উজ্জ্বলা লিমিটেড, বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। নারীকে যোগ্য করে তুলতে অনলাইন ও অফলাইন ক্লাসের মাধ্যমে বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিংয়ের সব খুঁটিনাটি শেখানো হয় এখানে। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছে এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারীর সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক বিশেষ আয়োজনের আজ রইল ১০ম পর্ব। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাশ্বতী মাথিন।
১০ম পর্ব- রেহানা ইয়ছমিন পুষ্প
নিজে সাজেন কম, তবে সাজাতে ভীষণ ভালোবাসেন রেহানা ইয়ছমিন পুষ্প।ছোটবেলায় আশপাশের যখন কেউ সাজতো, সেই ঘরে হয়তো ঢুকতে দেওয়া হতো না তাকে। খুব মন খারাপ হয়ে যেতো, আফসোস হতো। তবে এখন নিজেই মেকআপ আর্টিস্ট। উজ্জ্বলাসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেই পার্লার খুলেছেন চট্টগ্রামে। উদ্যোক্তা হয়েছেন, হয়েছেন স্বাবলম্বী।
বড় হয়ে ছাত্রী জীবনে বান্ধবী বা তাদের আত্মীয়দের অনুষ্ঠানে মেহেদি পরানো, মেকআপ করে দেওয়ার কাজটি করতাম জানিয়ে রেহানা ইয়ছমিন জানান, এভাবেই চলছিলো সময়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সোসিওলজিতে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করার পর কিছুটা অবসর পাওয়া গেল। সে সময় আমি ও আমার এক বান্ধবী মিলে চট্টগ্রামের একটি পার্লার থেকে বেশ কিছুটা স্যালনের কাজ শিখি। তখন এই পেশাকে কেউ ভালো চোখে দেখতো না। বাবা বললেন, ‘এত পড়াশোনা শিখে চাকরি-বাকরি করবে। এসব কাজ কেন করবে? ‘ মধ্যবিত্ত রক্ষণশীল পরিবারে যা হয় আরকি। আমি বললাম, ‘শিখে রাখি।’ বাবা কোনো টাকা-পয়সা দেয়নি শিখতে। ধীরে ধীরে ইন্সটলমেন্ট দিয়ে শিখলাম। শেখার পর দুই বান্ধবী মিলে একটি স্যালন দিলাম। ইতোমধ্যে লোকাল একটি এনজিওতে আমার চাকরি হয়। এরপর পার্লারটি ছেড়ে চলে আসি।
চাকরি করলে কী হবে, কাজ শেষে পার্লারে গিয়ে বসে থাকতাম। এত ভালোবাসতাম আসলে বিষয়টিকে। একটা নেশা ছিলো। ওই কষ্ট থেকে ভাবতে থাকলাম কী করা যায়। এরপর চাকরি করতে করতেই নিজে একটি পার্লার দিলাম। অফিসের পরে ও বন্ধের দিন সেটা চালাতাম। এভাবে এক বছর চলেছে। এরপর ভাবলাম চাকরি ছেড়ে দিই। যখন এটাই ভালো লাগে এটা নিয়েই কাজ করি। এখন নিজের পার্লারই চালাচ্ছি- জানান রেহানা।
আমাদের সময় ভালো প্রশিক্ষণ সেন্টার ছিলো না জানিয়ে রেহানা বলেন,’২০০৬ এর দিকের কথা বলছি। নিজের পার্লার চালু করার পর ভীষণ অভাব বোধ করছিলাম সম্পূর্ণ ও সঠিক একটি প্রশিক্ষণের জন্য। আর যেসব প্রতিষ্ঠান ছিলো সেখানেও অনেক খরচ। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় গিয়ে আমাদের মতো পরিবারের জন্য এটি সম্ভব নয়। এর মধ্যে আমি চট্টগ্রাম ওমেন চেম্বারের সদস্য হই। ২০১৩ তে গিয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের একটি কোর্স করানো হয়। ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ ছিলো এটি। এর মধ্যে উজ্জ্বলার পোস্ট দেখলাম। ২০১৭ সালে ব্র্যাকের একটি প্রশিক্ষণ হয় উজ্জ্বলার মাধ্যমে। ওখানে দেশের অন্যতম রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা আপার সঙ্গে দেখা। এরপর ঢাকায় গিয়ে উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিই। বিভিন্ন ছোট ছোট কোর্স করি।বর্তমানে বিউটি আর্টিস্টদের প্রশিক্ষণের সুযোগ বেড়েছে।’
আমার পার্লারটি ভালোই চলছে। তবে সমস্যা হলো প্রশিক্ষণ দিয়ে হয়তো কয়েকজন কর্মী তৈরি করলাম, শেখার পর অন্য পার্লারে চলে গেলো- জানান রেহানা।
বর্তমানে আমি ভালোলাগার কাজটি করতে পারছি জানিয়ে রেহানা বলেন, ‘উজ্জ্বলা আমাকে সেই কাজটি করতে সহজ করে দিয়েছে। আমি যতটুকু আয় করছি, তা থেকে পরিবারকে ১০০ ভাগ সহযোগিতা করছি। আমাকে কারো উপর নির্ভরশীল হতে হয় না। আত্মসম্মান নিয়ে টিকে আছি। এ জন্য নিজেকে একজন উজ্জ্বলা মনে হয়।’
রেহানা স্বপ্ন দেখেন নিজের ব্যবসাকে আরো বড় করার। বললেন, ‘এখন এলাকা ভিত্তিক কাজ করছি। প্রধান শহরে এসে পার্লার খুলতে চাই। আমার কাজটাকে সবাই জানুক এটা চাই। আমি না থাকলেও আমার কাজ নিয়ে মানুষ কথা বলুক।’