Tuesday, October 8, 2024
spot_img
Homeডায়েট—ফিটনেসযোগচর্চায় উপকার কী ?

যোগচর্চায় উপকার কী ?

অপরাজিতা অরু

যোগব্যায়াম শব্দটি শুনলে প্রথমেই কল্পনায় আসে ধ্যান বা সাধনারত কোনো শান্ত মুখ। সুস্থ থাকতে হলে যোগাভ্যাসের বিকল্প নেই। সংস্কৃত শব্দ ‘যুজ্’ থেকে এসেছে ‘যোগ’ শব্দটি। এর অর্থ ‘যোগদান করা বা একত্রিত হওয়া’। শরীর ও মনের মেলবন্ধন ঘটায় যোগচর্চা।

মনকে বাদ দিয়ে শরীর এবং শরীরকে বাদ দিয়ে মন কখনো ভালো থাকতে পারে না। তাই যোগই একমাত্র মাধ্যম, যার মধ্য দিয়ে দুটো একসঙ্গে হতে পারে।

যোগের ধরন

যোগব্যায়াম মূলত কী এবং মানবদেহের জন্য কতটা উপকারী, এ বিষয়ে যোগ প্রশিক্ষক জয়াসান ইয়োগা অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রশিক্ষক কুশল রায় জয় বলেন, ‘যোগ হচ্ছে একটি সাধনা। যোগের রয়েছে চারটি অংশ। যথা : জ্ঞানযোগ, কর্মযোগ, ভক্তিযোগ, রাজযোগ। সবগুলো অংশ মিলিয়ে যখন একজন মানুষ যোগচর্চা করবে তখন এর সম্পূর্ণ সুফল পাবে।’

জ্ঞানযোগ হচ্ছে অনেকটা যোগাযোগের মতো। বলা হয়, ‘জ্ঞানই শক্তি’। আর এই শক্তিকে মানুষ যখন অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেয় এবং অন্যদের কাছ থেকে শিখে বা আহরণ করে, তখন এটিকে আমরা জ্ঞানযোগ বলি।

ক্যাপশন : নিয়মিত যোগচর্চা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে। ছবি : সংগৃহীত
ক্যাপশন : নিয়মিত যোগচর্চা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে। ছবি : সংগৃহীত

সুনির্মল বসুর কবিতায় আমরা পড়েছিলাম, ‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র’। জ্ঞানযোগের ক্ষেত্রে এই লাইগুলো বেশ সম্পর্কিত। জ্ঞান বা শিক্ষা মানুষকে বিনয়ী ও শান্ত করে তোলে। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে। এ ক্ষেত্রে দৈনন্দিন জীবনে যোগচর্চাকে রুটিনে রাখাটা বেশ কার্যকর।

কর্মযোগ হলো, কাজের মাধ্যমে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করা। আবার ভালো বা সুন্দর কিছুর চর্চা করাই হলো ভক্তিযোগ। সেটা হতে পারে বই পড়া, গান করা বা প্রার্থনা করা। অপরদিকে শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য শারীরিক ও মানসিক সাধনাগুলোই রাজযোগ বা হঠযোগ।

যোগবিদ পাতাঞ্জলি মহ আবার যোগাসনকে আটটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা : সংযম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়ম ও প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি। সাধারণত আসন, প্রাণায়ম ও ধ্যান নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করা হয়। আমরা মেডিটেশন নামে যে শব্দটির সঙ্গে পরিচিত, তা এসব যোগেরই অংশ।

যোগচর্চার উপকার

যোগচর্চা মানবদেহের জন্য ভীষণ উপকারী জানিয়ে কুশল রায় জয় বলেন, ‘যাদের অতিরিক্ত ওজনের কারণে শারীরিক কোনো ব্যায়াম করা সম্ভব হয় না, তারা প্রাণায়ম অর্থ্যাৎ নিঃশ্বাসের ব্যায়ামের মাধ্যমের ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। যোগে এমন কিছু আসন রয়েছে, যেগুলো শুয়ে বা বসেও করা যায়। এসব আসন, ব্যায়ামে রূপান্তর করে চর্চা করা হয়। যেমন : সূর্য নমষ্কার। এটি খুব দ্রুত গতিতে করলে শরীরের নড়াচড়া হয়।’

ক্যাপশন : অনেক রোগ থেকেও মুক্তি দেয় যোগচর্চা। ছবি : সংগৃহীত
ক্যাপশন : অনেক রোগ থেকেও মুক্তি দেয় যোগচর্চা। ছবি : সংগৃহীত

থাইরয়েড, হার্ট, চোখ, প্যানক্রিয়াস কিংবা সক্ত সঞ্চালন ইত্যাদির জন্য রয়েছে সমস্যা অনুযায়ী আলাদা আলাদা যোগাভ্যাস। যেগুলো ধারাবাহিকতা মেনে সঠিকভাবে চর্চা করলে মানুষ সুস্থ জীবন যাপন করতে পারে। যোগচর্চা মানুষের ভেতরের শুভ শক্তিকে জাগিয়ে তোলে। নিয়মিত এই চর্চায় মানুষের মধ্যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বাড়ে। রাগ, ক্ষোভ, দুঃখ, হতাশা, দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ কমে। নেতিবাচক যেকোনো কিছুকে ভিন্নভাবে ভাবর একটি আশ্চর্য ক্ষমতা বাড়ে। মন শান্ত থাকলে শরীরের রোগও অনেকটা কমে। পারিবারি, সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক সম্পর্ক বা বিষয়গুলো তখন সুন্দর হয়ে ওঠে। প্রশান্তি ফুটে ওঠে চেহারায়।

পারিবারিক, সামাজিক পেশাগত স্থানগুলোতে মানসিকভাবে চাপমুক্ত ও দায়িত্বশীল থাকতে তাই যোগচর্চার ভূমিকা অনস্বীকার্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments