ফারজানা ফাতেমা (রুমী)
ছোটবেলায় ব্যথা পেলে মা হাত বুলিয়ে দিলে সঙ্গে সঙ্গেই যেন ভালো হয়ে যেতো। একদম ছোট্ট শিশুদের দেখা যায় চিৎকার করে কাঁদছে, তবে মায়ের কোলে গেলেই শান্ত। মায়ের কাছে ঘুমানোর জন্য পিঠাপিঠি ভাইবোনের মধ্যে রীতিমতো যুদ্ধ বেঁধে যায়। আজকে তাই মায়ের স্পর্শ সম্পর্কে গবেষণা কী বলে, তা জানতে চেষ্টা করবো।
একজন মায়ের স্পর্শ শুধুমাত্র স্নেহের একটি রূপই নয়, এটি শিশুদের মানসিক বুদ্ধিমত্তাকেও বৃদ্ধি করে। কারণ, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশু অন্যান্য মানুষের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করবে, তার ওপর এটি প্রভাব ফেলে।
আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অফ পেডিয়াট্রিক্স (AAP) শিশু জন্মের প্রথম ১ ঘন্টাকে ‘গোল্ডেন আওয়ার’ নাম দিয়েছে। সুস্থ নবজাতককে মায়ের ত্বকের সঙ্গে রাখতে হবে। এই সময়ে, বুকের দুধ খাওয়ানোর প্রথম রাউন্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। গোল্ডেন আওয়ারে এবং আগামী দিনে স্কিন-টু-স্কিন কন্টাক্ট (SSC) মা ও শিশু উভয়ের জন্যই উপকারী।
স্পর্শ একটি অবিচ্ছেদ্য ইন্দ্রিয়। এটি আমাদের বিশ্বকে অনুভব করতে সহায়তা করে। বিজ্ঞান লেখক লিডিয়া ডেনওয়ার্থ বলেন, ‘স্পর্শ হলো জরায়ুতে উদ্ভূত প্রথম ইন্দ্রিয় এবং এটি জন্মের সময় সবচেয়ে শক্তিশালী ইন্দ্রিয়।’
এটি হলো প্রথম ইন্দ্রিয়, যা নবজাতকের জন্মের সাত দশমিক পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে বিকাশ লাভ করে। আপনার শিশু প্রথমে তাদের ঠোঁট ও নাকের স্পর্শ অনুভব করতে পারে।
ইন্দোনেশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত মনোবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মনোবিজ্ঞানী ইতাবিলিয়ানা হাদিউইজোজো বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে মায়ের স্পর্শের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। সেরিব্রাল কর্টেক্সের ওপর জেনস ব্রাউয়ার, অ্যানেট স্কিমার এবং তাদের সহকর্মীদের দ্বারা পরিচালিত গবেষণার একটি সেট প্রমাণ করেছে যে মায়ের কাছ থেকে শারীরিক স্পর্শ অনুভব করার সময় শিশুর ‘সামাজিক মস্তিষ্ক’ আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করে। এটি স্নায়ু তন্তু ও স্পর্শকাতর অনুষঙ্গের মাধ্যমে সন্তানের মস্তিষ্কে পৌঁছাবে। এইভাবে একটি হরমোন প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, যা শিশুর ‘সামাজিক মস্তিষ্ক’-কে প্রভাবিত করে।
যেসব শিশু মায়ের স্পর্শে বেড়ে ওঠে, তাদের অন্যদের মানসিক অবস্থা বোঝার ক্ষমতা বেশি থাকে, যারা খুব কমই মায়ের কাছ থেকে এটি পায় তাদের তুলনায়। গবেষক অ্যানেট স্কিমারও জার্নালে বলেছেন, মায়ের স্পর্শের উপকারিতা স্থায়ী। শিশুদের জন্য এটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় দুই বছর বয়সে না পৌঁছানো পর্যন্ত।
ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি, মন্ট্রিল, কানাডার গবেষকরা প্রমাণ করেছেন, মায়ের স্পর্শ সময়ের আগে জন্মানো অপরিপক্ক/ প্রিম্যাচিউর শিশুদের জন্যও উপকারী। এটি ব্যথা উপশম হিসেবে কাজ করতে পারে এবং তাদের বিকাশকে অপ্টিমাইজ করতে সাহায্য করতে পারে।
অতএব, আপনি মা হলে বেশি বেশি আপনার সন্তানকে স্পর্শ করুন, জড়িয়ে ধরুন। আর আপনার যে কোনো শারীরিক, মানসিক সমস্যায় আপনার মাকে জড়িয়ে ধরুন। দেখবেন অক্সিটোসিন হরমোন যাদুর মতো আপনাকে কতটা প্রশান্তি এনে দিবে। মায়ের ভালবাসায় শিক্ত থাকুক পৃথিবীর সকল সন্তান। সুখে থাকুক সকল মায়েরা। ‘মা’ দিবসের শুভেচ্ছা সকল মায়েদের।
লেখক :
মনোবিজ্ঞানী, মেন্টাল হেলথ ফার্স্ট এইডার। আজীবন সদস্য- বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতি।
প্রতিষ্ঠাতা- সোনারতরী শিশু কিশোর