সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক
বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস আজ। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য, সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য ও ভালো থাকাটাই হোক বৈশ্বিক অগ্রাধিকার। ২০২১ সালে করা একটি পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বয়স্কদের মধ্যে ১৬ দশমিক আট শতাংশ ব্যক্তি মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। অর্থাৎ জনসংখ্যার অনুযায়ী দেশে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা তিন কোটিরও বেশি।
বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে সাতকাহন২৪.কমের সঙ্গে কথা হয় সাইকোলজিস্ট ফারজানা ফাতেমা রুমীর সঙ্গে। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন শাশ্বতী মাথিন। সাক্ষাতকারটি পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো।
সাতকাহন২৪.কম : মানসিক স্বাস্থ্যর প্রতি কেন গুরুত্ব দিতে হবে?
ফারজানা ফাতেমা : একজন মানুষের সুস্থ থাকা নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ে উপরে। এগুলো হলো- শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক। মানসিক স্বাস্থ্যকে বাদ দিয়ে সুস্থ থাকা কখনোই সম্ভব নয়। চারা গাছ টিকিয়ে রাখতে যেমন খাবার, রোদ, বেড়া বা মাচা দরকার, তেমনি একজন ব্যক্তিকে সুস্থ থাকতে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। এটি ভালো না থাকলে কখনোই ভালোভাবে জীবনযাপন সম্ভব নয়। একজন মানুষ জন্ম নেয় কিছু ক্ষমতা নিয়ে। পৃথিবীতে আসার পর পরিশ্রম ও মেধার চর্চার মাধ্যমে সেই ক্ষমতা দক্ষতায় পরিণত হয়। একজন ব্যক্তি মানসিকভাবে সুস্থ না থাকলে ব্যক্তি জীবনে ও কর্মক্ষেত্রে সুখি ও দক্ষ হয়ে উঠতে পারে না। মানুষ তার যোগ্যতার বিকাশ ঘটাতে পারে না। আর এই জন্য মানসিকভাবে সুস্থ থাকাটা খুব জরুরি।
মনকে ভালো রাখার বিষয়টিতে অনেকেই অবহেলা করে। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার বিষয়টি মানুষ আগে থেকে বোঝে না। শুরুর দিকে হয়তো কারো কোনো বিষয় নিয়ে বিষণ্ণতা বা উদ্বেগ হচ্ছে। তখন সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলো না। ধীরে ধীরে সমস্যাটি বেড়ে আত্মহত্যার মতো প্রবণতাও তৈরি হয়। তাহলে প্রথমেই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিলে হয়তো এই অবস্থায় আসতে হতো না।
সাধারণত বয়োঃসন্ধির সময়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, নতুন বিয়ে, মেনোপোজ, নতুন চাকরি, চাকরি হারানো, ডিভোর্স, আর্থিক টানা-পোড়েন ইত্যাদি ট্রানজিট সময়ে আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়ি। এমন সময়ের মুখোমুখি হলে কীভাবে এসবের ব্যবস্থাপনা করবো, তা আগে থেকে জেনে রাখা ভালো। এতে মানসিক স্বাস্থ্য অনেকটাই ভালো থাকে এবং পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সঠিক ফোকাস করা যায়। আসলে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে কখনোই কাজ করার ক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়বে না।

সাতকাহন২৪.কম : মানসিক স্বাস্থ্য কীভাবে ভালো রাখা যায়?
ফারজানা ফাতেমা : প্রথমত, নিজেকে ভালোবাসতে হবে এবং মনের সুস্থতার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন, আমরা মানুষকে হাসার কথা বলি। কেন? এতে মন ভালো করার হরমোন ডোপামিন বের হয়। এতে ধীরে ধীরে মন ভালো হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য খুব জরুরি একটি বিষয় হলো একটি দৈনিক রুটিন তৈরি করা এবং সেই দিকে ফোকাস করা। সময়টাকে যেন ভালোভাবে কাজে লাগানো যায়। খাওয়া, গোসল, কাজ ইত্যাদি এই রুটিনের ভেতর নিয়ে আসতে হবে। মন ভালো রাখতে, নিজেকে শিথিল রাখতে শ্বাস- প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা যেতে পারে। আর অবশ্যই কিছুটা হলেও নিজেকে সময় দিতে হবে এবং নিজের পছন্দের কাজগুলো করতে হবে। ভালো মুভি দেখতে পারি। প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটাতে পারি। ধর্মীয় চর্চা করতে পারে। গল্পের বই পরতে পারি। মূলত, যেটা আমার ভালো লাগবে, বাড়তি শক্তি দেবে- এমন কাজ করা।
এ ছাড়া অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড, ফ্যাট ফুড এড়িয়ে যেতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম মনের চাপ কমায়। তাই এই কাজটিও অবশ্যই করুন।
টক্সিক বা বিষাক্ত পরিবেশ ও ব্যক্তির সঙ্গ ত্যাগ করুন বা এড়িয়ে চলুন। একদমই সম্ভব না হলে যতটুকু যোগাযোগ না করলেই নয়, ততটুকুই করুন। পাশাপাশি নিজেও যেন আমরা অন্যের জন্য বিষাক্ত না হয়ে যাই, সেই বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে।
সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক: মানসিক স্বাস্থ্যে বিষয়ে কথা বলা নিয়ে বা চিকিৎসকের কাছে যাওয়া নিয়ে কিছু স্যোসাল স্টিগমা বা সামাজিক বাধা কাজ করে। এই সমস্যা কীভাবে কাটানো যায়?
ফারজানা ফাতেমা : মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে আসলে খোলাখুলি কথা বলতে হবে। এর বিকল্প নেই। যত এই বিষয়ে পজিটিভ কথা বলা হবে, তত সামাজিক বাধাগুলো কমবে। যেমন ধরুন, ভারতীয় অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন একবার ভীষণ বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে মিডিয়াতে কথা বলেছেন। অনেকেই নিজের সঙ্গে তাকে মেলাতে পেরেছে। এভাবে কথা বলতে হবে। আমরা তো রয়েছেই, পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত, জনপ্রিয় মানুষেরও এসব বিষয়ে কথা বলতে হবে।
তখন সাধারণ মানুষও একে সহজভাবে নিতে শিখবে। শরীরের কোনো অসুখ হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে পারি, তাহলে মনের অসুখে কেন যেতে পারবো না? মানসিক রোগী মানেই পাগল নয়। আমরা দৈনন্দিন জীবনেও প্রতিনিয়ত অনেক ধরনের মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যাই। এসব সামাজিক বাধাগুলো আমাদেরই অতিক্রম করতে হবে।
সাতকাহন২৪.কম : সাতকাহন২৪ এর পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ ।
ফারজানা ফাতেমা : আপনাদেরও ধন্যবাদ।