-অনন্যা চৈতী
দেশজুড়ে চলছে করোনা আতঙ্ক। বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ, এমনকি স্থগিত হয়ে রয়েছে এইচএসসি পরীক্ষাও। লকডাউন চলছে প্রায় অনেক এলাকাতেই। এ পরিস্থিতিতে ঘরের বাইরে যেতে পারছে না শিশুরা। এতে তাদের ঘরের ভেতরে সুস্থ রাখাটা এখন মা-বাবার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ।
লকডাউনে শিশু কীভাবে গঠনমূলক পদ্ধতিতে সময় কাটাবে এবং এ ক্ষেত্রে মা-বাবার ভূমিকা কী হতে পারে, সে বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সংগঠনের আজীবন সদস্য ও সাইকোলজিস্ট ফারজানা ফাতেমা রুমির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘লকডাউনের কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে শিশুরা। যেসব শিশু প্রতিদিন স্কুলে যেত, বাইরে খেলতে যেত, তারা এখন ঘরবন্দি। যেতে পারছে না পাশের বাড়ির বন্ধুর সঙ্গে খেলতেও। এ সবকিছুই তার ছোট্ট মনে প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া ঘরে বসেই চলছে অনলাইন ক্লাস এবং মা-বাবার হোম অফিস। সব মিলিয়ে মা-বাবার জীবনেও শুরু হয়েছে নতুন এক অধ্যায়।’
লকডাউনে শিশুর অস্থিরতা কমাতে এবং গঠনমূলকভাবে সময় কাটাতে মা-বাবার ভূমিকা সম্পর্কে সাইকোলজিস্ট রুমির পরামর্শগুলো হলো :
# মা-বাবা হিসেবে সবার আগে অবশ্যই করোনাভাইরাস সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে হবে সন্তানকে। এর ভয়াবহতা এবং কেন আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে আছি, সে সম্পর্কে জানাতে হবে। যারা অসুস্থ এবং যারা আমাদের যতœ নিচ্ছে, এমন ব্যক্তি ও পেশার মানুষের গল্পগুলো বলুন। শিশুকে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে শেখাতে হবে।
#সব বন্ধ হওয়ার কারণে প্রতিদিনের নিয়মিত রুটিন এলোমেলো হলে শিশুর বায়োলজিক্যাল ক্লকে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই সারা দিনের কাজের তালিকা লিখে দেয়ালে লাগিয়ে দিলে শিশু নিজেই বিষয়টি বুঝতে পারবে এবং মেনে চলতে পারবে।
# করোনার সময়ে শিশুদের জন্য সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ হলো, তারা বাড়িতে মা-বাবা ও বয়োজ্যেষ্ঠদের দীর্ঘ সময় কাছে পাচ্ছে। বড়দের কাছ থেকে পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ সম্পর্কে জানার সুযোগ হচ্ছে। এটি শিশুর ভাষা, আবেগীয় ও সামাজিক মনোবিকাশ লাভে সহায়ক। তবে আপনার সন্তানের বয়স এবং বোঝার ক্ষমতা সম্পর্কে ভেবে তার সঙ্গে সে অনুযায়ী কথা বলতে হবে।
# শিশুকে নির্দ্বিধায় কথা বলা এবং প্রশ্ন করার অনুমতি দিন। সব সময় তাদের প্রশ্নের সত্যি ও সঠিক উত্তর দিন।
# করোনা সম্পর্কে আপনার শিশু ভীত বা বিভ্রান্ত হতে পারে। সে কেমন অনুভব করছে, তা বোঝার জন্য তাকে সময় দিন এবং আপনি তার সঙ্গেই আছেন, এটা তাকে নিশ্চিত করুন।
# ছোট শিশুটির সঙ্গে মজা করে বাটি ও চামচ দিয়ে টুং-টাং শব্দ করে গানের তালে নাচ করা, ছড়া বলা, গল্পের বই পড়া, ছবির বই দেখানো ইত্যাদি করতে পারেন। সে নিজে পড়তে পারলে বলুন, ‘আজকে আমরা কোন গল্পটা শুনব?’ তাকে নিয়ে বাচ্চাদের জন্য তৈরি মুভিও দেখতে পারেন।
# নতুন কিছু শেখার সুযোগ করে দিতে পারেন। ক্রেয়ন বা পেনসিল দিয়ে ছবি আঁকা, রঙিন কাগজ দিয়ে ক্রাফটিং, অরিগামি, কাঠের ব্লক দিয়ে বাড়ি বানানো, পাজেল মেলানো, লুডু, শব্দ জব্দ খেলা, দাবা খেলা এভাবেও তার সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন।
# শিশুকে এ সময় ঘরের টুকটাক কাজে সহযোগিতা করতে বলতে পারেন। এতে তার ভেতর দায়িত্ববোধ বাড়বে। যেমন-ঘর পরিষ্কার করা, গাছে পানি দেওয়া, তার বই-খাতা গুছিয়ে রাখা ইত্যাদি।
# কিশোর-কিশোরীদের পছন্দের বিষয় যেমন, খেলাধুলা, গান, সেলিব্রেটি, বন্ধু ইত্যাদি নিয়ে কথা বলতে পারেন। একসঙ্গে পছন্দসই খাবার রান্না, তাদের প্রিয় গান, নাচ একসঙ্গে অনুশীলন করতে পারেন।
# শিশুটি কথা সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে শুনুন। এবং করোনাকালীন এ সংকটেও সব ভুলে তাদের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠার চেষ্টা করুন।