সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক
ক্লাস ওয়ান থেকে টু-তে উঠার সময় বাবা মারা যায় জেসমিন আরা মমর। অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, মানসিক কষ্ট, সংসারকে এগিয়ে নেওয়ার লড়াই দেখতে দেখতে একটা সময় ভীষণভাবে মনে হয়, নিজের একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করতে হবে; লেখাপড়া, কাজ সবকিছুতেই ভালো করা লাগবে।
বর্তমানে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগে স্নাতক শেষ করেছেন। স্নাতকোত্তরে ভর্তি হবেন। পাশাপাশি বিউটি ফিকেশনের ওপর বিভিন্ন কোর্স করে ফ্রিল্যান্সিং করছেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করেই তার মাসিক আয় হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এটি তাকে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সাহায্য করছে। এই মেয়েটির অদম্য মানসিক শক্তি ও জীবনে লড়াইয়ে গল্পই জানবো তার মুখ থেকে-
মেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে
ছোটবেলা থেকে জীবনে প্রতিবন্ধকতাগুলো দেখেছি। এক সময় ভীষণ জেদ চেপে যায়। তখন থেকেই জানি, নিজের পায়ে দাঁড়ানো, পায়ের মাটি শক্ত করা একজন নারীর জন্য কতটা জরুরি। জীবনে যত বাধা এসছে, সেগুলো আমাকে আরো শক্ত করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। আমার জেদ ছিল, সবভাবেই ভালো করতে হবে- লেখাপড়া হোক, কাজ হোক, যেকোনো কিছুতেই। এ জন্য আমি লেখাপড়াকে ঠিক রেখেছি। আর বিউটিফিকেশনের কাজটাকে ভালোবেসে মনোযোগ দিয়েছি।
যেখানে প্রশিক্ষণ
২০২৩ সালের জুন মাসে বিউটি সেক্টরে উদ্যোক্তা তৈরি করে নারীকে স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভশীল করতে বাংলাদেশ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান ‘জয়িতা ফাউন্ডেশন’ ও বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং সেক্টরের পথ প্রদর্শক উজ্জ্বলার যৌথ উদ্যোগে সাভারে ১০ দিনব্যাপী এক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রশিক্ষণ নেন উজ্জ্বলার সহ প্রতিষ্ঠাতা ও রেড বিউটি স্যালনের স্বত্বাধিকারী বিউটি আর্টিস্ট আফরোজা পারভীন। সেখানে বিউটিফিকেশনের ওপর কোর্স করি।
এর আগে ২০১৫ সালে এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে তিন দিনের একটি বিউটিফিকেশন কোর্স হয়। সেখানেও প্রশিক্ষণ নেন আফরোজা পারভীন ম্যাম। তার কাছে কাজ শিখেছি। বর্তমানে লেখাপড়ার পাশাপাশি ফ্রি ল্যান্সিংটা বেশ ভালোভাবে করে যাচ্ছি। বিউটি আর্টিস্ট হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার একটি আলাদা পরিচয় রয়েছে।

বিউটিফিকেশনকে কেন পেশা হিসেবে চিন্তা করি?
আসলে এই চিন্তাটা আসে আসে কৈশোর থেকে। আমার ও আমার মায়ের গায়ের রং একটু গাঢ়। যখনই এলাকার কোনো পার্লারে সাজতে যেতাম, কয়েক শেড ফর্সা করে দেওয়ার চেষ্টা করতো। বললেও তারা শুনতো না। বিষয়টি আমাদের পছন্দ হতো না। তখন মনে হলো সাজ শেখাটা জরুরি। আবার একে তো পেশা হিসেবেও নেওয়া যায়। তাহলে একেই ভালোভাবে শিখি। সেই ভাবনা থেকেই শিখতে শুরা করা।
আর বিউটিফিকেশনকে সম্পূর্ণ পেশা হিসেবে তৈরি করতে যেই মানুষটি উৎসাহ দিয়েছেন তিনি আফরোজা পারভীন ম্যাম। আমি তাকে খুব অনুকরণ করি। আমার বিউটিফিকেশনের ধারণায় আমূল পরিবর্তন, নিয়ে এসেছেন তিনি। মেকআপের প্রতি যে ভালোবাসা তার শতভাগ অবদান আফরোজা পারভীন ম্যামের। কোর্সগুলোতে মেডাম সবটা ঢেলে শিখিয়েছিলেন। শুরুর দিকে যা যা দরকার, তার সবটাই তিনি শেখান। এসব কোর্স করে শিখেছিলাম, অল্প প্রোডাক্ট দিয়ে কীভাবে গর্জিয়াসভাবে সাজা যায়।
যেহেতু আমি শিক্ষার্থী, আর আমার কাছে ব্যবসার জন্য মূলধন তেমন ছিল না, তাই একটু একটু করে টাকা দিয়ে প্রোডাক্ট কিনে, সেগুলো দিয়ে সাজিয়ে টাকা আয় করে আরো প্রোডাক্ট কিনেছি। এই বিষয়টিও তিনিই শিখিয়েছেন। আজ যতটা কাজ জানি তার সম্পূর্ণ ক্রেডিট উজ্জ্বলার।
ভবিষ্যতে মেকআপ স্টুডিও করার ইচ্ছা। এখনতো কাজটি আমার পার্টটাইম করছি। পরে একে ফুলটাইম নেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।
বি : দ্র : বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে উজ্জ্বলা লিমিটেড। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক পর্ব চলছে। এই পর্বটি ছিলো ৬২তম। উজ্জ্বলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন :
https://www.facebook.com/UjjwalaBD
https://www.instagram.com/UjjwalaBD/
ফোন : ০১৩২৪৭৩৪১৫৭