সাতকাহন২৪. কম ডেস্ক
জাকিয়া আক্তার পুষ্পা ২০১৭ সালের শেষের দিকে উজ্জ্বলায় কোর্স করতে আসেন। কোর্স শেষে বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে বিউটি আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করেন। নরসিংদীতে নিজস্ব একটি বিউটি স্যালন রয়েছে তাঁর। উদ্যোক্তা হিসেবে অত্যন্ত সফল এই মেয়েটির মাসিক আয় প্রায় লাখ খানেক টাকা। বর্তমানে নরসিংদিতে উজ্জ্বলার ফ্যাকাল্টি হিসেবে কাজ করছেন তিনি। তাঁর পথচলা কেমন ছিলো, জীবনের চড়াই-উৎরাইগুলো কীভাবে মোকাবিলা করেছেন- এসবেরই গল্প জানবো তাঁর নিজের ভাষায়।
আসলে বিউটি আর্টিস্ট শখ থেকে হয়েছি এমন নয়। নিজেকে স্বাবলম্বী করার জন্য আমার একটি পেশা দরকার ছিলো। আর এই পেশাটি আমার কাছে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ মনে হয়েছে, তাই আসা। আমার সবসময় মনে হতো পরিবারের পাশে দাঁড়াবো। শক্ত হবো, আয় করে পরিবারকে দেবো। আমরা দুই বোন এক ভাই ছিলাম। বড় বোন ২০১৩ সালে মারা যায়।
ছোটবেলায় আমি সব করতাম- নাচ ,গান, ফুটবল খেলা। এই জন্য অনেকে অপছন্দ করতো। আমাকে শুনতে হয়েছে যে সবকিছুই করছি। আসলে কিছুই পারবো না। আঞ্চলিক ভাষায় শুনাতো, আমি সবকিছুতেই ‘খাবলাখাবলি’ করি। তখন খুব জেদ হলো কিছু করার।
কলেজে ভর্তি হওয়ার পর একটি স্থানীয় পার্লারে কাজ শিখি। মা টাকা দিয়েছিলো। শেখানে শেখানো ভালো লাগছিলো না। এরপর আমার নাচের শিক্ষক আরেকটি জায়গার কথা বললো শেখানে শিখি। তবে তখন আর মায়ের কাছ থেকে টাকা চাওয়ার সাহস পাইনি। মোবাইল বিক্রি করে দিয়েছিলাম টাকা জোগাড় করতে। এরপর বাসায় একটি পার্লার দিই খুব ছোট করে। তবে কাজ করতে গিয়ে মনে হচ্ছিলো আরো দক্ষ হওয়া দরকার। নিজের কাজে সন্তুষ্ট হতে পারছিলাম না। তখন উজ্জ্বলার বিজ্ঞাপন দেখি। উজ্জ্বলায় একটি ফ্রি সেমিনার হয়। সেখানে বিউটি আর্টিস্ট আফরোজা পারভীন মেডামের ক্লাস করি। সেটা খুব ভালো লাগে। এরপর উজ্বলায় কোর্স করা। তারপর বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে কাজ করার সুযোগ পাই। ২০১৯ সালে নরসিংদী শহরে পার্লার দিই।
ঢাকা শহরে গিয়ে কোর্স করার ক্ষেত্রে প্রথমে বাবা রাজি ছিলো না। অনেক সময় মিথ্যে বলে কোর্স করতে গিয়েছি। পরে অবশ্য যখন টিভিতে কাজ করি এবং নিজের পার্লার থেকে ভালো আয় করতে শুরু করি, বাবা খুশি হন। বাবার প্রায় ২২ লাখ টাকার ঋণ ছিলো, সেটা আমি পূরণ করেছি। মা ও আমার স্বামী আমাকে কাজের ব্যাপারে বেশ সহযোগিতা করে।
বর্তমানে বাবার সংসারে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করতে পারি, আর নিজের সংসার তো আছেই। এই ভেবে ভালো লাগে, আমি মা-বাবার জন্য কিছু করতে পারছি। আমি নিজেই ছেলের মতো কাজ করছি।
এলাকার যেসব মানুষ আমাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করতো, এখন তারাই আমাকে বাহবা দেয়। ছেলে-মেয়েদের বলে, ‘পুষ্পার মতো হও। সে বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে।’ নরসিংদীতে এখন অনেকে আমাকে দেখে উৎসাহিত হয়। এটা ভালো লাগে।
আমার বিয়ে হয় ২০২১ সালে। আফরোজা ম্যাম নিজের হাতে সাজিয়েছেন আমাকে। ভাগ্যবতী না হলে এই সুযোগ হয় না।সেদিন আমার বাবা ম্যামকে বলেছিলেন, ‘আপনি আমার মেয়েকে সঠিক পথে সঠিকভাবে গড়ে তুলেছেন।’ আমি ম্যামের কাছে ভীষণ কৃতজ্ঞ। সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে উজ্জ্বলা থেকে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি আমি।
উজ্জ্বলায় প্রথমে শিক্ষার্থী ছিলাম। এরপর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। এরপর ফ্যাকাল্টি। এই প্রতিষ্ঠানটি আমাকে নিজের নামে পরিচিত হতে সাহায্য করেছি। কেবল কাজ করা শেখায়নি, ভেঙে যাওয়া নারীকে কীভাবে দাঁড় হতে হয় সেটিও শিখিয়েছে। এই জন্যই নিজেকে উজ্জ্বলা মনে করি। নিজের কাজ নিয়ে আরো সামনে এগিয়ে যেতে চাই।
বি : দ্র : বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে উজ্জ্বলা লিমিটেড। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক পর্ব চলছে। এই পর্বটি ছিলো ১৯তম।