সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক
বিশ্বব্যাপী নারীদের মধ্যে শীর্ষস্থানে থাকা, নিরব ঘাতক স্তন ক্যানসার। প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ১৩ হাজার নারী নতুন করে এই রােগে আক্রান্ত হয়। মারা যায় প্রায় আট হাজার। আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুহার অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরামের দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল, ১ অক্টোবর, রবিবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। সম্মেলনে আগামী ১০ অক্টোবর স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস উপলক্ষে সারাদেশে মাসব্যাপী কর্মসূচির ঘোষণা হয়।
স্তন ক্যানসার নিয়ে কাজ করে এমন ৩০টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মোর্চা বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরাম। ফোরামের উদ্যোক্তা ও প্রধান সমন্বয়কারী, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিটের ক্যানসার ইপিডেমিওলোজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার তার বক্তব্যে জানান, সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব এবং নারীদের সংকোচবোধ দেরিতে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কারণ। বাংলাদেশে সার্বিকভাবে রোগটির নির্ণয় ও চিকিৎসা ব্যবস্থাও অপ্রতুল। স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ, প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় ও ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের কোনো জাতীয় কর্মকৌশল, কর্মপরিকল্পনা ও কর্মসূচি নেই।’
ডা. রাসকিন বলেন, ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় স্তন নির্ণয় করা গেলে ও সময়মতো পরিপূর্ণ চিকিৎসা দিতে পারলে শতকরা ৯০ ভাগ রোগীর সুস্থ হওয়া সম্ভব। দুঃখের বিষয়, আমরা এখানে অনেক পিছিয়ে থাকায় তিন-চতুর্থাংশ রোগী ধরা পড়ে রোগের শেষ পর্যায়ে।’
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বারডেমের সাবেক পরিচালক ও বাংলাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যবিষয়ক লেখক অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী, জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি ড. হালিদা হানুম আক্তার, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রকার মশিউদ্দিন শাকের, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আবু জামিল ফয়সল ও অন্যান্য ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ও ফোরামের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরামে গঠিত হয় এবং ২০১৩ থেকেই প্রতি বছর ১০ অক্টোবর বাংলাদেশে ফোরামের আহ্বানে বেসরকারিভাবে স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এই বছর মাসব্যাপি কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ১০ অক্টোবর সারাদেশে স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস উদযাপন করা। আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা ও সহজ ভাষায় লেখা লিফলেট বিতরণ। ঢাকার মহাখালিতে আইইডিসিআর মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান উদযাপন। এখান থেকেই একটি টিম বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬টি জেলা অভিমুখে রওনা হবে চারদিনের গোলাপি সড়ক শোভাযাত্রায়।
জেলা ও উপজেলায় পথসভা, শোভাযাত্রা, সেমিনারসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি মানুষের হাতে সরাসরি সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে। ১০ অক্টোবর মঙ্গলবার ঢাকা থেকে রওনা হয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরব, কুলিয়ারচর, কটিয়াদি উপজেলা সদর ও জেলা সদরে কাজ করবে। পরদিন দুপুর বারোটায় গুরুদয়াল কলেজে অনুষ্ঠান শেষে নান্দাইল, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা হয়ে ময়মনসিংহে পৌঁছাবে। এভাবে নেত্রকোণা, শেরপুর, জামালপুর, টাঙ্গাইল জেলা সদর ও কয়েকটি উপজেলায় এই শোভাযাত্রা সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে।
ফোরামের অন্যতম সদস্য সংগঠন কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার ট্রাস্ট পুরো অক্টোবর মাস শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ফ্রি স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং সেবা চালু থাকবে। একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী চিকিৎসক প্রথমে পরীক্ষা করবেন। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। কোনো পরীক্ষা লাগলে তা ৫০ ভাগ ডিসকাউন্টে করা যাবে ধানমন্ডির মেডিনোভা ও সোবহানবাগের বায়োমেড ল্যাব থেকে। দরিদ্র রোগীদের জন্য সিওসি ট্রাস্টের রোগীকল্যাণ তহবিলের সহযোগিতায় বিনামূল্যে পরীক্ষা করে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
এই সেবার জন্য নিবন্ধন করা যাবে ০১৭৮৯৪৪৪৭৬৭, ০২-২২৩৩১০৬৫৫ নম্বরে ফোন করে কিংবা ০১৯৭৭-৫৯১৯০৭ নম্বরে এসএমএস করে রোগীর নাম, বয়স, ঠিকানা ও ফোন নম্বর পাঠিয়ে। অনলাইনে নিবন্ধনের সুযোগ থাকবে।
সোবহানবাগে সালিমা ইনস্টিটিউটেও অক্টোবরের তিন তারিখ থেকে সরাসরি স্ক্রিনিং করা যাবে।
ফোরামের বিভিন্ন সংগঠন সচেতনতা ও স্ক্রিনিং কর্মসূচি হাতে নিয়েছে এই মাসে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে ফোরাম ও কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার সচেতনতা ও স্ক্রিনিং আয়োজনে সহযোগিতা করবে।
নারী উদ্যোগ কেন্দ্র ঢাকা ও কিশোরগঞ্জে নারীদের ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ৭ ও ১০ অক্টোবর যথাক্রমে ঢাকা ও কিশোরগঞ্জে এর উদ্বোধন হবে।