সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক
‘রাজা সোনার রথে শীকারে চল্লেন। দুপাশে দুই রাজহস্তি চামর ঢোলাতে চল্লো, ছত্রধর রাজছত্র ধরে চল্লো, জয়ঢাক বাজতে বাজতে চল্লো, আর সর্ব্বশেষে প্রিয়সখা মাধব্য এক খোঁড়া ঘোড়ায় হট্হট্ করে চল্লেন’ — শকুন্তলা পড়তে গিয়ে এমন ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই পেয়েছেন? এবারের পহেলা বৈশাখের শাড়ির নকশায় এই ধরনের একটি দৃশ্যপট তুলে এনেছে ফ্যাশন হাউজ হরিতকী।
হরিতকীর সহকারী প্রতিষ্ঠাতা অনিক কুণ্ডু বলেন, ‘বৈশাখ উপলক্ষে আমরা ট্রেডিশনাল মোটিফের পোশাক আনার চেষ্টা করেছি। পোশাকে তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে বাঙালি সংস্কৃতি, এই উপমহাদেশের ঐতিহ্য। মোটিফ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে কুলাচিত্র, রাজাদের সুসজ্জিত রাজহস্তী, জয়ঢাক, হাতিশালের চামর, রাজ প্রহরী, রিক্সা প্রিন্ট ইত্যাদি।’
আসলে বাঙালির কাছে পহেলা বৈশাখ এক ভিন্ন স্বতন্ত্রতা নিয়ে আসে। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র সব কিছু ছাপিয়ে এ দিনটি হয়ে উঠে আপামর বাঙালির। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে প্রথম দিনটিতে উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি থাকে না।
চারদিকে গানের উৎসব, শোভাযাত্রা, মিঠাই-মণ্ডা পান্তা ভাতের আয়োজন- সব মিলিয়ে ঘোরাঘুরি, আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া চলে দিনমান। এই দিনটিকে বিশেষ করে তুলতে সাজ-পোশাকেও আসে ভিন্নতা। আর তাই ফ্যাশন হাউজগুলোতে তাদের শাড়ি ও পোশাকের নকশায় ‘বাংলা’-কেই তুলে ধরার চেষ্টা থাকে শতভাগ।
‘বৈশাখ শুনলেই মনে আসে নানা রঙের খেলা। বৈশাখের রঙের প্রতীক হিসেবে সাদা ও লালকে ধরা হয়। তবে এখন সাদা লালের পাশাপাশি পোশাকগুলোতে যোগ হয়েছে নানা রঙের মিশ্রণ। ইট, সবুজ, নীল, গোলাপি, মেরুণ, টিয়া, হলুদ, কমলা ইত্যাদি রঙের সমন্বয়ে তৈরি হয় পোশাক,’ বলছিলেন ফেসবুককেন্দ্রিক ফ্যাশন পেজ নীলপদ্ম বুটিকসের স্বত্বাধিকারী ও ফ্যাশন ডিজাইনার তাজমিন নাসরিন।
ফ্যাশন ডিজাইনার তাজমিন নাসরিন জানান, বৈশাখে যেহেতু গরম থাকে, তাই পোশাকগুলো নির্বাচন করা হয় আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে। এমন পোশাক তৈরি হয়, যেগুলো আরামদায়ক হবে। এই ক্ষেত্রে সুতি, হাফ সিল্ক, সিল্ক ধরনের কাপড়গুলো বেছে নেওয়া হয়। আর এই ধরনের পোশাক পরলেই আরাম পাওয়া যাবে।
পোশাক নির্বাচনের পর নববর্ষের দিনতে নিজেকে বিশেষভাবে উপস্থাপন করতে চলে আসে সাজের কথা। ‘তবে গরমের কারণে সাজটা যত হালকা হয়, ততই ভালো,’ বলেন রূপায়ণ বিউটি পার্লারের কর্ণধার শিউলি আকতার।
সাজে চুলের ক্ষেত্রে হাতখোঁপা করতে পারেন। সামনের কিছু চুল ছাড়া রাখা যেতে পারে আবার টুইস্ট করেও বেঁধে নিতে পারেন। তবে পেছনে সুন্দর করে হাত খোঁপা করলেই ভালো দেখাবে। একদম ছেড়েও রাখতে পারেন। এ ছাড়া সাইড বেণিও করা যেতে পারে। চুলের সাজে অনত্যম অনুষঙ্গ ফুল। চুলে ফুল অবশ্যই থাকবে।
‘মুখের সাজটা ন্যাচারাল হলেই ভালো। মুখ ধুয়ে প্রথমে ময়েশ্চারাইজার, প্রাইমার দিন। এরপর কনসিলার ব্যবহার করুন। এবার স্কিন টোন বুঝে ভালো ব্র্যান্ডের ফাউন্ডেশন লাগান। এর ওপর লুজ পাউডার বুলিয়ে নিন। মুখের যেই জায়গাগুলো প্রমিনেন্ট করতে চান, সেখানে কন্টোর করে নিন। গালে ব্লাশন দিন,’ বলেন রূপবিশেষজ্ঞ শিউলি আকতার।
যেহেতু সারাদিন বাইরে ঘোরাঘুরি করা হয় এই দিনে, তাই লিপস্টিকের ক্ষেত্রে নুড রং ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন— ইট, গোলপি, বেবি পিংক, হালকা ম্যাজেন্টা ইত্যাদি। অনেকে আবার লাল রঙও ব্যবহার করে। লিপস্টিকের রং যাই থাকুক না কেন দেখতে হবে, এটি যেন পোশাকের সঙ্গে মানানসই হয়।
চোখের সাজের শুরুতে আই ব্রু কালার পেনসিল দিয়ে শার্প করে নিন। এরপর শাড়ি বা পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে মানানসই শ্যাড ব্যবহার করুন। শাড়ি লাল-সাদা হলে চোখের পাতায় ব্রাউন বা রেডিস রঙের ছোঁয়া আনতে পারেন। আবার স্মোকি করেও চোখ সাজানো যায়। সাজের পর অবশ্যই সেটিংস স্প্রে ব্যবহার করতে হবে। সাজটিতে যেন সম্পূর্ণ বাঙালিয়ানা থাকে। এমনটাই পরামর্শ দেন রূপবিশেষজ্ঞ শিউলি আকতার।