ফারজানা ফাতেমা (রুমী)
ছোটবেলা থেকে ইংরেজি নতুন বছরের শুরুতে শুভেচ্ছা বাণী লিখে একটি করে ডায়েরি উপহার দিতেন আব্বা। আমার নিয়মিত ডায়েরি লেখার অভ্যাসটা গড়ে উঠেছিল তখন থেকে। ছোটবেলা বলতে, একদম ক্লাস ওয়ান, টু-র কথা। তখন ছড়া লেখার জন্য খুব উৎসাহ দিতেন আমার মা ও মামারা। ছন্দ মিলিয়ে কীভাবে লিখতে হয় শেখাতেন। সেই ছোট বয়সে ডায়েরির পাতা ভরে যেতো, যখন যা মন চায় তা লিখে।
সেই সময়টায় আম্মা বকা দিলে কিংবা আব্বা-আম্মার মাঝে কোনো বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব হলে, সেই কষ্টটাও লিখে ফেলতাম। ঈশপের নীতিগল্প থেকে নেওয়া বোল্ড করা উপদেশ থেকে যেগুলো ভালো লাগতো, সেগুলোও লিখে রাখতাম। কখনো কখনো ডায়েরিটা লুকিয়ে রাখতাম এমন জায়গায়, যেনো কেউ খুঁজে না পায়। শৈশব পেরিয়ে বয়ঃসন্ধিতে পা রাখলাম। ছড়া থেকে শুরু হলো কবিতা লেখা। স্কুল, কলেজের ম্যাগাজিনের পাতায় লিখতাম। প্রশংসাও পেতাম সবার কাছ থেকে। এক সময় দুই টাকা দামের হলুদ খামে করে দৈনিক পত্রিকাতে কবিতা দেওয়া শুরু করলাম। বুঝলাম আমাকে আরও ভালো লিখতে হবে। কারণ, আটটি কবিতা পাঠাবার পর, তারা প্রথম একটা ছেপেছিল। তখন পড়ি মাত্র নবম শ্রেণিতে। আসলে লেখালিখির এই সম্পূর্ণ অভ্যাসটিই মূলত শুরু ডায়রি লেখা থেকে।
ডায়েরিতে আমি এখনো লিখি। আর মনোবিজ্ঞানী হয়ে উঠার সঙ্গে সঙ্গে জেনেছি ডায়েরি লেখা কিম্বা যে কোনো ঘটনাকে জার্নাল করাটা আমাদের চিন্তাকে সুসংগঠিত করতে কতটা সাহায্য করে। একজন মনোবিজ্ঞানী হিসেবে ডায়েরি লেখার উপকারিতাগুলো পাঠকের সঙ্গে শেয়ার করছি।
# আপনি যখন জানবেন, দিন শেষে আমি ৩০ মিনিট নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলবো, কলম নিয়ে বসব- তখন সারাদিনের ক্লান্তি, অবসাদ দূর হয়ে যাবে আপনা থেকেই। সারাদিন হয়তো এমন অনেক কিছু হয়েছে, যা কাউকে বলতে পারেননি। রাগ হয়েছেন, হতাশ হয়েছেন। অথবা কেউ অদ্ভুত আচরণ করেছে, যা আপনার কাম্য নয়। এগুলো লিখে ফেললে নিজেকে অনেক হালকা লাগবে। এ ছাড়া লিখতে পারেন দৈনন্দিন ঘটনা, নিজের অর্জন, নিজের ব্যর্থতা, নিজের ইচ্ছা ইত্যাদি।
# ডায়েরি লেখা বিষয়টি দিন শেষে আয়নার সামনে নিজেকে দাঁড় করিয়ে নিজের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া, নিজের সঙ্গে নিজের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার মতো। এ থেকে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে এবং চারপাশ সম্পর্কে অনুমান করতে সুবিধা হবে; বাড়বে কল্পনাশক্তি। শুধু না বলা কথা নয়, ভ্রমণ অথবা নতুন কোনো অভিজ্ঞতাও ডায়েরিতে লিখে ফেলতে পারেন। তবে লেখার রসদ হিসেবে আপনার শব্দভাণ্ডার ও জ্ঞানের পরিসীমা বাড়াতে চাইলে অন্যের লেখা অভিজ্ঞতাগুলো পড়ে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
# অনেকেই ভাবেন ডায়েরিতে আবার কী লিখব ! সারাদিন তো ইনবক্সে কত কি লিখছিই ! তাদের জন্য ছোট্ট একটা টিপস দিতে চাই। আর তা হলো, দিন শেষে আজকের তারিখ দিয়ে শুধু ৩টি পয়েন্ট লিখতে পারেন-
১। আজকে নতুন শিখেছি (New Learning)
২। আজকে কৃতজ্ঞ বোধ করেছি (Gratitude)
৩। আজকে দয়ালু হয়ে যা করেছি অথবা আমার প্রতি কেউ দয়ালু ছিল (Kindness)
# হয়তো ভাবছেন এর কোনোটাই আজকে করা হয়নি। তাহলে কি একটু ভেবে দেখবেন যে আগামীকাল থেকে এই ৩ টি পয়েন্ট আপনার ডায়েরিতে লেখার জন্য নতুন করে কীভাবে দিন সাজানো যায়? অন্তত আগামী এক মাস চেষ্টা করে দেখুন না! শুভ কামনা।
লেখক : সাইকোলজিস্ট, প্রতিষ্ঠাতা সোনারতরী