অপরাজিতা অরু
শীতের রুক্ষতা শেষে প্রকৃতি সাজে নিজের মতো করে। দরজায় কড়া নাড়ে ঋতুরাজ বসন্ত। শীতের জীর্ণতাকে মাড়িয়ে বসন্তে প্রকৃতি সাজে নব রূপে, নব আনন্দে।
প্রকৃতির এই কলতান মানুষের মনেও দোলা দেয়। বাঙালি বসন্তের প্রথম দিনটি উদযাপন করে বাহারি রঙের সাজ-পোশাকের মধ্য দিয়ে। উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এবার পহেলা ফাল্গুন, সরস্বতী পুজো ও ভালোবাসা দিবস একই দিনে। এ আনন্দকে বাড়িয়ে দিতে দেশের অন্যতম শীর্ষ ফ্যাশন হাউসগুলো সেজে উঠেছে নানা রং ও পোশাকে।
দেশের অন্যতম ফ্যাশন হাউজ কে-ক্র্যাফটের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার নাসির আহমেদ বলেন, ‘এবারের ফাল্গুন-ভালোবাসা দিবস-এর বিশেষ কালেকশন নিয়ে এসেছে তারা। যেহেতু পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস দুটি একই দিনে, তাই সাজ পোশাক নির্বাচনে একটু দ্বিধায় পড়তে হয় ক্রেতাদের। সেই ভাবনা মাথায় রেখেই করা হয়েছে পোশাকের ডিজাইনগুলো। পোশাকে মোটিফ ও ডিজাইনের ডিটেইলসে থাকছে উৎসবের আমেজ। এ গুলোতে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বিশেষভাবে বাছাই করা প্যাটার্ন ও রং; যা বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস- দুটো উৎসবকেই সমানতালে ফুটিয়ে তুলবে।’
ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এথনিক, ট্র্যাডিশনাল, ফিউশনধর্মী নানা পোশাকের আয়োজন করা হয়েছে। ফ্লোরাল, ট্র্যাডিশনাল, মানডালা, ওরিয়েন্টাল, মিক্সড মোটিফ, মুঘল, বেলারুস, জামদানি সহ নানা মোটিফে তৈরি করা এবারের পোশাক।
শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, লং-কুর্তি, রেগুলার কুর্তি, টপস, কাফতান, টিউনিক, টপস-স্কার্ট, ছেলেদের জন্য রেগুলার ও ফিটেড পাঞ্জাবি, শার্ট, কটি, ও শিশুদের জন্য নানা ডিজাইনের পোশাক থাকছে।
পরিবারের সকলের জন্য মিলিয়েও রয়েছে পোশাক। অর্থাৎ মা ও মেয়ের কুর্তি, বাবা ও ছেলের জন্য পাঞ্জাবি জানিয়ে নাসির আহমেদ বলেন, ‘ উপাদান হিসেবে থাকছে কটন, স্লাব কটন, লিনেন, সিল্ক, হাফ সিল্ক, অরগাঞ্জা, টু-টোন কাপড়। নকশা ফুটিয়ে তুলতে হাতের কাজ, এমব্রয়ডারি, স্ক্রিন ও ব্লক প্রিন্ট, ডিজিটাল প্রিন্ট ও টাই-ডাই মিডিয়ার ব্যবহার হয়েছে। রং হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ইয়েলো, লেমন ইয়েলো, নিওন লাইম, জাভা গ্রিন, রেড, কোরাল রেড, হট পিঙ্ক, পার্পল, ভায়োলেট, ল্যাভেন্ডার, মেরিগোল্ড, মেরুন, ম্যাজেন্টা, অফ-হোয়াইট, মাস্টার্ড ইয়েলো ইত্যাদি। নারী, পুরুষ ও শিশুদের বছরজুড়ে পরার মতো সমসাময়িক ফ্যাশনের মানানসই পোশাক নিয়েই এবারের আয়োজন।’
অন্যতম দেশীয় ফ্যাশন হাউজ ট্রিভোর স্বত্বাধিকারী আঁখি ভদ্র বলেন, ‘এ বছর সরস্বতী পুজো, পহেলা ফাল্লুন ও ভালোবাসা দিবস একই সাথে হওয়ায় উৎসবটা বেশি জাঁকজমকপূর্ণ। একই দিনে এতগুলো উৎসবকে কেন্দ্র করে ট্রিভোতে থাকছে বিভিন্ন ম্যাটারিয়ালের শাড়ি। সিল্ক, কটন, তন্তুজা সহ দেশীয় কাপড়ের আরো ধরন। যেহেতু বসন্ত উৎসব জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই উৎযাপন করে, তাই এটি একটি বড় উৎসব। সব বয়সী মানুষের জন্যই দিনটি আনন্দের সবাই চায় নিজেকে একটু সাজাতে। তাই শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব বয়সী মানুষের কথা মাথায় রেখে ট্রিভোর শাড়ির রঙে শোভা পাচ্ছে বসন্তের নানা ফুলের রঙ। এসবের দাম থাকছে ১ হাজার ১শ থেকে শুরু করে ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।’
যেকোনো উৎসবের আনন্দকেই দ্বিগুণ করে তোলে বাহারি রঙের পোশাক। এই বসন্তেও থাকুক তার রেশ। প্রকৃতির মতো মানুষও নিজেকে রাঙিয়ে তুলুক নতুন ঢঙে, নতুন সাজে। উৎসবে মাতোয়ারা হোক গোটা দেশ।