সাতহাকন২৪.কম
সুপ্রীতি গোস্বামী প্রিয়া একাধারে অভিনয় ও আবৃত্তি শিল্পী। পাশাপাশি একজন বিউটি আর্টিস্ট। বিউটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উজ্জ্বলা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে একটি স্যালন চালাচ্ছেন। এ ছাড়া পঞ্চকর্মা আয়ুর্বেদিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে হার্বালজি ও ম্যাসাজের ওপর ডিপ্লোমা করেছেন। একজন বিউটি আর্টিস্ট ও শিল্পী হিসেবে এবারের পূজায় এই গুণী মানুষটি কীভাবে সাজবেন, তাই জানাবো সাতকাহনের পাঠকদের। চাইলে আপনিও তার সাজ অনুসরণ করে এবারের পূজায় নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে পারেন।
‘যেহেতু আমি শিল্পী ও মেকআপ আর্টিস্ট, তাই দুটি বিষয়েই নজর রাখতে হয়। নিজের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যায় এমন মেকআপ করতেই পছন্দ করি। আমার কাছে মেকআপ মানে বেশি ফাউন্ডেশন, কনসিলার বা কনটোর ব্যবহার করে ভারি বেজ করা নয়। আমি মনে করি, মুখের ছোট খুঁতগুলো ঢেকে সাবলীলভাবে নিজেকে উপস্থাপনটাই জরুরি,’ বলছিলেন সুপ্রীতি গোস্বামী।
ষষ্ঠীর দিন
ষষ্ঠীর দিন বোধনের ঘট বসে। সেই দিনটা ঘরোয়াভাবে সাজবেন তিনি। পরনে থাকবে দেশি তাঁতের শাড়ি। জানান, এ দিন মেকআপের ক্ষেত্রে ত্বক পরিষ্কার করে, টোনিং করে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবো। এরপর ত্বকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কমপ্যাক্ট পাউডার দেবো। কমপ্যাক্ট পাউডারটি এসপিএফ ৩০ থেকে ৫০- এর মধ্যে হলে ভালো, যেহেতু পূজার কাজ আগুনের পাশে করতে হয়, আবার মণ্ডপে কড়া আলোকসজ্জা থাকে, তাই ভালো ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হবে এস পি এফ যুক্ত। চোখে হালকা রঙ্গের আইশ্যাডো লাগাবো। এরপর কাজল দিবো হালকা করে । হালকা রঙের লিপস্টিক থাকবে ঠোঁটে। লিপস্টিক ন্যুড টোনের ব্যবহার করবো। মেকআপটা হালকা বাদামি টোনের হবে। হালকা হাইলাইটার ব্যবহার করবো। কপালে একটা ছোট্ট লাল টিপ, আর চুলে খোঁপা।
সপ্তমীর দিন
এ দিন সকাল থেকে দোঁড়-ঝাপ শুরু হয়ে যাবে তাই সালোয়ার-কামিজ পরবো। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে বাইরে ঘুরতে যাবো। এ দিন হাইলি সান প্রোটেকডেট বা রোদ সুরক্ষাকারী প্রসাধনী ব্যবহার করবো। সকাল বেলা গাঢ় মেরুন রঙের ধুতি-কামিজ পরবো। যেহেতু ঘুরতে বের হবো, তাই একটু গাঢ় রং ব্যবহার করবো। মেরুন রঙের লিপস্টিক, গাঢ় কাজল থাকবে। সঙ্গে টিপ, আর হাত ভর্তি চুরি। বেজ মেকআপটা করবো সম্পূর্ণ রোদ সুরক্ষাকারী প্রসাধনী দিয়ে। বিবি ক্রিম দিয়ে বেজ রেডি করে ফেস পাউডার লাগানোর পর, হালকা শেডের ব্লাশন আর একটু হালকা টোনের কনটোর ব্যবহার করবো। হাইলাইটার যতটা স্বাভাবিক রাখা যায়, তত ভালো। চুল ছেড়ে দিবো ব্লো ড্রায় করে । গোসলের পর অবশ্যই চুলে কন্ডিশনার ও সিরাম ব্যবহার করবো- জানান তিনি।
অষ্টমী
সুপ্রীতির কাছে অষ্টমীটা খুব বিশেষ। তাই এ দিন একটু বিশেষভাবেই সাজবেন তিনি। চাপা সাদা রঙের শাড়ি পরবেন। অষ্টমীর সকাল মানেই যেহেতু আশ্রমের পূজা দেখতে যাওয়া, তাই পিচ টোনে মেকআপ করবেন। বললেন, ‘কনসিলার, ময়েশ্চারাইজার, ফাউন্ডেশন একদম হালকাভাবে ব্যবহার করবো। এরপর একটু হ্যাভি কভারেজ দেয় এমন কমপ্যাক্ট পাউডার লাগাবো। ব্লাউজ, চুরি ও গয়না মাল্টি রঙের পরবো। অফ হোয়াইটের সঙ্গেও মাল্টি রং একটা আভিজাত্য লুক দেয়। চুলে মৌউস ও সিরাম লাগিয়ে খোপা বাঁধবো। মাথা থাকবে বেলি ফুলের গাজরা, যেন দিনটা শুভ্র হয়ে যায়।’
নবমী
নবমীর রাতটা বিশেষ হয়। এ দিন সবকিছু একটু বেশি বেশি করতে ইচ্ছে করে। হ্যান্ড পেইন্টের মিষ্টি রঙের আভিজাত্যপূর্ণ মসলিন পরবো। সঙ্গে থাকবে পার্লের গয়না। চুলকে ব্লো ডাই করে সেট করবো। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে মেকআপের ক্ষেত্রে হালকা টোনের মিষ্টি রঙের ছোঁয়া থাকবে। টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং করার পর প্রাইমার লাগাবো। এরপর হাই কাভারেজ ফাউন্ডেরশন ব্যবহার করবো। পরে সেটিং পাউডার দিয়ে মেকআপটা সেট করবে নেবো।
ব্লাশন পিচ রঙের ও লিপস্টিক ন্যুড রঙের ব্যবহার করবো। চোখে আই কন্টোর করে নিবো। এরপর বাদামি বেজের মিষ্টি রঙের আইশ্যাডো দিবো। হালকা সিলভারি সিমার ব্যবহার করার ইচ্ছে রয়েছে। সেদিন কাজল টেনে দিবো না। চোখের উপরে ও নিচে হালকা কাজল দিয়ে ম্যাশ করে নেবাে যেনো স্মোকি একটা লুক দেয় – জানান তিনি।
দশমী
দশমীর দিনে মেকআপের আগে ত্বকটা প্রস্তুত করা জরুরি। সেদিন যেহেতু সিঁদুর খেলা হয়, তাই ক্লিনজার ও টোনার নন কমডজেনিক ধরনের ব্যবহার করতে হবে। এতে সিঁদুর থেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার আশঙ্কা অনেকটা কমে যাবে। সুপ্রীতি বলেন, ‘দশমী মানেই ঢাকের তালে নাচ। সেদিন ঘামবো অনেক। তাই মুখ পরিষ্কার করার পরপরই একটু বরফ ঘষে নেবো। এরপর ময়েশ্চারাইজার দিয়ে প্রাইমার ব্যবহার করে ক্রিম বেজ ফাউন্ডেশন ব্যবহার করবো। হাইকাভারেজের কমপ্যাক্ট পাউডার লাগাবো। বাড়তি করে চোখে কনসিলার বা হাইলাইটার ব্যবহার করবো না। মোটা করে কাজল দিবো। গাঢ় ও হালকা বাদামি রং মিশিয়ে মেকআপ করবো। চোলে হালকা ও গাঢ় বাদামি শ্যাডো লাগাবো। ব্লাশনও হবে সে অনুযায়ী। লিপস্টিক লাল ও বাদামির মিশ্রণে পরবো।’
দশমী মানেই লাল- সাদা শাড়ি । সেদিন একপেঁচে শাড়ি পরবেন তিনি। কপালে দেবেন বড় টিপ, সিঁথিতে থাকবে মোটা করে সিঁদুর। নাকে নথ । সেদিন পুরোপুরি সোনার গহনা পরবেন তিনি। আর খোঁপায় জড়াবেন জবা ও কাঠবেলির মিশণে ফুল।
পূজার সাজের ক্ষেত্রে পাঠকদের জন্য সুপ্রীতির বিশেষ পরামর্শ-
পূজার কয়েকটা দিন আগে ফেসিয়াল করে নিলে ভালো। না হলে পোরগুলো খুলে যায় যায় এবং এর পর পরই মেকাপ করলে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পূজার আগে থেকেই নিয়মিত টোনিং, ক্লিনজিং, ময়েশ্চারাইজিং করতে হবে। এতে পূজার সময় ত্বক স্বাস্থ্যকর থাকে।
মেকআপ তোলার ক্ষেত্রে নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। তবে এরপর মুখ ফেসওয়াস দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে ডাবল ক্লিনজিং নিয়ম অনুযায়ী। এ ছাড়া ত্বকে স্মুদিং ভাব আনতে নিম পাতার বা পুদিনা পাতার রস পানির সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন। এটা টোনার হিসেবে কাজে লাগবে। পরে শুকিয়ে গেলে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন এতে এ্যালার্জি বা ব্রণ হওয়ার সুযোগ কম থাকে। এমনটাই পরামর্শ দিলেন সুপ্রীতি গোস্বামী।
ধন্যবাদ সাতকাহনকে। ❤️