Wednesday, December 11, 2024
spot_img
Homeস্বাস্থ্যকাহনচিকিৎসা চাইরোজা নষ্ট হবে না যে ২০ ব্যবস্থাপত্রে

রোজা নষ্ট হবে না যে ২০ ব্যবস্থাপত্রে

ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ

মুসলিমের জন্য রমজানের এক মাস রোজা রাখা ফরজ। এ সময় একজন মুসলমানকে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যে কোনো খাদ্যদ্রব্য ও পানীয় গ্রহণ এবং মুখে ওষুধপত্র খাওয়া থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হয়।

তবে অনেক রোগীর ক্ষেত্রে কিছু ওষুধ ও ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করতেই হয়। না হলে রোগীর স্বাস্থ্য বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে। আবার রোজা রাখা অবস্থায় অনেক রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার বা অপারেশনও জরুরি হয়ে পড়তে পারে।

এই সমস্যা সমাধানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা, ইসলামী আলেম-ওলামাদের সঙ্গে কথা বলে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, রোজা থাকা অবস্থায় বেশ কয়েকটি পন্থায় ওষুধ সেবন করলে এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে রোজা ঠিক থাকবে বা রোজা নষ্ট হবে না।

১. রোজা রাখা অবস্থায় চোখ, কান ও নাকে ড্রপ নেওয়া যাবে।

২. হৃদরোগীর বেলায় বুকে ব্যথা হলে নাইট্রোগ্লিসারিন স্প্রে বা ট্যাবলেট জিহ্বার নিচে নিতে পারবেন।

৩. নারী রোগীর তলপেটে পরীক্ষার জন্য যোনিদ্বার দিয়ে ডাক্তার বা নার্স হাতের আঙ্গুল অথবা কোনো ডিভাইস প্রবেশ করালে রোজা ভাঙবে না। এমনকি চিকিৎসার জন্য যোনিপথে পেসারি বা কোনো ওষুধ ব্যবহার করা যাবে।

৪. মূত্রথলি পরীক্ষা বা এক্স-রে করার জন্য রোগীর প্রস্রাবের দ্বার দিয়ে ক্যাথেটার অথবা অন্য কোনো যন্ত্র প্রবেশ করালে অথবা রেডিও-ওপেক ডাই প্রবেশ করালে রোজা ভঙ্গ হবে না।

৫. দাঁত তোলা, ড্রিলিং করা বা মেসওয়াক বা ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা যাবে, তাতে রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে যেন এগুলো করার সময় পাকস্থলীতে থু থু বা টুথপেস্ট প্রবেশ না করে।

৬. রোগীর চামড়া, মাংস, অস্থিসন্ধি ও শিরায় ইনজেকশন দেওয়া যাবে। কিন্তু স্যালাইন, ডেক্সট্রোজ, প্রোটিন জাতীয় জিনিস ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না।

৭. যে কেউ রক্ত অন্যকে দিতে পারবেন। আবার জরুরি প্রয়োজনে নিজেও নিতে পারবেন।

৮. কোনো রোগী অক্সিজেন অথবা অজ্ঞানকারী গ্যাস (এনেসথেসিয়া) নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না।

৯. চর্মের মাধ্যমে শরীরের ভেতরে যায় এমন মলম, ক্রিম, অয়েন্টমেন্ট ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে।

১০. পরীক্ষার জন্য ব্যক্তির শরীর থেকে রক্ত নেওয়া যাবে।

১১. হৃদরোগে আক্রান্ত রোগী হার্টের এনজিওগ্রাম এবং কার্ডিয়াক ক্যাথেটার করা যাবে।

১২. রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বা চিকিৎসার অংশ হিসেবে অ্যান্ডোস্কপি করলে রোজা ভাঙবে না।

১৩. মুখ পরিষ্কারের জন্য মাউথওয়াশ বা গড়গড়া বা মুখে স্প্রে জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যাবে, তবে যেন পাকস্থলীতে কোনো কিছু না যায়।

১৪. জরায়ু পরীক্ষার জন্য শরীরে হিস্টেরোস্কপি করা যাবে। এমনকি জরায়ুতে কোনো যন্ত্রপাতি বা অন্যকিছু পরীক্ষার জন্য প্রবেশ করালে রোজায় কোনো সমস্যা হবে না।

১৫. লিভার বায়োপসি অথবা অন্য কোনো অঙ্গের বায়োপসি করলে রোজা নষ্ট হবে না।

১৬. নাকে স্প্রে বা হাঁপানি রোগীর বেলায় ইনহেলার জাতীয় কিছু নিলে কোনো সমস্যা নেই।

১৭. রোগীর পায়ুপথে ইনজেকশন অথবা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আঙ্গুল বা অন্য কোনো যন্ত্র প্রবেশ করালে রোজা ভাঙবে না।

১৮. জরুরি কোনো অপারেশন প্রয়োজন হলে রোজা রাখা অবস্থায় করা যাবে।

১৯. কিডনি অকেজো হলে রোগীর ডায়ালাইসিস করলে রোজা ভাঙবে না।

২০. পাকস্থলী পরীক্ষার জন্য গ্যাস্ট্রোস্কপি করা যাবে। তবে কোনো তরল প্রবেশ করানো যাবে না।

এই মতামতগুলো বিশ্বের ইসলামী চিন্তাবিদ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। তাই আমাদের দেশে চিকিৎসকরা এই মতামত দিলে রোগীরা যেমন সচেতন হবে, তেমনি সঠিক নিয়মে রোজা পালন করতে পারবে।

লেখক
সাবেক চেয়ারম্যান ও ডিন
মেডিসিন অনুষদ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments