শাশ্বতী মাথিন
‘ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে,
ডালে ডালে ফুলে ফুলে পাতায় পাতায় রে,
আড়ালে আড়ালে কোণে কোণে।’
বসন্ত মানেই প্রকৃতিতে রঙের খেলা। শীতের শুষ্ক-রুক্ষতাকে পায়ে দলে প্রকৃতি সাজে নতুন রঙে। কোকিলের কুহু সুর আর ফুলে ফুলে প্রজাপতির মেলা বসন্তের আগমনীকে আরও সরব করে তোলে। ফাগুনের উদাসী বাতাস আর রঙের এই সমারোহ প্রভাব ফেলে মানুষের মনেও। তাই তো বসন্তের প্রথম দিনটি বরণ করে নিতে এত আয়োজন; অপেক্ষা।
যেহেতু এবার পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস একই সঙ্গে পড়েছে, তাই সাজ-পোশাকে দুটোরই আবেদন থাকতে পারে। কয়েক বছর ধরে বসন্ত মানেই যেন হলুদ, কমলা বা সবুজ রঙের শাড়ি। এবারে কিন্তু শাড়ির রঙে রয়েছে ভিন্নতা। বাসন্তী, কমলা বা হলুদের সঙ্গে যোগ হয়েছে চাপা সাদা, মেজেন্টা, গোলাপি, সবুজ, লাল, টিয়া, পিচ, নীল, বিস্কিট ইত্যাদি রং। ভালোবাসা দিবসের থিম রং বলতেই যেমন লালকে ধরা হতো, এবার কিন্তু এর পরিবর্তন হয়েছে। বাসন্তী ও লাল রঙের একসঙ্গে মিশেল দেখা গেছে পোশাকের ভেতর।
ফ্যাশন হাউস কে ক্র্যাফট-এর প্রতিষ্ঠাতা খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘আমরা সব সময়ই বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে ভিন্নধর্মী পোশাক উপস্থাপনের চেষ্টা করি। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। এবার ফ্লোরাল, ট্র্যাডিশনাল, মানডালা, ওরিয়েন্টাল, মিক্সড মোটিফ, মুঘল, বেলারুস, জামদানি ইত্যাদি নানা মোটিফে তৈরি করা হয়েছে পোশাক। কটন, স্লাব কটন, লিনেন, সিল্ক, হাফ সিল্ক, অরগাঞ্জা, টু-টোন কাপড়ে তৈরি পোশাকগুলোতে নকশা ফুটিয়ে তুলতে হাতের কাজ, এমব্রয়ডারি, স্ক্রিন, ব্লকপ্রিন্ট, ডিজিটাল প্রিন্ট ও টাই-ডাই মিডিয়ার ব্যবহার হয়েছে। এগুলো পরে যে কেউ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।’

ফাগুনের প্রথম দিনটিতে রঙিন পোশাক পরবেন আর একটু ভিন্নভাবে সাজবেন না, তা কি হয়? পোশাকের পাশাপাশি সাজেও আনতে পারেন বৈচিত্র্য।
‘বসন্ত মানেই যেহেতু রঙিন কিছু, তাই সাজেও থাকবে রঙের ব্যবহার। তবে তা হবে পরিমিত’, বলছিলেন বিউটিফিকেশন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উজ্জ্বলার ফ্যাকাল্টি ও রূপ বিশেষজ্ঞ সুপ্রিতী গােস্বামী। তিনি বলেন, ‘এদিন দিনের বেলায় চোখের মেকআপে হালকা রঙের ব্যবহার করাই ভালো। যেমন : হালকা গোলাপি, সবুজ, জলপাই ও বাদামি ইত্যাদি রং।’
চোখে পরতে পারেন কাজল বা টানা আইলাইনার। মাশকরা অবশ্যই থাকবে। আর সেটা হবে ডাবল লেয়ারের। এ ছাড়া চোখের ওপর কাজল টেনে হালকা ম্যাশ করে নিতে পারেন। এতে খুব কম মেকআপেই চোখ ভরাট মনে হবে।
দিনের বেলার ত্বকের বেইজ মেকআপ হবে খুব হালকা। একেবারে স্কিন টোন অনুযায়ী। একটু বিবি বা সিসি ক্রিম ব্যবহার করে কমপ্যাক্ট বুলিয়ে নিন। গালে ও চিক বোনে লাগান টিনট ব্লাশন। ঠোঁটে লাগাতে পারেন মানানসই ম্যাট বা ন্যুড লিপস্টিক। খোঁপায় একটা-দুটো জারবেরা বা গোলাপ থাকলে তো সোনায় সোহাগা। এই তো হয়ে গেল দিনের বেলার সাজ।

তবে রাতে বেইজ মেকআপটা একটু ভারী করতে পারেন। এমনটা জানিয়ে রূপ বিশেষজ্ঞ সুপ্রিতী গোস্বামী বলেন, ‘এই সময় হালকা গ্লিটারি বা একটু গাঢ় রঙের মেকআপ করা যেতে পারে। চোখে পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে সবুজ, গোলাপি, ব্লু স্মোকি রঙের ব্যবহার থাকুক। লিপস্টিক একটু গ্লোসি হলেও চলবে। তবে যেহেতু শীত থেকে গরমের দিকে আবহাওয়া মোড় নিচ্ছে, তাই মেকআপের আগে ত্বকের যত্নটা বিশেষভাবে নিতে হবে। মেকআপের আগে অবশ্যই ক্লিনজিং, টোনিং ও ময়েশ্চারাইজিং ভালোভাবে করে নেবেন। আর সাজে পরিপূর্ণতা আনতে হাতভর্তি চুড়ি, মেটাল বা কাপড়ের গয়না এবং কপালে টিপ পরতে ভুলবেন না যেন।’
সাজ মানুষের ব্যক্তিত্ব ও রুচির পরিচায়ক। তাই বিশেষ এই দিনটিতে এমনভাবে সাজুন, যেন সেটি আপনার ব্যক্তিত্ববিরোধী না হয় এবং অন্যের চোখকেও আরাম দেয়। বসন্ত কাটুক আনন্দে।