Tuesday, November 18, 2025
spot_img
Homeস্বাস্থ্যকাহনঘরোয়া টোটকারোজা রাখলে দেহের কী উপকার?

রোজা রাখলে দেহের কী উপকার?

ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ

রোজা রাখার উদ্দেশ্য শরীরকে দুর্বল করে অকর্মণ্য করা নয়, বরং শরীরকে সামান্য কিছু কষ্ট দিয়ে দৈহিক ও আত্মিক উৎকর্ষ সাধন। শুধু তা-ই নয়, অনেক রোগের বেলায় রোজায় ক্ষতি না হয়ে বরং বহু রোগব্যাধির প্রতিরোধক এবং আরোগ্যমূলক চিকিৎসালাভে সহায়ক হয়। রোজায় স্বাস্থ্যের সমস্যার চেয়ে বরং স্বাস্থ্যের উপকারই বেশি হয়।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী

রোজা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে রোগীদের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ ও রহমতস্বরূপ। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা সঠিক নিয়মে রোজা রাখলে নানা রকম উপকার পেতে পারে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল উপায় হলো- খাদ্য নিয়ন্ত্রণ। আর রোজা রাখা হতে পারে এর অন্যতম উপায়। এতে সহজেই খাদ্য নিয়ন্ত্রণ সহজ ও সুন্দরভাবে করা যায়। যারা ইনসুলিনের ওপর নির্ভাশীল নন, তাদের ক্ষেত্রে রোজা রাখা হতে পারে আদর্শ চিকিৎসা ব্যবস্থা। যারা ইনসুলিন নেন, তাদের ক্ষেত্রেও রোজা অবস্থায় ওষুধের মাত্রা কমাতে সহায়ক। শুধু রক্তের গ্লুকোজই নয়, রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণেও রোজা মোক্ষম। এর সঙ্গে সঙ্গে রোজা ডায়াবেটিক রোগীকে সংযম, পরিমিতিবোধ ও শৃঙ্খলার শিক্ষা দেয়। এটি ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় অপরিহার্য।

রক্তের কোলেস্টেরল

যাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, রোজা তাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। রোজা ভালো কোলেস্টেরলকে (এইচডিএল) বাড়াতে এবং মন্দ কোলেস্টেরলকে (এলডিএল) ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে উপকারী।

অতিরিক্ত ওজন

যারা স্থূলতায় ভুগছে, তাদের ক্ষেত্রে রোজা ওজন কমানোর জন্য এক সহজ ও সুবর্ণ সুযোগ। ওজন কমে যাওয়ার বিভিন্ন রোগ থেকে বেঁচে থাকা যায়। যেমন : উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, বাতের ব্যথা, অস্টিও আর্থ্রাইটিস, গাউট ইত্যাদি। আবার ওজন কমাতে পারলে কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমে আসে।

হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ

রোজার মাধ্যমে ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ হওয়ার ফলে যারা হৃদরোগ অথবা উচ্চ রক্তচাপে ভোগে, তাদের জন্য রোজা অত্যন্ত উপকারী। এতে শরীরের, বিশেষ করে রক্তনালির চর্বি কমে যায়। রক্তনালির এথরোসক্লোরোসিস কমাতে সাহায্য করে।

পেপটিক আলসার

এক সময় ধারণা ছিল, পেপটিক আলসারে আক্রান্ত রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন না, তাঁদের ঘন ঘন খাবার খেতে হবে। অনেকক্ষণ পেট খালি রাখা যাবে না। অনেকে মনে করে, রোজা পেপটিক আলসারের ক্ষতি করে এবং এসিডের মাত্রা বাড়ায়। প্রকৃতপক্ষে এসব ধারণা ঠিক নয়। রোজায় নিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়ার কারণে এসিডের মাত্রা কমে যায়। তাই সঠিকভাবে রোজা রাখলে এবং সঠিক খাবার দিয়ে সেহরি ও ইফতার করলে রোজা বরং আলসারের উপশম করে। এ ছাড়া রোজা গ্যাস্ট্রাইটিস, আইবিএস ইত্যাদি রোগেও উপকারী।

শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা রোগী

যারা এসব রোগে ভোগেন, তাদেরও রোজা রাখতে কোনো অসুবিধা নেই। রোজায় এ ধরনের রোগ সাধারণত বৃদ্ধি পায় না। বরং চিন্তামুক্ত থাকায় এবং আল্লাহর প্রতি সরাসরি আত্মসমপর্ণের কারণে এ রোগের প্রকোপ কমই থাকে। প্রয়োজনে রাত্রে একবার বা দুবার ওষুধ খেয়ে নেবেন। এ ধরনের ওষুধ বাজারে সহজেই পাওয়া যায়। এতে রোজার কোনো ক্ষতি করবে না।

লেখক
সাবেক চেয়ারম্যান ও ডিন
মেডিসিন অনুষদ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

সাতকাহন
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.