অধ্যাপক সানজিদা শাহরিয়া
আমাদের দেশে মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয় নিয়ে যত কথা হয়, পুরুষের ব্যাপারে ততটা হয় না। পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি ভীষণভাবে উপেক্ষিত।
এটি কেন? এর আলোচনায় যাওয়ার আগে একটু পেছন থেকে আসি। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে চারটি মৌলিক অনুভূতি থাকে। আনন্দ, দুঃখ, ভয় ও রাগ। একজন ছেলে যখন ছোটবেলা থেকে বেড়ে উঠছে আনন্দ প্রকাশে তাদের কোনো বাধা নেই। তবে বিভিন্ন বয়সে আনন্দের ধারণা কিন্তু বদলে যায়। ওপরের যেই চারটি মৌলিক অনুভূতির কথা বলা হলো, এগুলো দিয়ে পৃথিবীর সব অনুভূতি তৈরি হয়। যেমন: মুখ্য রং তিনটি । লাল ,নীল, সবুজ। এই তিনটি দিয়ে পৃথিবীর সব শিল্পীরা সব রং তৈরি করে। ঠিক তেমনি উল্লেখিত চারটি অনুভূতি দিয়ে আমরা প্রত্যেকটা মানুষ জীবন পার করি।
একটি ছেলে শিশু খেলার মাঠে খেলতে গিয়ে যখন পড়ে যায়, আমরা তাকে বলি, ‘তুমি কাঁদবে না। তুমি ছেলে।’ ছোটবেলা থেকে একটি ছেলেকে আমরা কাঁদার অনুমতি দিই না। কাঁদতে শেখাই না ছেলেদের। ঠিক সেরকমই শিশুটি যখন ভূতের গল্প শুনে ভয় পাচ্ছে- আমরা বলছি, ‘তুমি ভয় পাচ্ছো কেন? তুমি তো ছেলে।’ তাহলে একজন ছেলের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে আমরা তাকে ভয় পেতে দিচ্ছি না, আমরা তাকে কাঁদতে দিচ্ছি না।
তাহলে জন্ম থেকে, ছোটবেলা থেকে আমরা একজন ছেলের ওপর কিছু বিষয় চাপিয়ে দিচ্ছি অযাচিতভাবে। এতে ছেলেটি যখন বড় হচ্ছে দুঃখ ও ভয় প্রকাশ করতে পারছে না। তার বদলে সে রাগ প্রকাশ করছে। এতে দেখা যায় সে যখন দুঃখ বা ভয় পায়-সব কিছুরই আচরণগত বহিঃপ্রকাশ ঘটে রাগের ভেতর দিয়ে। আর যখন তা করছে, দেখা যাচ্ছে তিন গুণ বেশি রাগী।
সিনেমাতে নায়কদের রাগ আমরা মেনে নিই। নায়িকাদেরটি মেনে নিই না। কারণ সমাজ মেয়েদের কান্না সহজভাবে নিচ্ছে, রাগকে নয়। রাগ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ছেলেদের ক্ষেত্রে দুঃখ ও ভয় প্রকাশের জায়গাটা চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। বিশেষ করে কোভিডের পর দেখা গেছে, অর্থনৈতিক টানাপোড়ের কারণে বিশ্বব্যাপী পুরুষের আত্মহত্যার প্রবণতা নারীর চেয়ে কোথাও কোথাও বেশি। গোটা বিশ্বে পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্য অনেক অস্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশও বোধ হয় সেই দিকেই হাঁটছে। সেই জায়গাটা খেয়াল রেখে আমাদের সচেতন হওয়াটা জরুরি।
লেখক
চিকিৎসক, কাউন্সেলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার,
ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বিডি