Wednesday, December 11, 2024
spot_img
Homeজীবনের খুঁটিনাটিমানুষের কথা শুনে জীবন নষ্ট করা যাবে না

মানুষের কথা শুনে জীবন নষ্ট করা যাবে না

সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক

রূপ রহমান ২০১৭ সালের শেষের দিকে উজ্জ্বলায় আসেন। এখান থেকে বিউটিফিকেশনের উপর সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করেন। বর্তমানে বাসাতেই একটি স্টুডিও স্যালন খুলেছেন। পাশাপাশি কিছু ফ্রি ল্যান্সিং কাজ করছেন। এই আয় দিয়েই নিজের ও বোনের সংসারের হাল ধরেছেন তিনি। জীবনযুদ্ধে কীভাবে লড়াই করছেন এবং সফলতা পাচ্ছেন, আজ তাঁর মুখেই শুনবো সেই গল্প।

পার্লারে কাজ করি, এ নিয়ে অনেক কথা শুনেছি

আমার মা খুব গোছানো থাকতেন। খুব পরিপাটি ছিলেন তিনি। তাঁর কাছ থেকেই নিজেকে ও অন্যকে গোছানোর বিষয়টি শিখি। আমরা তিন বোন আর এক ভাই। বয়স যখন কম ছিলো তখন লিপস্টিক, আইলাইনার দিয়ে বাড়ির ছোট ছোট মেয়েদের সাজিয়ে দিতাম। টুথপেস্ট দিয়ে আল্পনা আঁকতাম। মিরপুরে একটি পার্লারেও কিছুদিন কাজ করেছি।

তবে পার্লারে কাজ করাটা আমার আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীরা খুব বাজে চোখে দেখতো। কাজ শেষে আমাকে রাত করে বাড়ি ফিরতে হতো। এ নিয়ে অনেক বাজে কথা শুনেছি। খুব অবাক লাগতো, মানুষ তাদের ধারণা বশবর্তী হয়ে এতো খারাপ কথা কীভাবে বলে। খুব আহত হতাম। একটা সময় তো মানসিকভাবে এত বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিলাম যে কাজ ছেড়ে ঘরে বসে যাই। কাজের কোনো মূল্যায়ন পাচ্ছিলাম না। মনে হয়েছিলো কাউকে আর সাজাবো না, কিছু করবো না। আমাকে দিয়ে আর কিছু হবে না। আমি হয়তো হেরে গেলাম।

এ ছাড়া আমি ছোট থাকতেই মা মারা যান। আমার পড়া-লেখায় গ্যাপ পড়ে। মানুষ বলতো, ‘মা মারা গেছে। বিয়ে হবে না।’ সমালোচনাকে খুব ভয় পেতাম। আমার বন্ধুর সংখ্যা খুব কম। সোস্যাল মিডিয়ায় অ্যাকটিভিটিও তেমন নেই। ছোটবেলায় একটি বুটিক করেছিলাম। সেটিও বেশিদিন চালাতে পারিনি।

বড় ভাই এগিয়ে এলেন

আমার অবস্থা দেখে বড় ভাই এগিয়ে এলেন। তিনি বেশ ধমকের সুরে বললেন, ‘বসে আছো কেন? কাজ করো না কেন? বললাম, ‘মানুষ বাজে কথা বলে।’ তখন ভাইয়া মানসিকভাবে সাহায্য করলেন। খুব বোঝালেন। বললেন, ‘মানুষ কী বললো তা ভেবে তোমার জীবন কতদিন চালাবে? তুমি কাজ করো। নতুন কোর্স করো, নতুন কাজে যুক্ত হও।’

২০১৭ সালে উজ্জ্বলায় আসি। এখানে এসে উজ্জ্বলার বিজনেস হেড ও স্টুডেনন্ট কাউন্সিলর সাবিহা মোস্তফা আপার সঙ্গে কথা হয়। উনার সঙ্গে কথা বলে যেন সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলাম। উজ্জ্বলার সহ প্রতিষ্ঠাতা আফরোজা পারভিন আপা প্রথম দিন ক্লাস করান। তিনি আমাদের হাতে ধরে ধরে শেখাতেন। ওখানে না গেলে বুঝতাম না মানুষ কী বলবে সেটার জন্য বসে থেকে নিজের জীবনকে নষ্ট করা যাবে না। আত্মবিশ্বাস বাড়ালো। উজ্জ্বলায় যাবার জন্য বড় ভাইয়া একটা বাইকও কিনে দিলেন। এখানে এসে সবার সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক হলো।

করোনার সময়টা খুব খারাপ গেছে

কোভিডের আগে একটি স্যালন নিই। তবে কোভিডের সময় সব নষ্ট হয়ে গেলো। করোনার ওই সময়টা খুব খারাপ গেছে। ব্যক্তিগতকারণে পল্লবীতে চলে আসি মিরপুর থেকে। আয় কমে গেলে। বাসায় পার্টি ও ব্রাইডাল মেকআপ করা শুরু করলাম। আমি বেশ ভালো প্রোডাক্ট দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি।

উজ্জ্বলার চেয়ারম্যান আদিত্য সোম দাদা একবার ক্লাসে বলেছিলেন, ‘বিজনেস করবা, আর কখনো লস হবে না এরকম চিন্তা করা যাবে না।’ সেটা মাথায় রেখেই পুরোদমে নিজের মতো করে কাজ শুরু করি।

উজ্জ্বলার প্রতি কৃতজ্ঞতা

উজ্জ্বলার প্রতি আমার অনেক কৃতজ্ঞতা। আফরোজা আপা শিখিয়েছে, শেখার কোনো শেষ নেই। একটা বাচ্চার কাছ থেকেও অনেক কিছু শেখা যায়। তিনি বুঝিয়েছেন, আমরা অন্যের কোথায় খুব প্রভাবিত হই। সেটা না করে আমার যেটা পছন্দ সেটা শালীনভাবে আমি করবো। এসব কথা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। এখন আমি একটি স্যালন করতে চাই। আর এভাবেই কাজ করে এগিয়ে যাবো আশা রাখি।

বি : দ্র : বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে উজ্জ্বলা লিমিটেড। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক পর্ব চলছে। এই পর্বটি ছিলো ১৬তম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments