Tuesday, October 8, 2024
spot_img
Homeঅন্যান্যবসন্ত বারতা

বসন্ত বারতা

শাশ্বতী মাথিন

বসন্তের আগমনী শোনা যাচ্ছে। মাঘের সন্ন্যাসী বিদায় নিয়েছে রিক্ত হাতে। পাতা ঝরার দিন শেষ। বসন্তকে বরণ করতে প্রকৃতি সাজতে শুরু করেছে নতুন সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে। প্রকৃতির মতো মানুষের মনে দোলা দেয় ফাগুন। ভালোবাসা আর বসন্তের ছোঁয়ায় একাকার মনের কোণ নিজেকেও রাঙাতে চায় নতুন রূপে।

তাই তো শিল্পী-সাহিত্যিকরা বসন্তের আগমনী রূপের বর্ণনায় মেতেছেন তাদের সৃষ্টকর্মে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘বসন্তে ফুল গাঁথল আমার জয়ের মালা।/ বইল প্রাণে দখিন-হাওয়া আগুন-জ্বালা’, ‘ফাগুন, হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান—/ তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান—/ আমার আপনহারা প্রাণ আমার বাঁধন-ছেঁড়া প্রাণ’, অথবা ‘ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে—’। কবি সুব্রত পাল তার কবিতা ‘থেকো, বসন্তসন্ধ্যায়’-তে লিখেছেন—
‘যদি বসন্ত পলাশ খোঁজে, খুঁজুক। তুমি খুঁজো না
রাঙামাটির পথে হাঁটতে ইচ্ছে করলে, হেঁটো না
শুধু আমাকে খুঁজো
আমি তো দুরন্ত ফাল্গুন গোটা গায়ে মেখে
তোমার জন্য বসে আছি।’

বসন্তদিনে কবি-মন যেমন উদ্বেল, তেমনি পহেলা ফাল্গুনকে বরণ করে নিতে বাঙালিও সাজে বাসন্তী সাজে। নারীরা খোঁপায় জারবেরা, গোলাপ বা গাঁদা গুঁজে হলুদ, লাল বা বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে দল বেঁধে ভিড় জমায় শহরের প্রাণকেন্দ্রগুলোতে। তাদের সঙ্গে মিলিত হয় পরিবারের পুরুষ বা শিশু সদস্যটি। প্রেমিক, বন্ধু, পরিবার-পরিজন নিয়ে চলে দিনমান আড্ডা। গান-কবিতায় নেচে ওঠে গোটা শহর।

ছবি : হরিতকী
ছবি : হরিতকী

বাঙালি নারীর কাছে উৎসব মানেই শাড়ি। বেশ কয়েক বছর ধরে পহেলা ফাল্গুনের দিনটিতে হলুদ বা বাসন্তী রংকেই প্রাধান্য দেওয়া হতো। তবে এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মেজেন্টা, গোলাপি, সাদা, চাপা সাদা, পেস্ট, নীল ইত্যাদি হালকা রং। আর নকশাতে প্রাধান্য পাচ্ছে ফুল, পাতা,পাখি, রিকশা, কুলা ইত্যাদি বাঙালির নিত্যব্যবহার্য অনুষঙ্গ আর প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি। ফেসবুককেন্দ্রিক ফ্যাশন পেজ নীলপদ্ম বুটিকসের স্বত্বাধিকারী ও ফ্যাশন ডিজাইনার তাজমিন নাসরিন বলেন, ‘বর্তমানে আমরা হলুদ বা হলুদের শেডগুলো বাদ দিয়েও পোশাকের রং নির্বাচন করছি। বসন্তকাল তো আসলে ফুলের আয়োজন। কেবল হলুদ ফুলের মধ্যেই তা কেন সীমাবদ্ধ থাকবে?’

ছবি: নীলপদ্ম বুটিকস
ছবি: নীলপদ্ম বুটিকস

ফ্যাশন হাউস হরীতকীর সহকারী প্রতিষ্ঠাতা অনিক কুণ্ডু জানান, এখন মানুষের রুচির ভিন্নতা এসেছে। তারা এমন একটি পোশাক কিনতে চায় যেটা কেবল উৎসব নয়, অন্যান্য সময়েও ব্যবহার করা যায়। তাই বসন্তকে মাথায় রেখে পোশাকের ক্ষেত্রে হালকা রং নির্বাচন করেছি আমরা। আবার যেন অন্যান্য সময়েও এগুলো পরা যায়। সুতি, হাফসিল্ক, জর্জেট ইত্যাদি কাপড়ের ভেতর থাকছে শাড়িগুলো।

ছবি : হরিতকী
ছবি : হরিতকী

ফাগুনদিনে পোশাকের পাশাপাশি সাজেও থাকে বৈচিত্র্য। খুব ভারী নয়, হালকা সাজটাই এ সময় প্রকৃতির সঙ্গে মানানসই হবে। আর চুল ছাড়া থাকুক বা বাঁধা ফুল তো অবশ্যই লাগবে। বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ারের স্বত্বাধিকারী আলেয়া শারমিন কচি ফাগুনের সাজের ক্ষেত্রে এমনটাই মত দিলেন। সাতকাহন২৪.কমকে তিনি বলেন, ‘এ সময় সাজে ভারী ফাউন্ডেশন বা পেনকেক ব্যবহার না করলেই ভালো লাগবে। বেজ হিসেবে কেবল ময়েশ্চারাইজার বা প্রাইমার দিয়ে সেজে নিতে পারি। আর ফাউন্ডেশন লাগাতে হলে খুব হালকা ব্যবহার করাই ভালো, যেন ত্বকের সঙ্গে মিশে যায় বা সামঞ্জস্য থাকে।’

ছবি : হরিতকী
ছবি : হরিতকী

দিনে বাইরে বের হলে চোখে থাকুক হালকা সাজ। সোনালি সবুজাভ, বাদামি শ্যাডোর সঙ্গে চোখে লাগালেন কাজল। মাশকারা কিন্তু অবশ্যই ঘন করে দেওয়া চাই। গালে থাকুক টিনট রঙের ব্লাশন। তাহলে দেখতে একেবারে ন্যাচারাল লাগবে। প্রয়োজনে হাইলাইট করে নেওয়া যেতে পারে চেহারার চিকবোন, থুতনি, নাক ইত্যাদি বিশেষ জায়গায়। লিপস্টিকের ক্ষেত্রে নুড, গাঢ় লাল, মপ ইত্যাদি রং পছন্দ অনুযায়ী বেছে নিন। সঙ্গে হাতে, গলায় ও কানে থাকল মাটি, কাপড়, কাঠ বা মেটালের গয়না।

‘যারা শাড়ি পরতে চান না, তারা সালােয়ার-কামিজ অনায়াসেই পরতে পারেন। এখন বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস ফাগুনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন নকশার ফতুয়া, সালোয়ার-কামিজ, টপস তৈরি করছে। তবে এ ধরনের পোশাক পরলে খোঁপায় ফুল না গুঁজে মাথায় ফুলের ব্যান্ড ব্যবহার করতে পারেন। এতেও দারুণ লাগবে আপনাকে। সর্বোপরি সাজটা যেন আপনার ব্যক্তিত্ব ও রুচির সঙ্গে মানিয়ে যায়, সে চেষ্টাটাই করতে হবে’, বলছিলেন রূপবিশেষজ্ঞ আলেয়া শারমিন কচি।

ছবি: নীলপদ্ম বুটিকস
ছবি: নীলপদ্ম বুটিকস

ফাগুন কড়া নাড়ছে দরজায়। বসন্তকে বরণ করতে উদগ্রীব বাঙালি প্রাণ। এ দিনটি বিশেষ করে তুলতে তাই সব আয়োজন। এই আয়োজনে শামিল হোন আপনিও। বসন্তের বারতা পৌঁছে যাক মানব-মনে। সবে মিলে বলি, ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও যাও গো এবার যাবার আগে’।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments