আর দ্বিতীয়তো, হোম ডেকর নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে, আমেন কালেকশন থেকে।
ইফতেখার আমিন : তবে আমাদের জামদানি শাড়ি সবসময়ই থাকবে। উত্তরত্তোর আমরা চেষ্টা করবো একে কীভাবে আরো প্রসার করা যায়। অলরেডি আমরা বিদেশেও আমেন কালেকশন থেকে ডেলিভারি শুরু করে দিয়েছি। আমরা চেষ্টা করছি জামদানির এই গণ্ডি কেবল দেশে না রেখে কীভাবে বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। এ ছাড়া কেবল জামদানি শাড়ি নয়, আমরা ওয়ান পিস, টু পিস নিয়েও কাজ করছি। এভাবেই আমরা ক্রেতাদের মাঝে বিশ্বস্ততা ও আস্থাভাজন হয়ে পৌঁছে যেতে চাই।
আমেন কালেকশন- এর ফেসবুক পেইজ : AmenCollectionBD
ফোন : 01730-430897
ই মেইল : iftekhar.amin2016@gmail.com