ডা. মমতাজ রহমান
মা, তোমায় নিয়ে লিখতে গেলে, দুচোখ বেয়ে নিমেষে জল গড়িয়ে পড়ে। কত বছর ‘মা’ ডাকতে পারি না। পিপাসিত ব্যথাভরা হৃদয় আমার অনাথ আশ্রয়হীন। প্রচণ্ড ঝড়ে ডানাভাঙা পাখিটির মতো এই ডাল থেকে ওই ডালে আশ্রয় খুঁজে। আর যে ডালে পা রাখি, সেই ডালটি ভেঙ্গে যায়।
তোমার বুকের মানিকটি পথে হারিয়ে আজ কাঁদছে। শুধু একবার বুকে জড়িয়ে নাও, মা। এভাবে আমার পৃথিবীকে অন্ধকার করে তুমি চলে গেলে, কে দেবে ফিরিয়ে আমার জীবনের আলো?
আমি তো তোমায় নিয়ে লিখতে চাইনি কবিতা। অশান্ত হৃদয়ে পাথর চাপা দিয়ে তৃষিত চাতকির মতো শুধু এদিকে-ওদিকে একটু আশ্রয় খুঁজেছিলাম। ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ কে আমার ঘুম ভাঙালো? আবার এই রক্তমাখা বুকে আগুণ জ্বালালো?
তুমি বিনা আমার পৃথিবী রংহীন। শুধু তোমার চরণ যুগলে একটু ঠাই চাই মা। পৃথিবীর সব কাগজ আর কালি আনলেও যে হবে না শেষ আমার এ লেখা। এক পৃথিবী ভলোবাসা যে মায়ের পায়ের নিচে, সেই মাকে আমি কেমন করে ভুলে থাকবো বলো?
রত্নগর্ভা বলতো তোমায় সকলে। বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে তাইতো সুদূর রাশিয়ার পথে পাড়ি জমালাম তোমার আশীষ নিয়ে। বঞ্চিত বুকের কষ্টগুলোকেও বরফচাপা দিয়ে এসেছি। বলিনি কোনোদিন, তুমি কষ্ট পাবে তাই।
তোমার জঠরে থেকে যে আমি মর্টার আর মেশিন গানের তাণ্ডবলীলা শুনেছি মা। আর, তুমি তখন হায়নাদের হাত থেকে তোমার আর আমার প্রাণ বাঁচানো নিয়ে ছুটছো নিরন্তর। গণমানুষের বিভিষিকাময় সে তাণ্ডবলীলার মাঝে বিভৎস আর বোবাকান্না যে আমিও শুনেছি মা। বাবা আমাদের প্রাণ বাচাতে যুদ্ধরত। আর, বলেছিল যুদ্ধ করবে, শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত। যখন দেশ স্বাধীন হলো, জন্মদিলে, চিরদুখিনীকে কোলে তুলে দিয়ে বাবাকে বললে, ‘তোমার মানিক, তোমায় দিলাম।’
তোমাদের প্রথম ভালোবাসা, সেই আমি, তোমাদের অনেক সাধনার ধন। কিছুই দিতে পারিনি মা গো। তোমার একধার দুধ আর একফোঁটা ঘামের মূল্য দেবার সাধ্য কি রয়েছে আমার? আর যে পারছি না লিখতে বুক ফেটে যায়। তোমার চিরবিদায়ের ছবিখানি মোর কলমের পথ করেছে রূদ্ধ।
বুকের রক্তে লিখলাম তোমায় নিয়ে। ভলো থেকো আমার জননী তুমি ওপারেতে। চলে গেছো আমায় ছেড়ে।
নিষ্ঠুর পৃথিবীর বুকে ভালোবাসার যে বড়ই অভাব মা গো, ওগো মা, মা, মা।
লেখক :
কনসালটেন্ট সনোলজিস্ট,
ল্যাব এইড ক্যান্সার হসপিটাল এন্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার।