Saturday, March 22, 2025
spot_img
Homeজীবনের খুঁটিনাটিপূজার সাজের সেকাল-একাল

পূজার সাজের সেকাল-একাল

সুপ্রিতী গোস্বামী

পূজার সেকালের সাজ বলতেই মা, ঠাকুমা, পিসিমাদের ছবি ভেসে ওঠে চোখের সামনে। পুজায় সব সময় কলকাতার বনেদি সাজের একটা ছোঁয়া থাকত তাদের ভেতর।

বিশ্বায়নের কারণে মা-ঠাকুরমাদের টিভি দেখে অনুসরণের সুযোগ তখন সবে শুরু। তাই তারা পরিচিত হতেন মটকা, গরদ কিংবা বালুচুরি শাড়ির সঙ্গে। এসবের পাশে থাকত দেশীয় জামদানি, টাঙ্গাইলের তাঁত, রাজশাহী সিল্ক ইত্যাদি।

পূজার সকালে অঞ্জলি দিতে বা দশমীতে দেবী দুর্গাকে বরণ করতে তাঁরা ব্যবহার করতেন গরদ কিংবা মটকার ঘিয়ে অথবা সাদা রঙের লাল পেড়ে শাড়ি। এক পেঁচে শাড়ির সঙ্গে পরতেন বনেদি সোনার গয়না, বড় কানপাশা, মোব চেইন, হাতে মগর মুখ বালা। সঙ্গে থাকত পায়ে আলতা, কপালে লাল বড় টিপ, মাথায় খোঁপা আর সিঁথিভর্তি সিঁদুর; ঠোঁটে হালকা রঙের লিপস্টিক, চোখে হালকা কাজল।

ক্যাপশন : পূজার সাজের সেকাল। মডেল : সুপ্রিতী গোস্বামী। ছবি : সংগৃহীত
ক্যাপশন : পূজার সাজের সেকাল। মডেল : সুপ্রিতী গোস্বামী। ছবি : সংগৃহীত

তাদের সময় মেকআপ প্রসাধনীর এত ব্যবহার ছিল না। সেই তথাকথিত তিব্বত বা ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী অথবা নিভিয়া ক্রিমের সঙ্গে যে কোনো ট্যালকম পাউডারের ব্যবহারই ছিল তাদের একমাত্র পছন্দ।

এ ছাড়া অন্যান্য সময় প্রতিমা দর্শনে বের হলে দেশীয় টাঙ্গাইল, জামদানি, বালুচুরি বা রাজশাহী সিল্কই থাকতে দেখা যেত তাদের পরনে। সাধারণ কুচি করে আঁচল ছেড়ে, আঁটসাঁট খোঁপা অথবা বেণি করে সেই ট্র্যাডিশনাল সাজেই সাজতেন তারা।

সময়ের পরিবর্তনে সাজ ও প্রসাধনীর পরিবর্তন আসে। বিভিন্ন মিডিয়ার সহজ প্রবাহের মাধ্যমে ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি তখনকার যুগের মানুষ জানতে পারে বহির্বিশ্বের রূপচর্চা ও ফ্যাশন সম্পর্কে। বাংলাদের বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতে সেই সময় আসে আমূল পরিবর্তন।

ক্যাপশন : পূজার সাজের সেকাল। মডেল : সুপ্রিতী গোস্বামী। ছবি : সংগৃহীত
ক্যাপশন : পূজার সাজের সেকাল। মডেল : সুপ্রিতী গোস্বামী। ছবি : সংগৃহীত

পূজার সাজ মানেই সেই সময় নজর কাড়ে; কারচুপির শাড়ি, কুন্দনের শাড়ি, বিভিন্ন ধরনের সিল্ক ও জর্জেট শাড়ি। সঙ্গে কারচুপির সালোয়ারও যুক্ত হয়। দেখা যায়, দেবীর বরণে বা দশমীতে ট্র্যাডিশনাল লাল-সাদা থাকলেও গরদ ও মটকা শাড়ির ব্যবহার কমতে থাকে; ব্যবহার হয় সাদা-লাল সুতি, সিল্ক, জর্জেটসহ বিভিন্ন শাড়ি। সাজেও আসে পরিবর্তন। ব্যবহার হয় বেজ মেকআপ, আর কালার কারেকশন হিসেবে হলুদ প্যানকেক বা প্যান স্টিক। গায়ের রঙের শেড থেকে এক বা দুই শেড বাড়িয়ে ব্যবহার করা হতো এই প্যানকেক অথবা প্যান স্টিক। এর ওপর কমপ্যাক্ট পাউডার দিয়ে সেট করে গালে গোলাপি অথবা ব্রাউন ব্লাশন ব্যবহার করা হতো। ঠোঁটে ব্যবহার হতো সেমিগ্লসি লিপস্টিক, চোখে কাজল, চুলে খোঁপা, তাতে বাহারি গাজরা। সে সময় সোনার গয়নার চল কম হতে দেখা যায়। ব্রোঞ্জ বা ইমিটিশনের গয়নার ব্যবহারই বেশি থাকত ৷

রাতের সাজে থাকত ভিন্নতা। বেজ মেকআপ, প্যানকেক বা প্যান স্টিক ব্যবহারে একটু ভারী করা হতো দিনের তুলনায়। পরনে ভারী পোশাকের সঙ্গে মানানসই আইশ্যাডো, গ্লিটার আইশ্যাডো, চোখ আকর্ষণীয় করতে ব্যবহার হতো আইলাইনার ও মাশকারা ৷

তখনকার সময় চুল ছোট করে কেটে ছেড়ে রাখতেই বেশি দেখা যেত। তখন মেকআপে কন্টেরিং খুব গাঢ় ব্যবহার হলেও হাইলাইটারের ব্যবহার দেখা যেত না। তবে কপালে পোশাকের সঙ্গে ম্যাচ করে পাথরের টিপ থাকত–– লম্বা গোল বা চৌক ধরনের এবং সিঁদুর তখন বেশি লম্বা টানা করে পরা হতো না।

এবারের পূজার সাজ

ক্যাপশন : পূজার সাজের একাল। মডেল : সুপ্রিতী গোস্বামী। ছবি : সংগৃহীত
ক্যাপশন : পূজার সাজের একাল। মডেল : সুপ্রিতী গোস্বামী। ছবি : সংগৃহীত

সময় যেন ঘুরেফিরে আবার আগের জায়গায় গিয়ে পৌঁছে গেছে, আবারও সেই ট্র্যাডিশনাল ধারা ফিরে আসছে। আবার চাহিদার শীর্ষে সেই জামদানি, সিল্ক, মসলিনসহ নানান দেশীয় শাড়ি। বর্তমান অবস্থায় মেকআপ প্রসাধনীতে অনেক ভ্যারাইটি থাকা সত্ত্বেও মানুষ সেই প্রসাধনী ব্যবহার করেই মা-ঠাকুমাদের মতো ন্যাচারাল লুকেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আপনিও এবারের পূজায় সাজতে পারেন সেই হালকা ও বনেদি সাজে। প্রথমে ত্বকের ধরন অনুযায়ী কারেক্ট খুব হালকাভাবে দিয়ে, এতে ত্বকের ধরন অনুযায়ী সেই টোনে ফাউন্ডেশন ও ওয়াটার প্রুফ সেটিং পাউডার দিয়ে সেট করুন। আই ব্রো চুলের চেয়ে এক বা দু শেড হালকা বাদামি ফিলার দিয়ে ফিল করে নিন। ম্যাট আইশ্যাডো অথবা লাইট সিমারি আইশ্যাডো ব্যবহার করতে পারেন।

দিনের বেলায় ম্যাটটাই ব্যবহার করা হয় বেশি এবং চোখে কাজল আর রাতে হলে কালজ আইলাইনারের সঙ্গে থাকে একটু ন্যাচারাল সিমার। ব্লাশনেও খুব ন্যাচারাল টোনের প্রাধান্য দেওয়া হয়। যেমন : পিচ, লাইট পিংক, লাইট ব্রাউন। তারপর হাইলাইটার।

 

ক্যাপশন : পূজার সাজের একাল। মডেল : সুপ্রিতী গোস্বামী। ছবি : সংগৃহীত
ক্যাপশন : পূজার সাজের একাল। মডেল : সুপ্রিতী গোস্বামী। ছবি : সংগৃহীত

যারা একটু সাদা টোনের, তারা সিলভার বা পিচ সিলভারের মিশ্রণে হাইলাইটার ব্যবহার করতে পারেন। পাশাপাশি যারা একটু গাঢ় টোনের, তারা গোল্ডেন বা গোল্ডেন ব্রাউন হাইলাইটার ব্যবহার করতে পারেন। লিপস্টিপ হিসেবে দিনের বেলায় হালকা রঙের সেমিম্যাট অথবা ম্যাট লিপস্টিপ ব্যবহার করা যেতে পারে এবং রাতে একটু গ্লোসি গাঢ় রং ব্যবহার করুন। ব্রাউন বা স্মোকি আই সব পোশাকের সঙ্গেই মানানসই। সেটি দেবীবরণে সাদা–লাল শাড়িতে হোক কিংবা রাতের পার্টি শাড়িতে। আবার কালো, সবুজ, সাদা, হলুদ, লাল, মেরুন ইত্যাদি বিভিন্ন রঙের পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায় এই সাজ।

সাজের পরিপূর্ণতা আসে চুলেই। বর্তমান যুগে যেমন হেয়ার স্টাইলে এসেছে অসংখ্য পরিবর্তন এবং যুক্ত হয়েছে অনেক নতুন নতুন স্টাইল। তাই বন্ধ-গলা ব্লাউজে চুল ব্লোড্রার করে ছেড়ে দিলেই বেশ মানানসই লাগে। আবার সামনে হালকা পাফ করে ট্র্যাডিশনাল হেয়ার বানও করতে পারেন। তবে বরণের সময় বা দশমীতে সাদা-লাল শাড়ির সঙ্গে গোল গলা ব্লাউজেও এই ট্র্যাডিশনাল বান বেশ মানাবে। সঙ্গে থাকতে পারে শুভ্র বেলি অথবা কাঠ বেলির গাজরা।

আবার পার্টি শাড়ি অথবা যে কোনো পোশাকের সঙ্গে পনিটেইল করে কার্ল করলেও খুব সুন্দর মানায় এবং স্মার্ট দেখায়। অথবা একদম ঘাড়ের কাছে নিচু করে খোঁপাও করে নেওয়া যেতে পারে। এটিও বেশ মানায়। আর অল্প বয়সী বা টিনএজরা চাইলেই পার্টি ড্রেস অথবা শাড়ির সঙ্গে চুল স্ট্রেট করে ঘুরতে পারে অনায়াসে।

বাড়তি টিপস

১. মেকআপের আগে ত্বকের ধরন অনুযায়ী টোনিং ও ময়েশ্চারাইজিং করে নেবেন।
২. মেকআপ করার আগে সুন্দর করে ফেস ডাবল ক্লিনজিং করে নিন।
৩. অয়েলি স্কিন হলে ম্যাট ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন।
৪. শুষ্ক ত্বকে অয়েল বেজ ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments