সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক
অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে বিয়ে করেন রাবেয়া তাসনিম। প্রেমের সময় সম্পর্কটা যত মধুর ছিল, বিয়ের পর যেন ততটাই তিক্ত হয়ে উঠে।
স্বামী বিভিন্ন কারণ নিয়েই রাবেয়াকে প্রচুর শারীরিক নির্যাতন করতো। এক পর্যায়ে লেখাপড়াও বন্ধ করে দেয়। এর মধ্যে অনেকটা শ্বশুড় বাড়ির বিরুদ্ধে গিয়ে লেখাপড়া করে এসএসসি পাশ করেন রাবেয়া। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ডিভোর্স দেয় সে।
বিপর্যস্ত রাবেয়া ভাবছিলেন কী করা যায়? কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়? লেখাপড়া শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর এক অদম্য ইচ্ছা ছিল তাঁর। বর্তমানে বিউটিফিকেশন শিখে রাবেয়া একটি স্যালন খুলেছেন। প্রথম মাসেই আয় হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।

‘ ডিভোর্সের পর আমি ঢাকায় চলে যাই। সেখানে দুই বছর বিউটিফিকেশনের কোর্স করি। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান ‘জয়িতা ফাউন্ডেশন’ ও বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং সেক্টরের পথ প্রদর্শক উজ্জ্বলার যৌথ উদ্যোগে কক্সবাজারে একটি প্রশিক্ষণ হয়। সেখানে অংশ নেই। এই ১০ দিনের প্রশিক্ষণ আমার জীবন বদলে দেয়। এখানে অংশ নিয়ে আমার আত্মবিশ্বাস বাড়ে। সাহস পাই নিজের স্যালন খোলার এবং স্যালন চালু করি’- বলছিলেন রাবেয়া।
আমার মায়ের জন্ম হয় দুবাইয়ে। নানা-নানু সেখানেই থাকতেন। তারা বাঙালি ছিলেন। আমার মায়ের বিয়ের পর তিনি কক্সবাজারে চলে আসেন। আমার মা খুব সৌখিন ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই আমাকে খুব সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখতেন। আমিও গুছিয়ে থাকতে পছন্দ করতাম। ইন্টারনেটে প্রচুর ভিডিও দেখাতাম মেকআপের ওপর। যখন আমার ডিভোর্স হয়, ভাবছিলাম নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। তখনই মাথায় আসে বিউটি আর্টিস্ট হওয়ার কথা। এটি একটি ভালো পথ হতে পারে, যা দিয়ে আমি স্বনির্ভর হতে পারবো। এখন তা-ই হয়েছি- জানান রাবেয়া।

যত বাধাই আসুক না কেন, প্রতিটা মেয়ের আত্মনির্ভরশীল, স্বনির্ভর হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানো খুব জরুরি মন্তব্য করে রাবেয়া বলেন, ‘ অন্তত আমি আমার জীবন দিয়ে সেটি বুঝেছি। ছোটবেলায় বিয়ে করে একটি ভীষণ ভুল করেছিলাম, যার মাশুল দিয়ে যাচ্ছি এখনো। আমার স্বামী ভীষণভাবে আমাকে শারীরিক নির্যাতন করতো। বেল্ট, গাছ- হাতে যা পেতো তাই দিয়ে মারতো। একবার আমার ছোট একটি অপারেশন হয়। অপারেশনের ১৩ দিনের সাথায় আমাকে এমনভাবে মারে যে সেখানে ইনফেকশন হয়ে যায়। এখনো জায়গাটি ঠিক হয়নি।এর মাঝে আবার আমার বাবা মারা যায়। স্বামীর নির্যাতন, বাবার মৃত্যুর কষ্ট- সব আমাকে ভীষণ বিপর্যস্ত করে তুলেছিল। শুধু পথ খুঁজতাম কীভাবে মুক্তি পাবো। বিউটিফিকেশন আমাকে সেই পথ দেখিয়েছে।’

এই পেশায় আরো নারী আসুক। এটি বিশাল একটি ইন্ডাসট্রি। এখানে মেয়েদের কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। ভবিষ্যতে নিজের স্যালনকে আরো বড় করতে চাই- বলেন রাবেয়া।
বি : দ্র : বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে উজ্জ্বলা লিমিটেড। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক পর্ব চলছে। এই পর্বটি ছিলো ৬৯তম। উজ্জ্বলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন :
https://www.facebook.com/UjjwalaBD
https://www.instagram.com/UjjwalaBD/
ফোন : ০১৩২৪৭৩৪১৫৭